দ্বিজেন শর্মা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
১৩৫ নং লাইন:
== আরো দেখুন ==
* [[নটর ডেম কলেজ]], ঢাকা
 
দ্বিজেন শর্মার শৈশব কেটেছে সিলেটের পাথারিয়া পাহাড়ের নিসর্গে। তিনি সিলেটের মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা। জন্ম ১৯২৯ সালের ২৯ মে। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাঠ নেন। দ্বিজেন শর্মা বলেন, ‘উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে পড়ার সময় উদ্ভিদের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তখন দৈনিক পাকিস্তান-এর সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন কবি আহসান হাবীব। তাঁর কাছে বৃক্ষবিষয়ক লেখা নিয়ে যাই। ফিচার পাতায় লেখা ছাপা হয়। ’৬২-৬৩ সালের দিকে গল্পকার জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত অবজারভার পত্রিকার ফিচারে কাজ করতেন। সেখানেও বৃক্ষ, পরিবেশ নিয়ে লেখা ছাপা হয়। অবজারভার-এর মালিক হামিদুল হক চৌধুরী গোলাপ ফুল খুব পছন্দ করতেন।’
দ্বিজেন শর্মা বলেন, ‘শুধু গোলাপ নিয়ে একটি সংখ্যা বের করেছিল অবজারভার। সেই ১৯৫৮ সালে ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা ১৫ লাখের মতো। দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় চাকরি করতেন শামসুর রাহমান ও আহমেদ হুমায়ুন। লেখা দিতে গেলে তাঁদের সঙ্গে আড্ডা হতো। সাহিত্য পত্রিকা সমকাল-এর সম্পাদক ছিলেন কবি সিকান্দার আবু জাফর। সেখানে তরুণ লেখকদের আড্ডা হতো। ১৯৫৬-৫৮ সালের দিকে ঢাকা শহরে তিনটি রেস্তোরাঁয় আড্ডা হতো। পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিংয়ে শিল্পী-সাহিত্যিকদের আড্ডা হতো। গুলিস্তানের রেক্স রেস্তোরাঁয়ও শিল্পী-সাহিত্যিকেরা আড্ডা দিতেন। আড্ডায় আসতেন শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, শহীদ কাদরী প্রমুখ। গুলিস্তান সিনেমায় ছিল গুলিসিতান রেস্তোরাঁ। এখানেও সংস্কৃতিমনা মানুষেরা আসতেন। গুলিস্তান সিনেমা হলের পাশে ছোট সিনেমা হল ছিল নাজ। পৃথিবীর বিখ্যাত সিনেমা দেখানো হতো সেখানে। আমি ম্যান ইন এ গ্রে ফ্ল্যানেল স্যুট, রোমান হলিডের মতো সিনেমা এই নাজে দেখেছি। ১৯৫৬ সালে কার্জন হলে সত্যজিত্ রায়ের পথের পাঁচালী দেখেছি। সেটা পর্দা টাঙিয়ে দেখানো হয়। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।’
দ্বিজেন শর্মা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তখন ঢাকা শহর এত বড় হয়নি। মুগদাপাড়া, খিলগাঁওয়ে ছিল ধানখেত। ওই সময় তিনি স্বপ্ন দেখতেন রমনা গ্রিনের মতোই হবে ঢাকা শহর। জিনজিরা ছিল খালি মাঠ। দ্বিজেন শর্মা স্বপ্ন দেখতেন কলকাতা গড়ের মাঠের আদলে তৈরি হবে জিনজিরা। ১৯৭৪ সালে শাহাদত চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। দ্বিজেন শর্মা লেখা তৈরি করেন। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় বিচিত্রার উদ্যান সংখ্যা। আশির দশকে মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার বৃক্ষ সংখ্যা, বৃক্ষ ও পরিবেশ সংখ্যা, পক্ষী সংখ্যাকে বড় কাজ বলে মনে করেন দ্বিজেন শর্মা।
১৯৫৮ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন দ্বিজেন শর্মা। সেখানে তিনি একটি বাগান করেন। ঢাকার নটর ডেম কলেজে অধ্যাপনা করেন ১৯৬২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত। নটর ডেম কলেজেও বাগান করেন দ্বিজেন শর্মা। ১৯৭৪ সালে মস্কোর প্রগতি প্রকাশনীতে চলে যান। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বছর তিনেক সেখানেই ছিলেন। ঢাকায় থাকার একপর্যায়ে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
দ্বিজেন শর্মা অনূদিত বইয়ের সংখ্যা ৩০। আর মৌলিক বই ১৫টি। দ্বিজেন শর্মা বলেন, ‘এখন আমি পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনা করি। আর্থসামাজিক ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমার প্রিয় বিষয়। বছরে দু-তিনবার সিলেটের পাথারিয়ায় যাই, বরিশালে যাই। আমার বাবা চন্দ্রকান্ত শর্মা কবিরাজ ছিলেন। তিনি অনেক গাছ লাগাতেন। গাছের বাকল, পাতা দিয়ে ওষুধ তৈরি করতেন। ঔষধি গাছ সম্পর্কে বাবার কাছেই জেনেছি।’
দ্বিজেন শর্মার এক ছেলে চিকিত্সক, থাকেন মস্কোতে। এক মেয়ে অণুজীববিজ্ঞানী, লন্ডনে থাকেন। দ্বিজেন শর্মা থাকেন সিদ্ধেশ্বরীতে। তিনি প্রায়ই রমনা পার্কে যান, গাছ দেখেন। এখনো গাছ লাগান।
 
== তথ্যসূত্র ==