বাংলাদেশের বিচার বিভাগ
বাংলাদেশের বিচার বিভাগ বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের অন্যতম। সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ, জেলা পর্যায়ের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত মহানগর দায়রা জজ আদালত ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং বিভিন্ন ট্রাইবুনালের সমন্বয়ে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ গঠিত। আইন বিভাগ যে আইন প্রনয়ন করে, সেই আইন অনুযায়ী বিচার করাই হলো বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব। যারা বিচার করেন তাদেরকে বিচারপতি (সুপ্রিম কোর্টের বিচারক), জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট (প্রতি জেলায় ও মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আদালত বা ট্রাইবুনালের বিচারক) বলা হয়। প্রধান বিচারপতি সমগ্র বিচার বিভাগের প্রধান। সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তার অধীনস্থ। জেলা ও দায়রা জজ জেলার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের প্রধান। অন্যদিকে, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছেন জেলার প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট। মেট্রোপলিটন এলাকার মুখ্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে মহানগর দায়রা জজ এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের অধিকর্তাকে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়।
বিচার বিভাগ হলো সংবিধানের অভিভাবক। সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে আইন বিভাগ তথা জাতীয় সংসদ কোনো আইন তৈরী করলে কিংবা অন্য কোনো আইনের সাথে বিরোধপূর্ণ আইন তৈরী করলে কিংবা নির্বাহী বিভাগ আইন বহির্ভূত কাজ করলে বিচার বিভাগ জুডিসিয়াল রিভিউ, রিট এখতিয়ার ইত্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন বা নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক কৃত যেকোনও কাজকে বাতিল ও অকার্যকর ঘোষণা করে আদেশ দিতে পারেন। আইনের ব্যাখ্যা দেবার দায়িত্বও বিচার বিভাগের হাতে ন্যস্ত।
সর্বোচ্চ আদালতসম্পাদনা
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(ক) অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার বর্ণনা করা হয়েছে।[১] এটি দুটি বিভাগ নিয়ে গঠিত, হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগ। সুপ্রীম কোর্টের এই দুটি বিভাগের আলাদা আলাদা এখতিয়ার রয়েছে। [২]
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় | |
---|---|
অধিক্ষেত্র | গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ |
অবস্থান | রমনা, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৪৩′৫১″ উত্তর ৯০°২৪′০৯″ পূর্ব / ২৩.৭৩০৭৭৭° উত্তর ৯০.৪০২৪৫৮° পূর্ব |
অনুমোদনকর্তা | বাংলাদেশের সংবিধান |
তথ্যক্ষেত্র | সুপ্রিম কোর্ট |
প্রধান বিচারপতিসম্পাদনা
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের প্রধান এবং জেলা আদালত সহ সমগ্র বিচারিক প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। প্রধান বিচারপতি মামলার শুনানি ও সিদ্ধান্ত নিতে অন্যান্য বিচারকদের সাথে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে বসেন, আদালতের প্রশাসন সংক্রান্ত কার্যাবলির জন্য পূর্ণ কোর্ট (Full Court) সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং জেলা ও মহানগর আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান করেন।[৩]
আপীল বিভাগসম্পাদনা
আপীল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের আপীল শুনে থাকে। আপীল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্তের সঠিকতা নির্ধারণের পাশাপাশি জেলা আদালত থেকে হাইকোর্ট বিভাগে আপীলে উত্থাপিত জনস্বার্থের যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগসম্পাদনা
সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ দেওয়ানী আদালত, ফৌজদারি আদালত এবং কিছু বিশেষ আদালত নিয়ে গঠিত।
জেলা আদালতসম্পাদনা
জজ কোর্টসম্পাদনা
বাংলাদেশ সরকারের সীল |
বাংলাদেশের জেলাতে অবস্থিত জজ কোর্টের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ হচ্ছেন:[৪]
- (১) জেলা ও দায়রা জজ
- (২) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ
- (৩) যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ
- (৪) সিনিয়র সহকারী জজ
- (৫) সহকারী জজ
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টসম্পাদনা
বাংলাদেশ সরকারের সীল |
বাংলাদেশের জেলার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের[৫] বিভিন্ন স্তরের ম্যাজিস্ট্রেটগণ হচ্ছেন:
মহানগর ফৌজদারি আদালতসম্পাদনা
মেট্রোপলিটন আদালত মহানগর এলাকায় ফৌজদারি অপরাধের বিচার করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, গাজীপুর ও রংপুর এই ৮টি মহানগরে মহানগর আদালত বা মেট্রোপলিটন সেশনস কোর্ট রয়েছে:[৬]
মহানগর দায়রা আদালতসম্পাদনা
বাংলাদেশ সরকারের সীল |
মহানগর দায়রা আদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকগণ হচ্ছেন:
- (১) মহানগর দায়রা জজ
- (২) অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ
- (৩) যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ
বর্তমানে দেশের ৫টি মহানগর যথা: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট এ মহানগর দায়রা জজ আদালত রয়েছে, অন্য ৩টি শহরে সরকার এখনো মেট্রোপলিটন সেশনস কোর্ট স্থাপন করেনি।
চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্টসম্পাদনা
বাংলাদেশ সরকারের সীল |
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিভিন্ন স্তরের ম্যাজিস্ট্রেটগণ হচ্ছেন:
- (১) চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
- (২) অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
- (৩) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট)
বর্তমানে দেশের ৮টি মহানগর যথা: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, গাজীপুর ও রংপুরে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্ট রয়েছে।
বিশেষায়িত আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসম্পাদনা
- প্রশাসনিক আদালত
- প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল
- নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আদালত
- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
- অর্থ আদালত
- অর্থ ঋণ আদালত
- ইনসলভেন্সি কোর্ট
- আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল
- শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল
- শ্রম আদালত
- শ্রম আদালত
- ন্যয়বিচার আদালত
- সামাজিক আদালত
- দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল
- বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনসম্পাদনা
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন হলো বাংলাদেশের জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সংগঠন। সংগঠনটির সদর দপ্তর ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত।
ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ.এইচ.এম. হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া সংগঠনের বর্তমান সভাপতি এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা এর মহাসচিব।[৭]
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Home : Supreme Court of Bangladesh"। www.supremecourt.gov.bd। ৫ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৬।
- ↑ "Legal system of Bangladesh"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৬।
- ↑ "Chief Justice"। banglapedia.org।
- ↑ "Archived copy"। ২০১৫-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৭।
- ↑ "বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ"।
- ↑ "Subordinate Courts | Judicial Portal"।
- ↑ "Chief Justice, law minister attend BJSA Iftar"। Daily Sun (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৯।