দেবেন্দ্র মোহন বসু: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Adib Khaled (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Adib Khaled (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
{{কাজ চলছে}}
'''দেবেন্দ্রমোহনদেবেন্দ্র মোহন বসু''' (২৬শে নভেম্বর ১৮৮৫ - ২রা জুন ১৯৭৫ সাল) একজন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী। মহাজাগতিক রশ্মি, পারমাণবিক ও নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যার গবেষণায় তার অবদান অসীম। [1] তিনিই প্রথম ফটোগ্রাফিক ইমালশন পদ্ধতিতে ‘মেসন’ এর ভর নির্ণয় করেছিলেন। এ কাজের জন্য নোবেল পুরষ্কার তাঁরই পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তাঁর পদ্ধতি অনুরসণ করে মেসনের ভর নির্ণয়ের জন্য ১৯৫০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সিসিল পাওয়েল (Cecil Frank Powell)। স্যার [[জগদীশচন্দ্র বসু]] তাঁর আপন মামা।
 
==শিক্ষাজীবন==
ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হলো দেবেন্দ্রমোহনের। বালিকা বিদ্যালয় হলেও প্রাথমিক পর্যন্ত সহশিক্ষা চালু ছিল সেখানে। হাইস্কুলের পড়া কাকা আনন্দমোহন বসুর প্রতিষ্ঠিত সিটি স্কুলে। এখান থেকেই এন্ট্রান্স পাশ করলেন দেবেন্দ্রমোহন। ১৯০১ সালে তাঁর বাবা মারা যান। অভিভাবক হিসেবে পাশে এসে দাঁড়ালেন জগদীশচন্দ্র বসু। দেবেন্দ্রমোহন এন্ট্রান্স পাশ করে ভর্তি হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর দ্রুত সংসারের হাল ধরতে হবে ভেবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ভর্তি হলেন শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা শুরু হলো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই প্রচন্ড জ্বরে পড়লেন। ম্যালেরিয়ায় কাবু হয়ে ফিরে এলেন বাড়িতে। শিবপুরে আর ফিরে যাওয়া হলো না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরামর্শ দিলেন মামা জগদীশচন্দ্রের মত পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। দেবেন্দ্রমোহন পদার্থবিদ্যা আর ভূতত্ত্ব নিয়ে ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। প্রথম শ্রেণী পেয়ে বিএসসি পাস করলেন। ১৯০৬ সালে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হলেন। জগদীশচন্দ্র বসু তখন বায়োফিজিক্স ও প্ল্যান্ট ফিজিওলজি নিয়ে গবেষণা করছেন। দেবেন্দ্রমোহন যোগ দিলেন জগদীশচন্দ্রের রিসার্চ গ্রুপে শিক্ষানবিশ গবেষক হিসেবে [3]। ১৯০৭ সালে দেবেন্দ্রমোহন পাড়ি দিলেন ইউরোপে। ভর্তি হলেন কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে। কেমব্রিজে এসে দেবেন্দ্রমোহনের সুযোগ হলো ক্যাভেনডিশ ল্যাবে স্যার জে জে থমসন ও চার্লস উইলসনের সাথে কাজ করার। ১৯০৮ থেকে ১৯১১ পর্যন্ত ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবে কাজ করেছেন। ১৯১০ সালে দেবেন্দ্রমোহন লন্ডনের রয়েল কলেজ অব সায়েন্সে ভর্তি হলেন। ১৯১২ সালে এখান থেকে ডিপ্লোমা ও প্রথম শ্রেণীর অনার্স সহ বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯১৩ সালে কলকাতায় ফিরে এলেন দেবেন্দ্রমোহন। দেবেন্দ্রমোহন পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিলেন সিটি কলেজে। ১৮৭৮ সালে এই কলেজটি স্থাপন করেছিলেন তাঁর কাকা আনন্দমোহন বসু। ১৮৮৩ সালে ময়মনসিংহে এ কলেজের একটি শাখা খোলা হয়। (সেদিনের সেই শাখা কলেজটিই বর্তমান আনন্দমোহন কলেজ)। সিটি কলেজে বেশিদিন ছিলেন না দেবেন্দ্রমোহন। ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। দেবেন্দ্রমোহন নব-প্রতিষ্ঠিত সায়েন্স কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের ‘রাসবিহারী ঘোষ প্রফেসর’ পদে যোগ দেন। এই পদে তিনি ছিলেন ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত।
বিজ্ঞান কলেজে যোগ দিয়েই উচ্চশিক্ষার জন্য ‘ঘোষ ভ্রমণ বৃত্তি’ পেলেন দেবেন্দ্রমোহন। ১৯১৪ সালেই রওনা দিলেন ইউরোপ। ভর্তি হলেন বার্লিনের হামবোল্ড ইউনিভার্সিটিতে। দু’বছর পড়াশোনা ও গবেষণা করলেন প্রফেসর এরিখ রিগনারের ল্যাবে। চার্জের একক নির্ভুলভাবে মাপার জন্য এরিক রিগনারের তখন খুব নামডাক। রিগনার দেবেন্দ্রমোহনকে কাজ দিলেন নতুন একটা ক্লাউড চেম্বার তৈরি করে আলফা ও বিটা কণিকার গতিপথ সনাক্ত করার [2]। দেবেন্দ্রমোহন তৈরি করলেন ক্লাউড চেম্বার। হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়ে ভর্তি করা হলো চেম্বার। এরপর চেম্বারে পাঠানো হলো আলফা-কণার স্রোত। এই আলফা-কণা হাইড্রোজেন থেকে ইলেকট্রনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ঋণাত্বক চার্জের ইলেকট্রন হারিয়ে হাইড্রোজেন হয়ে পড়লো ধনাত্বক চার্জের প্রোটন। এই প্রোটনের গতিপথ সনাক্ত করতে সমর্থ হলেন দেবেন্দ্রমোহন। এখান ত্থেকে এরকম কণার মধ্যে সংঘর্ষের ফলে যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় তার একটা হিসেব পাওয়া গেল। এই কাজ দিয়েই পি-এইচ-ডি থিসিস লিখে ফেললেন দেবেন্দ্রমোহন। কিন্তু ততদিনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ইউরোপে। যুদ্ধের কারণে থিসিস জমা দিতে পারলেন না তিনি। পাঁচ বছর তাকে জার্মানিতে থাকতে হলো। প্রোটনের গতিপথ সনাক্তকরণের ওপর দেবেন্দ্রমোহন বসুর প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে – জার্মানির Physikalische Zeitschrift এ [6]।
 
