পরী বিবি

শায়েস্তা খানের কন্যা এবং শাহজাদা মুহাম্মদ আজমের স্ত্রী
(বিবি পরী থেকে পুনর্নির্দেশিত)

পরী বিবি ছিলেন সুবাহ বাংলার মুঘল সুবাহদার শায়েস্তা খানের কন্যা এবং সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র ও ভবিষ্যত মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ আজম শাহ-এর স্ত্রী। [১] এছাড়াও তিনি মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রধান স্ত্রী সম্রাজ্ঞী নূর জাহানের নাতনী। [২]

পরী বিবি
জন্মইরান দুখ্ত্ রহমত বানু
মৃত্যু১৬৮৪
ঢাকা, সুবাহ বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ)
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গীমুহাম্মদ আজম শাহ
রাজবংশতৈমুরীয় (বিবাহসূত্রে)
পিতাশায়েস্তা খান
ধর্মইসলাম

জীবনী সম্পাদনা

শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির আসল নাম ছিল ইরান দুখত রহমত বানু। তবে পরী বিবি নামটিই অধিক প্রচলিত। তিনি শায়েস্তা খানের কন্যা কিনা তা নিয়ে কিছু ঐতিহাসিকদের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও তিনি যে শায়েস্তা খানের কন্যা তা স্বয়ং শায়েস্তা খানের নিজের ওসিয়তনামা থেকেই প্রমাণিত হয়। ওসিয়তনামাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাটরা ওয়াকফ পরিদপ্তরে এখনো সংরক্ষিত আছে।

১৬৬৮ সালের ৩ মে শাহজাদা মুহাম্মদ আজম শাহ-এর সঙ্গে পরী বিবির বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। তাদের বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লক্ষ আশি হাজার টাকা।

১৬৮৪ সালে লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তুরে তার অকাল মৃত্যু ঘটে।[৩]

পরী বিবি এবং লালবাগ কেল্লা সম্পাদনা

১৬৭৮ সালে সুবাহ বাংলার তৎকালীন সুবাহদার শাহজাদা মুহাম্মদ আজম লালবাগ কেল্লার নির্মান শুরু করেন। তিনি বাংলার সুবাহদার (গভর্নর) হিসেবে মোট ১৫ মাস ঢাকায় ছিলেন। কিন্তু লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই তার পিতা মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য তাকে দিল্লিতে ফিরে আসার নির্দেশ দেন।

এসময়ের মধ্যে একটি দরবার হল ও একটি মসজিদ নির্মিত হয়। তারপর ১৬৮০ সালে পরী বিবির বাবা শায়েস্তা খান পুনরায় বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। তিনি পুনরায় দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু ১৬৮৪ সালে কেল্লার ভেতর শায়েস্তা খানের কন্যা ইরান দুখত রহমত বানুর (পরী বিবি) মৃত্যুর ফলে শায়েস্তা খান দুর্গটিকে অপয়া মনে করে ১৬৮৪ সালে এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। [৪]

তিনি দুর্গের অভ্যন্তরে পরীবিবির সমাধি উপর একটি সুদৃশ্য সমাধি সৌধ তৈরি করেন। যা পরিবিবির মাজার হিসেবে পরিচিত।

পরী বিবির সমাধিসৌধ সম্পাদনা

 
পরী বিবির সমাধিসৌধ

লালবাগের কেল্লার অভ্যন্তরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে সেগুলো হলো– মসজিদ, পরী বিবির সমাধি ও দেওয়ান-ই-আম। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল পরীবিবির মাজার। মূলত লালবাগ কেল্লার বিভিন্ন ছবিতে পরীবিবির মাজার ভবনটিই দেখানো হয়।

পরিবিবির মাজার ভবনটি বর্গাকার চতুষ্কোণ। ভবনের একদম মাঝের বর্গাকার কক্ষটিতে রয়েছে পরীবিবির কবর। এই কক্ষটিও ঘিরে আরও আটটি ঘর রয়েছে। ভবনের চার কোনায় রয়েছে চারটি ছোট মিনার এবং ছাদের কেন্দ্রভাগে রয়েছে অষ্টকোণ আকৃতির গম্বুজ। গম্বুজটি পূর্বে সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো ছিল। বর্তমানে তা পিতল দিয়ে আচ্ছাদিত। ভবনটির কেন্দ্রীয় কক্ষ এবং এর চারপাশের চারটি কক্ষে সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত। কিন্তু ভবনের কোন চারটি কক্ষ সাধারণ প্লাস্টার করা।

ভবনটির চারপাশে চারটি ঝরনা ছিল কিন্তু বর্তমানে দক্ষিণ দিকের ঝরনাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। [৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Legends of Lalbagh"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৭ 
  2. Rahman, Syedur (২০১০)। Historical Dictionary of Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 87। আইএসবিএন 9780810874534 
  3. আবদুল মমিন চৌধুরী, এ.কে.এম ইয়াকুব হোসাইন। "বিবি পরী"bn.banglapedia.orgবাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২২ 
  4. Sayid Aulad Hasan (১৯০৩)। Extracts from the Notes on the Antiquities of Dacca। Published by the author। পৃষ্ঠা 5।