বান্টু সম্প্রসারণ

বান্টু সম্প্রসারণ হলো মূল প্রত্ন-বান্টুভাষী গোষ্ঠীর ধারাবাহিক অভিবাসন,[৩][৪] যারা পশ্চিম আফ্রিকা-মধ্য আফ্রিকার আশেপাশে সাব-সাহারান আফ্রিকার বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে একটি মূল অংশ থেকে ছড়িয়ে পড়েছিলো। এই সম্প্রসারণের ফলে প্রত্ন-বান্টুভাষী বসতি স্থাপনকারীরা ওইসব অঞ্চলে পূর্ব-বিদ্যমান শিকারি-সংগ্রহকারী এবং কৃষিজীবী গোষ্ঠীগুলির মুখোমুখি হয়েছিলো বা তাদের স্থানচ্যুত করেছিলো।

নার্স এবং ফিলিপসনের মতে কালানুক্রমিক পরিলোকন (২০০৩):[১]
1 = ৪,০০০–৩,৫০০ অদ্যপূর্ব: মূল উৎস
2 = ৩,৫০০ অদ্যপূর্ব: প্রারম্ভিক সম্প্রসারণ
"প্রাথমিক বিভক্তি": 2.a = পূর্ব,    2.b = পশ্চিম [২]
3 = ২,০০০–১,৫০০ অদ্যপূর্ব: পূর্বাঞ্চলীয় বান্টুদের উরেওয়ে উৎসস্থল
47: দক্ষিণমুখী অগ্রগমণ
9 = ২,৫০০ অদ্যপূর্ব: কঙ্গো উৎস
10 = ২,০০০–১,০০০ অদ্যপূর্ব: সর্বশেষ পর্যায়

এই সম্প্রসারণের প্রাথমিক প্রমাণটি হলো ভাষাতাত্ত্বিক: উপ-নিরক্ষীয় আফ্রিকা জুড়ে প্রচলিত অনেকগুলি ভাষা একে অপরের সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, এটি সেসব ভাষার মূলভাষীদের সাধারণ ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসকে নির্দেশ করে। বান্টু ভাষার ভাষাগত মূলটি নাইজার–কঙ্গো পরিবারের একটি শাখা সমন্বিত, যা ক্যামেরুন এবং নাইজেরিয়ার সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত ছিলো। যাইহোক, এই প্রসারণের সঠিক পথটি শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, বিষয়টি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ এবং জিনগত প্রমাণের সাথে সম্পর্কিত যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সুতরাং যদিও এই সম্প্রসারণটি হয়েছিলো বলেই ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে, তবুও এর বহুদিক সন্দেহাতীত নয় বা প্রবলভাবে বিতর্কিত।[৫]

ধারণা করা হয় যে এই সম্প্রসারণটি প্রায় ৩,০০০ থেকে ২,০০০ বছর পূর্বে (প্রায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে) কমপক্ষে দুটি জোয়ারে হয়েছিল। ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে প্রসারণটি দুটি দিকে এগিয়ে গিয়েছিলো: প্রথমটি কঙ্গোর বন অঞ্চল পেরিয়ে (পূর্ব আফ্রিকার দিকে)[৬] এবং দ্বিতীয়টি (সম্ভাব্য অন্যগুলোও) গিয়েছিলো দক্ষিণে আফ্রিকার উপকূল বরাবর গ্যাবনে, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং অ্যাঙ্গোলাতে বা কঙ্গো নদী ব্যবস্থার অনেকগুলো দক্ষিণ-উত্তরমুখী প্রবাহিত নদী বরাবর অভ্যন্তরের দিকে। প্রসারণটি দক্ষিণ আফ্রিকাতে সম্ভবত ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই পৌঁছেছিল।[৭][৮][৯][১০][১১][১২][১৩][১৪]

সম্প্রসারণের তত্ত্ব সম্পাদনা

বান্টুবিদরা বিশ্বাস করেন যে বান্টু সম্প্রসারণ সম্ভবত ক্যামেরুন এবং নাইজেরিয়ার মধ্যবর্তী উচ্চভূমিতে শুরু হয়েছিল। বান্টু-ভাষীদের অধিকাংশই এ অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার কারণে এখানকার সীমান্তবর্তী ৬০,০০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত মাম্বিলা অঞ্চলটিকে বর্তমানে "স্বদেশে থাকা" বান্টুদের অবশেষ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। জিন হুরাল্ট (১৯৭৯, ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮) এবং রিগবার্ট টুইচের (২০০০) এই অঞ্চল বিষয়ক পৃথক রচনা থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে ৫ হাজার বছর ধরে আজ অবধি এই অঞ্চলটি একই সংস্কৃতি বসতি স্থাপন করে আসছে।[১৫] বামেন্দা উচ্চভূমির বেশিরভাগ গোষ্ঠীর (বর্তমান অবধি ২ সহস্রাব্দ ব্যাপী) মাম্বিলা অঞ্চলটির সাথে বংশপারম্পরিক সংশ্লিষ্টতার একটি প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে।

