বাঙালি ব্রাহ্মণ হল হিন্দু ব্রাহ্মণ, যারা ঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গদেশে বসবাস করে, যা বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম রাজ্য ও বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত। বৈদ্যকায়স্থদের সঙ্গে বাঙালি ব্রাহ্মণদেরকে ঐতিহ্যগত ভাবে বাংলার তিনটি 'উচ্চ জাতি'-র মধ্যে গণ্য করা হয়।[১] ঔপনিবেশিক যুগে, একচেটিয়াভাবে না হলেও বাংলার ভদ্রলোক শ্রেণীর একটা বড়ো অংশ এই বর্ণ থেকে উঠে এসেছিল, যারা পশ্চিমবঙ্গে একটি যৌথ আধিপত্য বজায় রেখেছে।[২][৩][৪]

বাঙালি ব্রাহ্মণ
ধর্ম হিন্দুধর্ম
ভাষাবাংলা,
জনবহুল অঞ্চলপশ্চিমবঙ্গআসাম,ভারত

বৈদিক ব্রাহ্মণ ও পৌরাণিক ব্রাহ্মণ সম্পাদনা

ব্রাহ্মণীয় অনুষ্ঠানগুলি দুই ধরনের আচারের উদ্ভব হয়েছে: বৈদিক এবং পুরাণিক। বৈদিক আচার-অনুষ্ঠানাদি-আয়ুর্বৈদিক চিকিৎসা,ধনুর্বৈদিক কর্মাদি ও জ্যোতিষ বৈদিক গ্রহবিপ্রবৃত্তির মন্ত্রগুলি বেদের উপর ভিত্তি করে এবং এটিকে মহান পবিত্রতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যখন পুরাণগুলি কম পবিত্রতার সূত্রগুলির উপর ভিত্তি করে, এবং প্রকাশিত জ্ঞানের উপর নয়। শূদ্রদেরকে পৌরাণিক আচার-অনুষ্ঠানে সন্তুষ্ট থাকতে বলা হয় এবং পৌরাণিক পৌরহিত্য ব্রাহ্মণ পিতা ও শুদ্র মাতার সন্তানদের উপর ন্যস্ত।[৫]

ইতিহাস সম্পাদনা

গুপ্ত যুগ থেকে ব্রাহ্মণদের একাধিক জমি-অনুদান পরিলক্ষিত হয়েছে।[৬] ৪৩৩ খ্রিস্টাব্দের ধনাইদহ তাম্রশাসনের শিলালিপি তাদের মধ্যে প্রাচীনতম এবং এটিতে বরাহস্বমিন নামে একজন অনুদানপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণের কথা লিপিবদ্ধ করা আছে।[৬] ৭ম শতাব্দীর নিদনপুর তাম্রলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে জনবসতি সংলগ্ন একটি জলাভূমি ৫৬ টি গোত্রের ও বিভিন্ন বৈদিক বিদ্যালয়ের অন্তর্গত ২০৮ জনেরও বেশি বৈদিক ব্রাহ্মণকে দেওয়া হয়েছিল।[৭] বাঙালী ব্রাহ্মণরা যদিও অত্যন্ত উচ্চ আচার-অনুষ্ঠানের মর্যাদা ভোগ করতেন, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণরা অতীতে যে একচেটিয়া উচ্চ সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা ভোগ করতেন তা বাঙালি ব্রাহ্মণদের কখনোই ছিল না। ব্রাহ্মণদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা অন্যান্য জাতির সাথে ভাগ করে নিতে হয়েছিল।[৮]

