বালক কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি থেকে প্রকাশিত একটি পারিবারিক মাসিক পত্রিকা। ১২৯২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস থেকে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী তথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজোবৌ ঠাকুরানী  জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সম্পাদনায় এই পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। তবে পত্রিকাটির কার্যাধ্যক্ষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই পত্রিকা প্রকাশ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ তার জীবনস্মৃতি গ্রন্থে লিখেছেন:[১]

বালকদের পাঠ্য একটি সচিত্র কাগজ বাহির করিবার জন্য মেজবউঠাকুরানীর বিশেষ আগ্রহ জন্মিয়াছিল। তাঁহার ইচ্ছা ছিল, সুধীন্দ্র, বলেন্দ্র প্রভৃতি আমাদের বাড়ির বালকগণ এই কাগজে আপন আপন রচনা প্রকাশ করে। কিন্তু শুধুমাত্র তাহাদের লেখায় কাগজ চলিতে পারে না জানিয়া। তিনি সম্পাদক হইয়া আমাকেও রচনার ভার গ্রহণ করিতে বলিলেন।

জ্ঞানদানন্দিনী দেবী যেমন প্রথম প্রাচীন লোকাচার ভেঙে হিন্দু নারী সমাজে আধুনিক রীতি-নীতি প্রবর্তন করেন, তেমনই  তিনি ছোটদের বিদ্যাশিক্ষা, চালচলন, রুচি এবং মানসিক বিকাশে নতুন ধারা আনার লক্ষ্যে মহিলা সম্পাদিত 'বালক' পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি পত্রিকাটিতে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে যেমন ছোটদের জন্য লিখিয়েছেন, তেমনই নিজেও কলম ধরেছেন। তিনি  নাতি সুবীরের জন্য দুটি রূপকথা - ' সাত ভাই চম্পা ' ও 'টাকডুমা ডুমডুম' এর নাট্যরূপ প্রকাশ করেন পত্রিকাটিতে।[২]

এই পত্রিকাটি ছিল সচিত্র মাসিক এবং বার্ষিক মূল্য ছিল ২ টাকা। ১২৯৩ বঙ্গাব্দে কার্য্যধ্যক্ষের পদ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবসর নেন। ফলে জ্ঞানদানন্দিনীর পক্ষে একা পত্রিকা দেখাশোনা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। সচিত্র মাসিক পত্রিকা 'বালক' তাই দীর্ঘায়ু হয়নি, মাত্র এক বছর চলেছিল। পরে এটি যুক্ত হয় ঠাকুরবাড়িরই বিখ্যাত পত্রিকা 'ভারতী'র সঙ্গে, যুগ্ম-পত্রিকার নাম হয় 'ভারতী ও বালক'। প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১২৯৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (ইংরাজী ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে)। তৎকালীন 'ভারতী' পত্রিকার সম্পাদক স্বর্ণকুমারী দেবী এর সম্পাদক ছিলেন। 'ভারতী'র সাথে যুগ্মভাবে 'বালক'-এর আয়ুষ্কাল ছিল সাত বছর এবং এই সাতবছরে শিশুসাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে বাংলায় জাগরণ এনেছিলো 'বালক' পত্রিকা। জ্ঞানদানন্দিনী দেবীসহ ঠাকুর বাড়ির সদস্যরা ছাড়াও সেকালের বহু নামজাদা লেখকের রচনা পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হত। সেই লেখকেরা হলেন -

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা