বাই (ক্রিকেট)
ক্রিকেট খেলায়, বাই হল ব্যাটিং দল কর্তৃক এক ধরনের অতিরিক্ত রান যেখানে বলটি ব্যাট কিংবা ব্যাটসম্যানের শরীরে আঘাত প্রাপ্ত না হয়েই স্কোর হয়ে থাকে। [১]
বাই স্কোর করা
সম্পাদনাসাধারণত, যদি বলটি ব্যাটসম্যান কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত না হয়ে চলে যায় তাহলে উইকেট রক্ষক তা ধরেন। আর এর ফলেই সাধারণত ব্যাটসম্যানরা রান স্কোর করতে বাধাপ্রাপ্ত হন কারণ এমনটা করতে গেলে ব্যাটসম্যানদের স্টাম্পড হওয়া কিংবা উইকেট কিপারের দ্বারা রান আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই তারা রান পূর্ণ করতেও পারে না। তবে উইকেট রক্ষক যদি অপটু হন কিংবা বা বল মিস করেন তবে ব্যাটসম্যানরা নিরাপদে রান করতে পারেন। এই রানগুলোই বাই হিসাবে স্কোর করা হয়: এগুলো দলের মোট রানের সাথে যোগ করা হয়, তবে কোনও একক ব্যাটসম্যান দ্বারা কৃত রানসংখ্যায় এটিকে গণ্য করা হয়না।
উইকেট রক্ষক যদি বলটি মিস করেন এবং এর ফলে বলটি বাউন্ডারি পর্যন্ত সমস্ত পথ অতিক্রম করে তবে ব্যাটিং দলটি চারটি বাই করে স্কোর করেছে বলে গণ্য হয়। ঠিক যেন ব্যাটসম্যান এক বলে চার মেরেছেন। কার্যত কিছু অসম্ভব ক্ষেত্রে যদি কোনো বাউন্সারের বল বাউন্স করার পর এত উঁচুতে উঠে যেটি কিনা মাটিতে স্পর্শ না করেই সরাসরি সীমানার ওপারে চলে যায় সেক্ষেত্রেও বাই রান ৪ ঘোষণা করা হয়। কেউ বাই রানে ছয় রান স্কোর করতে পারে না। লেগ বাই, ওয়াইড বা নো-বলেও নয়। একটি বাউন্ডারি সিক্স কেবল তখনই সম্ভব যখন বলটি ব্যাটসম্যানের ব্যাট কিংবা হাত অথবা গ্লাভসে স্পর্শ করে থাকে ।
যদি বলটি ওয়াইড হয় , তবে কোনও অতিরিক্ত রানকে ওয়াইড হিসাবেই স্কোর করা হয়।
যেখানে ওয়াইড এবং নো-বলকে বোলারের ত্রুটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, এবং কোনও বোলারের রেকর্ডে নেতিবাচক পরিসংখ্যান হিসাবে গণ্য করা হয়, সেখানে বাইসমূহকে উইকেট-কিপারের দোষ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং উইকেট-কিপারের রেকর্ডে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে কিছু কিছু সময় খেলার অবস্থাই বাই রানের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যেখানে উইকেট কিপারের সামর্থ্য - ইচ্ছেমত ফাস্ট বোলিং, অসমান পিচ কিংবা কিপারের সরাসরি স্টাম্পের পিছনে থাকা বা না থাকা ইত্যাদির কোনো প্রভাব থাকে না।
বাই এর দৃষ্টান্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে তুলনামূলকভাবে বিরল, আর থাকলেও তা স্কোরে খুব সামান্যই প্রভাব ফেলে। এর কারণ বলটিকে মারাই থাকে ব্যাটসম্যানের মূল লক্ষ্য। এগুলো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনেক বেশি লক্ষণীয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১০-১১ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট সিরিজে পাঁচটি ম্যাচে ২৫৮ টি রান অতিরিক্ত ছিল, যার মধ্যে ৭৬ টি বাই ছিল (অতিরিক্ত রানের ২৯.৪%)। একই পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাতটি ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২ ২৬২ টি অতিরিক্ত ছিল, যার মধ্যে মাত্র ১০ টিই ছিল বাই (অতিরিক্ত রানের ৩.৮%)। [২]
উইকেট-রক্ষক বলটি ধরতে সক্ষম হলে সাধারণত ব্যাটসম্যানরা কখনই বাই রান নেয়ার চেষ্টা করেন না। তবে , কোনও খেলা শেষে পরিস্থিতিতে যখন ব্যাটিং দলকে যে করেই হোক জয় পাওয়ার জন্য দ্রুত রান করতে হয়, ব্যাটসম্যানরা আউট হবার নেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারে এবং আশা করে যে উইকেট-রক্ষক বলটি এলোমেলো ভাবে নিক্ষেপ করবেন কিংবা ব্যাটসম্যান রান আউট করতে বলটি ঠিকভাবে ছুঁড়তে অক্ষম হবেন। এর স্বাভাবিক পরিণাম কোনও ব্যাটসম্যানের রান আউট হয়ে যাওয়া। তবে কখনও কখনও এই কৌশলটি কিছু ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ম্যাচসমূহে দলকে বাইয়ের মাধ্যমেই জিতিয়ে দেয়।
স্কোরের প্রতীক
সম্পাদনাএকক বাইয়ের জন্য প্রচলিত প্রতীক হল ভূমিতে অনুভূমিক প্রান্ত এবং শীর্ষে একটি বিন্দু বিশিষ্ট একটি ত্রিভুজ। যদি একাধিক বাই স্কোর করা হয় তবে অঙ্কিত সংখ্যাটি ত্রিভুজের মধ্যে লেখা হয়ে থাকে । লেখার ক্ষেত্রে সংখ্যাটি নিচে লিখে তার চারপাশে ত্রিভুজটি আঁকানো আরও সহজ।
রেকর্ডসমূহ
সম্পাদনাটেস্ট উইকেট রক্ষক যিনি টেস্টে সর্বনিম্ন বাই মঞ্জুর করেছেন তাদের মধ্যে (যারা দশটি টেস্ট বা তার বেশি টেস্ট খেলেছেন ) ডেনিস লিন্ডসে, ১৫ টি টেস্টে ২০ টি বাই দিয়েছেন যেখানে তিনি উইকেটও রেখেছিলেন। এক্ষেত্রে সেরা উইকেট রক্ষকদের বেশিরভাগই টেস্টে গড়ে প্রায় ৩ বা ৪টি বাই দিয়ে থাকেন। [৩] লিন্ডসে তার শেষ চারটি টেস্ট ম্যাচে মোটেও কোনো বাই দেননি।
আম্পায়ারের সংকেত
সম্পাদনাআম্পায়ার তার বাহুটিকে একটি উল্লম্ব অবস্থানে উঠিয়ে বাই রান এর সংকেত দেয়। এক্ষেত্রে তার হাতের খোলা তালু দেখে বাই এবং আউটের সংকেতের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়। [৪]
আরও দেখুন
সম্পাদনা- পাসড বল - ধরতে না পারা বলের জন্য বেসবল টার্ম
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Law 23 – Bye and leg bye"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ Statistics derived from score sheets in Wisden 2011, pp. 227-46, 862-69.
- ↑ S. Rajesh, 'The unsung heroes behind the stumps', http://www.espncricinfo.com/magazine/content/story/220524.html
- ↑ Signal for bye