প্রাথমিকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করতেন যে বান্টু-ভাষীরা যে পথ অনুসরণ করেছিল বলে মনে করা হতো তারা সেই অঞ্চলের প্রাচীন সংস্কৃতিগুলিতে প্রত্নতাত্ত্বিক মিল খুঁজে পেতে পারে। ভাষাতত্ত্ববিদরা ভাষাগুলি শ্রেণিবদ্ধ করেছেন এবং তারা বিশ্বাস করেন যে সম্পর্কতার একটি বংশবৃত্তীয় ছক তৈরির মাধ্যমে এইসব বৈষয়িক সংস্কৃতি উপাদানগুলির পুনর্গঠন করতে পারবেন। তারা বিশ্বাস করেন যে এই সম্প্রসারণটি কৃষির বিকাশ, সিরামিক তৈরি এবং লোহার ব্যবহারের ফলে ঘটেছিল, যা নতুন বাস্তুসংস্থান অঞ্চলকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিয়েছিল। ১৯৬৬ সালে রোল্যান্ড অলিভার এই নিবন্ধগুলিকে যুক্তিসঙ্গত অনুমান হিসাবে উপস্থাপন করে একটি হাইপোথিসিস বা প্রকল্প প্রকাশ করেছিলেন।[১৬]

প্রকল্পটিতে তিনি বান্টু সম্প্রসারণের শিকারি-সংগ্রহকারী প্রত্ন-খোইসানকে একীভূত করে ফেলেছিলেন, যারা পূর্বে দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকায় বসবাস করতো। পূর্ব এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতে, বান্টুভাষীরা তাদের মুখোমুখি হওয়া (তবে সম্পর্কহীন) অন্য দুটি জাতি কুশিটীয়নিলোটীয়-ভাষী লোকদের কাছ থেকে পশুপালন পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকতে পারে। প্রত্নতাত্ত্বিক, ভাষাগত, বংশোদ্ভব-সম্বন্ধীয় এবং পরিবেশগত প্রমাণগুলি এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে যে বৈশ্বিক ইতিহাসে বান্টু সম্প্রসারণ একটি উল্লেখযোগ্য মানব অভিপ্রয়াণ ছিল।

নাইজার-কঙ্গো ভাষা সম্পাদনা

নাইজার–কঙ্গো ভাষাপরিবার সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত ভাষাসমূহের একটি বিশাল সমষ্টি নিয়ে গঠিত। এই পরিবারের বেনু–কঙ্গো শাখায় বান্টু ভাষাগুলি অন্তর্ভুক্ত, যা সমগ্র মধ্য, দক্ষিণ এবং পূর্ব আফ্রিকা জুড়ে দেখা যায়।

সম্প্রসারণ সম্পাদনা

পশ্চিম আফ্রিকার মূল অঞ্চল থেকে বান্টু-ভাষী মানুষের সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ অব্দের মধ্যে। যদিও প্রাথমিক উদাহরণগুলো থেকে ধারণা হয়ছিলো যে প্রথম দিকের বান্টুরা লোহার ব্যবহার এবং কৃষিকাজ উভয়ই করতো, তবে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দ অবধি লোহার ব্যবহার প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।[১৭] ক্রিস্টোফার এহ্রেটের মতে বান্টুদের পশ্চিমা শাখাটি ভাষাতাত্ত্বিকভাবে পৃথক নয়, তারা দক্ষিণাঞ্চলে উপকূল এবং কঙ্গো সিস্টেমের প্রধান নদীগুলি অনুসরণ করে প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্য অঙ্গোলায় পৌঁছেছিল।[১৮]

