বান্দারু আচামাম্বা

বান্দারু আচামাম্বা (১৮৭৪ –১৯০৫) নারী আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্রগামীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তাকে ভারতের প্রথম দিকের নারীবাদী ইতিহাসবিদদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। [১] আচামাম্বা তার ভাইয়ের নির্দেশনায় তেলুগু, ইংরেজি এবং ক্লাসিক হিন্দি অধ্যয়ন করেন এবং সাহিত্য ও নারী বিষয়ক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। তিনি বেশ কয়েকজন তেলুগু এবং ব্রিটিশ মহিলার জীবনী লিখেছেন, যা ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদদের জন্য পথ তৈরি করেছে। তার গল্পগুলো তার সময়ের সামাজিক অবস্থা এবং নারী সমস্যা প্রতিফলিত করে।

প্রারম্ভিক জীবন এবং পটভূমি সম্পাদনা

বান্দারু আচামাম্বা ১৮৭৪ সালে অন্ধ্র প্রদেশের কৃষ্ণা জেলার পেনুগাঞ্চিপ্রোলু নামে একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন দিওয়ান বা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী। বান্দারু আচামাম্বার ছয় বছর বয়স হয়, তখন তার বাবা মারা যান। তিনি দশ বছর বয়সে তার মামা বান্দারু মাধব রাওকে বিয়ে করেছিলেন এবং সতেরো বছর বয়সে তার সাথে পারিবারিক জীবন শুরু করেছিলেন। মাধব রাও তার পড়াশোনার পক্ষে ছিলেন না। যাইহোক, তার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি তার ছোট ভাই কোমাররাজু ভেঙ্কটা লক্ষ্মণ রাওকে তার তত্ত্বাবধানে নিয়েছিলেন। তিনি তার ভাইয়ের পাশে বসে তেলুগু, হিন্দি, ইংরেজি এবং মারাঠি পড়তে শিখেছিলেন। তার ভাই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নাগপুর চলে যাওয়ার পরে, আচামাম্বা নিজে থেকে কাজ করেছিলেন, বাংলা এবং গুজরাটি শেখার পাশাপাশি সামান্য সংস্কৃতও শিখেছিলেন।

তার ছেলে এবং মেয়ের প্রাথমিক মৃত্যু তার জন্য অসহনীয় ব্যক্তিগত ক্ষতি ছিল। তখন থেকে আচামাম্বা পাঁচটি অনাথ শিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন তাদের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা এবং শিক্ষা প্রদান করে।

অরুগান্তি সুন্দরী রত্নমাম্বার সাথে একত্রে, আচামাম্বা ১৯০২ সালে মাছিলিপত্তনমে বৃন্দাভানা স্ত্রীলা সমাজাম (বৃন্দাবনা মহিলা সমিতি) নামে উপকূলীয় অন্ধ্রের প্রথম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালে, তিনি সারা রাজ্যে ভ্রমণ করেছিলেন এবং অন্যদেরকে বেশ কয়েকটি মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন।

আচামাম্বা ১৯০৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ৩০ বছর বয়সে মারা যান।

সাহিত্য কর্ম সম্পাদনা

আচামাম্বা বেশ কিছু ছোট গল্প, নারী বিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখা ছিল ৩৪ জন ভারতীয় নারীর জীবনী, যা অবলা সচ্চরিত্রা রত্নমালা নামে পরিচিত।

আচামাম্বার কাজের মধ্যে রয়েছে:

  • ধন ত্রয়োদশী
  • আবালা সচ্চরিত্র রত্নমালা (মহান নারীর জীবনের ইতিহাসের মালা)
  • বেদা কুটুম্বম (একটি দরিদ্র পরিবার)
  • খনা
  • সাতকাম ( শত কবিতার চক্র )

হিন্দু সুন্দরীসরস্বতী পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধগুলো হলো:

  • দাম্পতুল প্রথমা কলহমু (একটি দম্পতির প্রথম বিরোধ)
  • বিদ্যাভান্তুলাগু যুবাতুলকোকা ভিন্নাপামু (শিক্ষিত মহিলাদের প্রতি একটি আবেদন)
  • স্ত্রিবিদ্যা প্রভাবম (নারী শিক্ষার শক্তি)

ধনা ত্রয়োদশী ১৯০২ সালে মাসিক হিন্দু সুন্দরীতে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি একটি দরিদ্র দম্পতির গল্প ছিল। গল্পে তাদের কাছে দীপাবলি উদযাপনের জন্য ছোট থালা বাতি জ্বালানো এবং কাপড় কেনার টাকা ছিল না। এই গল্পে হওয়া চক্রান্তের মূল বিষয় ছিল, স্বামীর একটি অপরাধ করার চেষ্টা এবং স্ত্রী তার কু-পরামর্শপূর্ণ পরিকল্পনাকে দমন করা।

১৯০১ সালে তার ভাইয়ের সহযোগিতায় তিনি ভারতীয় মহিলাদের উপর বেশ কয়েকটি গল্প সংকলন করেছিলেন। সেগুলো পরে তিনি অবলা সচ্চরিত্রা রত্নমালা বইয়ে প্রকাশ করেছিলেন। এই অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলোতে জীবনীর মাধ্যমে মোট ১০০০ বছরের সময়কালের ৩৪ জন ভিন্ন ভিন্ন ভারতীয় নারীর সৌন্দর্য, সাহসিকতা এবং প্রত্যয়কে চিত্রিত করেছে। এই বইটির কিছু অংশ কান্দুকুরি বীরসালিঙ্গমের আর্থ-সামাজিক জার্নাল চিন্তামণিতে প্রকাশিত হয়েছিল।

খনার গল্পে, আচামাম্বা বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ বরাহ মিহিরের স্ত্রী খনার জীবন নিয়ে লিখেন। খনা তার সময়ে কবিতা, জ্যোতিষশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা ও কৃষিতে দুর্দান্ত দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।

তিনি সারা জীবন প্রচুর ভ্রমণ করেছেন এবং ভ্রমণকালে বেশ কয়েকজন পণ্ডিতের সাথে তার কাজের বিষয়ে কথা বলেছেন। [২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Susie Tharu & K.Lalita (৮ অক্টোবর ১৯৯১)। Bandaru AcchamambaThe Feminist Pressআইএসবিএন 9781558610279 
  2. Satyavati. Kondaveeti. Bhandaru Acchamamba. First Telugu Story Writer. www.thulika.net/2007January/acchamamba.htm.

সূত্র সম্পাদনা

  • সত্যবতী, কোন্ডবেতী। (বান্দারু আচামাম্বা। প্রথম তেলুগু গল্প লেখক। প্রবন্ধ)। [১]
  • থারু, সুসি এবং ললিতা কে. এডস। ভারতে মহিলাদের লেখা। ভলিউম 2 বিংশ শতাব্দী (১৯93)। ফেমিনিস্ট প্রেস।
  • মালথি, নিদাদাভোলু। (বান্দারু আচামাম্বা। বান্দারু আচামাম্বার অসামান্য জীবন ও কাজ। [২]