 
দেবেন্দ্রমোহন তৈরি করলেন ক্লাউড চেম্বার। হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়ে ভর্তি করা হলো চেম্বার। এরপর চেম্বারে পাঠানো হলো আলফা-কণার স্রোত। এই আলফা-কণা হাইড্রোজেন থেকে ইলেকট্রনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ঋণাত্বক চার্জের ইলেকট্রন হারিয়ে হাইড্রোজেন হয়ে পড়লো ধনাত্বক চার্জের প্রোটন। এই প্রোটনের গতিপথ সনাক্ত করতে সমর্থ হলেন দেবেন্দ্রমোহন। এখান ত্থেকে এরকম কণার মধ্যে সংঘর্ষের ফলে যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় তার একটা হিসেব পাওয়া গেল। এই কাজ দিয়েই পি-এইচ-ডি থিসিস লিখে ফেললেন দেবেন্দ্রমোহন। কিন্তু ততদিনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ইউরোপে। যুদ্ধের কারণে থিসিস জমা দিতে পারলেন না তিনি। পাঁচ বছর তাকে জার্মানিতে থাকতে হলো। প্রোটনের গতিপথ সনাক্তকরণের ওপর দেবেন্দ্রমোহন বসুর প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে – জার্মানির Physikalische Zeitschrift এ [6]।
 