এটি ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, খ্রিস্টীয় ১১তম শতকে, পাল রাজবংশের পতনের পর, একজন হিন্দু রাজা, আদিসুর কনৌজ থেকে পাঁচজন ব্রাহ্মণকে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সেই এলাকায় ইতিমধ্যেই থাকা ব্রাহ্মণদের শিক্ষা প্রদান করা, যাদের তিনি অজ্ঞ বলে মনে করতেন, এবং গতানুগতিক গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করা। ঐতিহ্য অনুসারে, এই পাঁচ অভিবাসী ব্রাহ্মণ এবং তাদের বংশধরেরা কুলীন ব্রাহ্মণ হয়েছিলেন।[৯] সেনগুপ্তের মতে, এই কিংবদন্তির একাধিক বিবরণ বিদ্যমান এবং ঐতিহাসিকরা সাধারণত এটিকে পুরাণ বা লোককাহিনী ছাড়া আর কিছুই বলে মনে করেন না, যার ঐতিহাসিক সত্যতা নেই।[১০] কিংবদন্তি রাজা ইয়াতি কেশরির অধীনে উড়িয়া ব্রাহ্মণদের অভিবাসনের অভিন্ন কাহিনী বিদ্যমান।[১১] সায়ন্তনী পালের মতে, দীনেশচন্দ্র সরকার মনে করেন যে, একশ্রেণীর বাঙালি ব্রাহ্মণেরা পশ্চিমের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করে আরও প্রতিপত্তি অর্জনের আকাঙ্ক্ষায় কৌলিন্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন।[১২]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bandyopadhyay, Sekhar (২০০৪)। Caste, Culture, and Hegemony: Social Dominance in Colonial Bengal। Sage Publications। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 81-7829-316-1 
  2. Bandyopadhyay, Sekhar (২০০৪)। Caste, Culture, and Hegemony: Social Dominance in Colonial Bengal। Sage Publications। পৃষ্ঠা 25। আইএসবিএন 978-0-761-99849-5 
  3. Chakrabarti, Sumit (২০১৭)। "Space of Deprivation: The 19th Century Bengali Kerani in the Bhadrolok Milieu of Calcutta"Asian Journal of Social Science45 (1/2): 56। আইএসএসএন 1568-4849জেস্টোর 44508277ডিওআই:10.1163/15685314-04501003 
  4. Ghosh, Parimal (২০১৬)। What Happened to the Bhadralok?। Delhi: Primus Books। আইএসবিএন 9789384082994 
  5. Shah, Ghanshyam (২০০৪)। Caste and Democratic Politics in India (ইংরেজি ভাষায়)। Permanent Black। আইএসবিএন 978-81-7824-095-4 
  6. Griffiths, Arlo (২০১৮)। "Four More Gupta-period Copperplate Grants from Bengal"Pratna Samiksha: A Journal of Archaeology। New Series (9): 15–57। 
  7. Shin, Jae-Eun (2018-01-01). Region Formed and Imagined: Reconsidering Temporal, Spatial and Social Context of Kāmarūpa, in Lipokmar Dzuvichu and Manjeet Baruah (eds), Modern Practices in North East India: History, Culture, Representation, London and New York: Routledge, 2018, pp.23-55
  8. Leach, E. R; Mukherjee, S. N; St. John's College (University of Cambridge), University of Cambridge; Centre of South Asian Studies, সম্পাদকগণ (১৯৭০)। Elites in South Asia (English ভাষায়)। Cambridge [England: University Press। পৃষ্ঠা ৫৫। আইএসবিএন 978-0-521-07710-1ওসিএলসি 92698 
  9. Hopkins, Thomas J. (১৯৮৯)। "The Social and Religious Background for Transmission of Gaudiya Vaisnavism to the West"। Bromley, David G.; Shinn, Larry D.। Krishna consciousness in the West। Bucknell University Press। পৃষ্ঠা 35–36। আইএসবিএন 978-0-8387-5144-2। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-৩১ 
  10. Sengupta, Nitish K. (২০০১)। History of the Bengali-Speaking People। UBS Publishers' Distributors। পৃষ্ঠা 25। আইএসবিএন 81-7476-355-4 
  11. Witzel 1993, পৃ. 267।
  12. Pal, Sayantani (২০১৬), "Sena Empire", The Encyclopedia of Empire (ইংরেজি ভাষায়), John Wiley & Sons, Ltd, পৃষ্ঠা 1–2, আইএসবিএন 978-1-118-45507-4, ডিওআই:10.1002/9781118455074.wbeoe043, সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৫ 
  13. ভট্টাচার্য, "রায়বাগিনী ও ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজকাহিনী"
  14. ভট্টাচার্য, "রায়বাগিনী ও ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজকাহিনী"
  15. "Kishore Kumar birthday: His favourite songs"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  16. "Protocol to keep President Pranab off Puja customs"Hindustan Times। ১১ অক্টোবর ২০১১। ৩১ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১২ 
  17. Littrup, Lisbeth (২৮ অক্টোবর ২০১৩)। Identity In Asian Literature (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 94। আইএসবিএন 978-1-136-10426-8 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য স্টাডি অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি, দামোদর ধর্মানন্দ কোসাম্বি রচিত, পপুলার প্রকাশন, ৩৫সি তাডিও রোড, পপুলার প্রেস বিল্ডিং, মুম্বাই-৪০০০৩৪, প্রথম সংস্করণ: ১৯৫৬, সংশোধিত দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৯৭৫।
  • অতুল সুর, বাংলার সামাজিক ইতিহাস (বাঙালি), কলকাতা, ১৯৭৬
  • এনএন ভট্টাচার্য, ভারতীয় জাতি বর্ণ প্রথমা (বাঙালি), কলকাতা, ১৯৮৭
  • আরসি মজুমদার, বঙ্গীয় কুলশাস্ত্র (বাংলা), দ্বিতীয় সংস্করণ, কলকাতা, ১৯৮৯।