সমালোচনা সম্পাদনা

ম্যানফ্রেড কে. এইচ. এগার্ট বলেছিলেন যে "মধ্য আফ্রিকান রেইন ফরেস্টের বর্তমান প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ডগুলো অত্যন্ত স্পষ্ট এবং ফলস্বরূপ এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে বান্টুভাষীরা সুস্থিতভাবে বনের মধ্যে প্রবেশ করেছিলো।"[১৯]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Derek Nurse und Gérard Philippson: The Bantu Languages. Routledge, London 2003.
  2. Evidence against the "early split" scenario shown here is presented in E. Patin et al., "Dispersals and genetic adaptation of Bantu-speaking populations in Africa and North America", Science, Vol. 356, Issue 6337, pp. 543-546 (5 May 2017), ডিওআই:10.1126/science.aal1988.
  3. Clark, John Desmond; Brandt, Steven A. (১৯৮৪)। From Hunters to Farmers: The Causes and Consequences of Food Production in AfricaUniversity of California Press। পৃষ্ঠা 33। আইএসবিএন 978-0-520-04574-3 
  4. Adler, Philip J.; Pouwels, Randall L. (২০০৭)। World Civilizations: Since 1500Cengage Learning। পৃষ্ঠা 169। আইএসবিএন 978-0-495-50262-3 
  5. Berniell-Lee, Gemma; Calafell, Francesc; Bosch, Elena; ও অন্যান্য (২০০৬)। "Genetic and Demographic Implications of the Bantu Expansion: Insights from Human Paternal Lineages"Molecular Biology and Evolution26 (7): 1581–9। ডিওআই:10.1093/molbev/msp069 পিএমআইডি 19369595 
  6. Pollard, Elizabeth; Rosenberg, Clifford; Tignor, Robert (২০১১)। Worlds Together, Worlds Apart: A History of the World: From the Beginnings of Humankind to the Present । New York: Norton। পৃষ্ঠা 289আইএসবিএন 978-0-3939-1847-2 
  7. Vansina, J. (১৯৯৫)। "New Linguistic Evidence and 'The Bantu Expansion'"Journal of African History36 (2): 173–195। জেস্টোর 182309ডিওআই:10.1017/S0021853700034101 
  8. Tishkoff, S. A.; Reed, F. A.; Friedlaender, F. R.; ও অন্যান্য (২০০৯)। "The Genetic Structure and History of Africans and African Americans"Science324 (5930): 1035–44। ডিওআই:10.1126/science.1172257পিএমআইডি 19407144পিএমসি 2947357 বিবকোড:2009Sci...324.1035T 
  9. Plaza, S; Salas, A; Calafell, F; Corte-Real, F; Bertranpetit, J; Carracedo, A; Comas, D (২০০৪)। "Insights into the western Bantu dispersal: MtDNA lineage analysis in Angola"। Human Genetics115 (5): 439–47। এসটুসিআইডি 13213447ডিওআই:10.1007/s00439-004-1164-0পিএমআইডি 15340834 
  10. Coelho, M; Sequeira, F; Luiselli, D; Beleza, S; Rocha, J (২০০৯)। "On the edge of Bantu expansions: MtDNA, Y chromosome and lactase persistence genetic variation in southwestern Angola"BMC Evolutionary Biology9: 80। এসটুসিআইডি 7760419ডিওআই:10.1186/1471-2148-9-80পিএমআইডি 19383166পিএমসি 2682489  
  11. De Filippo, C; Barbieri, C; Whitten, M; ও অন্যান্য (২০১১)। "Y-chromosomal variation in sub-Saharan Africa: Insights into the history of Niger–Congo groups"Molecular Biology and Evolution28 (3): 1255–69। ডিওআই:10.1093/molbev/msq312পিএমআইডি 21109585পিএমসি 3561512  
  12. Alves, I; Coelho, M; Gignoux, C; ও অন্যান্য (২০১১)। "Genetic homogeneity across Bantu-speaking groups from Mozambique and Angola challenges early split scenarios between East and West Bantu populations"Human Biology83 (1): 13–38। এসটুসিআইডি 20841059ডিওআই:10.3378/027.083.0102পিএমআইডি 21453002 
  13. Castrì, L; Tofanelli, S; Garagnani, P; ও অন্যান্য (২০০৯)। "MtDNA variability in two Bantu-speaking populations (Shona and Hutu) from Eastern Africa: Implications for peopling and migration patterns in sub-Saharan Africa"American Journal of Physical Anthropology140 (2): 302–11। ডিওআই:10.1002/ajpa.21070পিএমআইডি 19425093 
  14. "Carte Blanche > M-Net"। Beta.mnet.co.za। ৭ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-৩১ 
  15. Zeitlyn, D and Connell, B (2003): Ethnogenesis and Fractal History on an African Frontier: Mambila-Njerep, -Mandulu. Journal of African History, Vol. 44, No 1, pp. 117-138, June 11, 2003. C.U.P.
  16. Oliver, Roland (১৯৬৬)। "The Problem of the Bantu Expansion"The Journal of African History7 (3): 361–376। জেস্টোর 180108ডিওআই:10.1017/S0021853700006472 
  17. Vansina, Jan (১৯৯০)। Paths in the Rainforest: Toward a History of Political Tradition in Equatorial Africa। Madison: University of Wisconsin Pressআইএসবিএন 978-0-2991-2573-8 
  18. Ehret, C. (২০০১)। "Bantu Expansions: Re-Envisioning a Central Problem of Early African History"। The International Journal of African Historical Studies34 (1): 5–41। জেস্টোর 3097285ডিওআই:10.2307/3097285 
  19. Eggert, Manfred (২০১৬)। "Geneticizing Bantu: Historical Insight or Historical Trilemma?"। Medieval Worlds: 79–90। এসটুসিআইডি 59372002ডিওআই:10.1553/medievalworlds_no4_2016s79  , No. 4,2016, pp.79-90