ইউরোপে থাকার সময় তখনকার সময়ের বিখ্যাত অনেক বিজ্ঞানীর সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয় দেবেন্দ্রমোহনের। ম্যাক্স প্ল্যাংক, আলবার্ট আইনস্টাইন, পিটার ডিবাই, ওয়ালথার নার্নস্ট, হেনরিখ হার্ট্‌জ, ম্যাক্স বর্ন, সামারফেল্ড – সবার বক্তৃতা শুনেছেন, সরাসরি অংশ নিয়েছেন তাঁদের সাথে বৈজ্ঞানিক আলোচনায় [7,8]।
 
১৯১৯ সালের মার্চ মাসে পিএইচডি সম্পন্ন করে দেশেভারতে ফিরে আসেন দেবেন্দ্রমোহন। যোগ দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর আগের পদে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে তখন উজ্জ্বল সব ব্যক্তিত্ব – চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, শিশির কুমার মিত্র প্রমুখ। দেবেন্দ্রমোহন এঁদের সবার সিনিয়র। সবাইকেই স্নেহ করেন খুব। নানারকম গবেষণায় উৎসাহ দেন। জার্মানি থেকে ফেরার সময় সত্যেন বসুর জন্য তিনি ম্যাক্স প্লাংকের দুটো বই (Thermodynamik and Warmestrahlung) নিয়ে গিয়েছিলেন যা তখন ইন্ডিয়াতে পাওয়া যেতো না। এ বই দুটো পড়ে সত্যেন বসু প্ল্যাংক এর কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্ল্যাঙ্কের ব্যাখ্যার মধ্যে অসংগতি লক্ষ্য করেন এবং পরে সেই অসংগতি দূর করতে গিয়েই প্রকাশিত হয় সত্যেন বসুর বিখ্যাত তত্ত্ব।
 
১৯২৩ সালে দেবেন্দ্রমোহনের পি-এইচ-ডি গবেষণায় প্রাপ্ত গ্যাসীয় মাধ্যমে আলফা ও বিটা কণার গতি-প্রকৃতির বিস্তারিত প্রকাশিত হয় জার্মানির বিখ্যাত Zeitschrift fur Physik এ [9]। প্রবন্ধটি দেবেন্দ্রমোহনের সম্মতি নিয়ে প্রফেসর এরিখ রিগনারই পাঠিয়েছিলেন। এ প্রবন্ধে তিনি দেখিয়েছিলেন কীভাবে পরিবর্তিত ক্লাউড চেম্বারের সাহায্যে আলফা ও বিটা কণার পাশাপাশি বিক্ষিপ্ত ইলেকট্রনের গতিপথেরও ছবি তোলা যায় [8]। আর্থার কম্পটন ও চার্লস উইলসন একই ধরণের কাজ করেছেন। পারমাণবিক বিক্ষেপণ তত্ত্বে (Atomic Scattering Theory) বিক্ষিপ্ত ইলেকট্রনের ‘কম্পটন ইফেক্ট’ আবিষ্কারের জন্য আর্থার কম্পটন নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯২৭ সালে। একই বছর উইলসনও নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তাঁর উইলসন চেম্বারের সাহায্যে অপ-পারমাণবিক কণার গতিপথ সনাক্ত করে।
২০ ⟶ ১৭ নং লাইন:
আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলে দেবেন্দ্রমোহনের গবেষণা স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে ১৯২৩ সাল থেকে। ভারতে নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান গবেষণার সূচনা করেছেন তিনি। জার্মানির প্রফেসর হেবসি ও প্যানেথ “এ ম্যানুয়েল অব রেডিওএক্টিভিটি” নামে একটি ক্লাসিক বই লেখেন ১৯২৩ সালে জার্মান ভাষায়। ১৯২৫ সালে বইটির রাশিয়ান ও হাঙ্গেরিয়ান অনুবাদ বের হয়। ১৯২৬ সালে প্রফেসর লসন বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে [11]। বইটিতে দেবেন্দ্রমোহনের গবেষণাপত্রের উপর বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। ১৯২৮ সালে জার্মানি থেকে প্রকাশিত ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্স – রেডিওএক্টিভিটি’ -র বিভিন্ন পাতায় দেবেন্দ্রমোহনের গবেষণালব্ধ ফলাফল আলোচিত হয়েছে [12]।
 
চৌম্বকত্বের গবেষণাতেও প্রচুর উল্লেখযোগ্য অবদান আছে দেবেন্দ্রমোহনের। চৌম্বকক্ষেত্রে ইলেকট্রনের ধর্ম পরীক্ষা করতে গিয়ে অনেকগুলো ফ্যাক্টর বিবেচিত হচ্ছিলো তখন। এম্পিয়ার, বার্নেট, আইনস্টাইন, ডি হাস, উলেনব্যাক, গুডস্মিট সহ অনেকেই কাজ করছিলেন তখন চৌম্বকত্বের সাথে ইলেকট্রনের প্রবাহ তথা বিদ্যুৎ এর সম্পর্ক নিয়ে। ১৯২৫ সালে চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে ইলেকট্রন-স্পিনের ওপর অনেকগুলো গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। ইলেকট্রন-স্পিন ব্যাখ্যা করে পাউলি তাঁর বিখ্যাত এক্সক্লুসান প্রিন্সিপাল (বর্জন নীতি) প্রকাশ করেন সেই বছর [13]। তিনি দেখিয়েছেন পরমাণুর ভেতর ইলেকট্রনগুলো বিভিন্ন কক্ষপথে অবস্থান করে এবং একই রকম কোয়ান্টাম অবস্থা সম্পন্ন দুটো ইলেকট্রন একই কক্ষপথে থাকতে পারে না। প্রায় একই সময়ে গটিনগেন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হুন্ড (F. Hund) পরমাণুর চৌম্বক ভ্রামক (magnetic moment) হিসেব করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন [14]। দেবেন্দ্রমোহন দেখলেন হুন্ডের পদ্ধতি রেয়ার আর্থ গ্রুপের ত্রিযোজী ও চতুর্যোজী মৌলের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ করলেও আয়রন গ্রুপের কোন আয়নের ক্ষেত্রেই সঠিক ভাবে কাজ করে না। তিনি বিখ্যাত নেচার সাময়িকীতে লিখে জানালেন এ কথা [15]। নতুন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন দেবেন্দ্রমোহন যা হুন্ডের পদ্ধতির চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর। ১৯২৭ সালে দেবেন্দ্রমোহনের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত জার্মান সাময়িকী Zeitschrift fur Physik তে [16]। সে বছর লাহোরে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে চৌম্বকত্বের সাম্প্রতিক গবেষণা বিষয়ে বক্তৃতা করেন দেবেন্দ্রমোহন। চৌম্বকত্বের গবেষণায় ভারতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন দেবেন্দ্রমোহন। ফলে বিখ্যাত ‘কোমো কনফারেন্স’এ চৌম্বকত্বের ওপর বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পান দেবেন্দ্রমোহন। ইতালীয় বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টা’র (১৭৪৫-১৮২৭) মৃত্যুর শতবার্ষিকী উপলক্ষে ইতালির লেক কোমো-তে ১৯২৭ সালের ১১-২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এই কনফারেন্স। পৃথিবীর চৌদ্দটি দেশ থেকে ৬০ জন বিজ্ঞানী এখানে আমন্ত্রিত হন – যাদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন নোবেল বিজয়ী। ভারত থেকে দু’জন বিজ্ঞানী এ সুযোগ পেয়েছিলেন- যাদের একজন দেবেন্দ্রমোহন এবং অন্যজন মেঘনাদ সাহা।
 
ইতালীয় বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টা’র (১৭৪৫-১৮২৭) মৃত্যুর শতবার্ষিকী উপলক্ষে ইতালির লেক কোমো-তে ১৯২৭ সালের ১১-২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এই কনফারেন্স। পৃথিবীর চৌদ্দটি দেশ থেকে ৬০ জন বিজ্ঞানী এখানে আমন্ত্রিত হন – যাদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন নোবেল বিজয়ী। ভারত থেকে দু’জন বিজ্ঞানী এ সুযোগ পেয়েছিলেন- যাদের একজন দেবেন্দ্রমোহন এবং অন্যজন মেঘনাদ সাহা।
 
১৯২৭ সালে ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন দেবেন্দ্রমোহন। কোমো কনফারেন্সে যাবার আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের শিক্ষাছুটি নেন। কোমো কনফারেন্সের ১২ সেপ্টেম্বর বক্তৃতা দেন দেবেন্দ্রমোহন। বিষয় ছিল – “On the magnetic moments of ions of the transitional group of elements”। একই অধিবেশনে আরো বক্তৃতা করেছেন রাদারফোর্ড, স্টার্ন, ল্যাংগমুয়ের, ডি ব্রগলি, কম্পটন, ব্র্যাগ – প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী। দেবেন্দ্রমোহনের বক্তৃতা খুবই প্রশংসিত হয় [21]।
 
কোমো কনফারেন্সের পর দেবেন্দ্রমোহন ‘ব্রিটিশ এসোসিয়েশান ফর দি এডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’- এর সভায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইংল্যান্ড, জার্মানি, ও নেদারল্যান্ডের বিভিন্ন ল্যাবে গবেষণা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। জটিল যৌগের চৌম্বকধর্ম নিয়ে পরীক্ষা করার সময় (১৯২৯) স্টোনারের তত্ত্বে (E. C. Stoner) ত্রুটি দেখতে পেয়ে সংশোধন করেন তিনি। স্টোনারের সূত্র তাঁর সংশোধনী সহ পরিণত হয় ‘বোস-স্টোনার’ তত্ত্বে [2]।
 
==নোবেল মনোনয়ন কমিটি==
১৯২৯ সালে নোবেল পুরষ্কার মনোনয়ন কমিটি দেবেন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে ১৯৩০ সালের পদার্থবিজ্ঞান/রসায়নে নোবেল পুরষ্কারের জন্য যোগ্য ব্যক্তির মনোনয়ন আহ্বান করেন। দেবেন্দ্রনাথ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কারের জন্য মেঘনাদ সাহার নাম প্রস্তাব করেছিলেন [22]।
 
১৯৩৩ সালের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল রয়েল ইনস্টিটিউশান অব লন্ডনের ফ্যারাডে সোসাইটির আমন্ত্রণে তরল স্ফটিকের (liquid crystal) ওপর বৈজ্ঞানিক আলোচনায় অংশ নেন দেবেন্দ্রমোহন। ১৯৩৫ সালে সি ভি রমন ব্যাঙ্গালোরের ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের পরিচালক পদে যোগ দিলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পালিত প্রফেসর’র পদ খালি হয়। দেবেন্দ্রমোহন ‘ঘোষ প্রফেসর’ পদ ছেড়ে ‘পালিত প্রফেসর’ পদে যোগ দিলেন। কারণ একটাই- ‘পালিত প্রফেসর’ পদে গবেষণার জন্য একটু বেশি টাকা বরাদ্ধ থাকতো। তিন বছর ছিলেন তিনি এই পদে।
 
==বসু বিজ্ঞান মন্দির পরিচালনা==
১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসুর মৃত্যুর পর বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পরিচালনার ভার এসে পড়ে দেবেন্দ্রমোহনের ওপর। ১৯৩৮ সালে দেবেন্দ্রমোহন বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ পর্যন্ত তিনি বসু বিজ্ঞান মন্দির পরিচালনা করেন। এসময় দেবেন্দ্রমোহন নতুন নতুন ডিপার্টমেন্ট খুলে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ও গবেষণা কাজের ব্যাপক প্রসার ঘটান।