বাইদা (প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র)

বেইদা (আরবি: البيضا আল-বাইদা, "সাদাটি"), কখনো বায়দা নামেও ডাকা হয়, হল জর্ডানের সিক আল-বারিদের নিকট পেত্রা থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একটি প্রধান নব্যপ্রস্তরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র।[১] এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[২]

বেইদা
البيضا
বাইদা (প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র) জর্ডান-এ অবস্থিত
বাইদা (প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র)
জর্ডানে অবস্থান
বিকল্প নামবাইদা
অবস্থানপেত্রার ৩ কিলোমিটার (১.৯ মা) উত্তরে
অঞ্চলজর্ডান
স্থানাঙ্ক৩০°২২′১৫″ উত্তর ৩৫°২৬′৫২″ পূর্ব / ৩০.৩৭০৭৮০° উত্তর ৩৫.৪৪৭৭৫৬° পূর্ব / 30.370780; 35.447756
ধরনতেল
ইতিহাস
সময়কালপিপিএনবি
সংস্কৃতিনাতুফীয়, নব্যপ্রস্তর, নাবতীয়
স্থান নোটসমূহ
খননের তারিখ১৯৫৭-১৯৮৩
প্রত্নতত্ত্ববিদডায়ানা কার্কব্রাইড,
ব্রায়ান বার্ড
অবস্থাধ্বংসাবশেষ
ব্যবস্থাপনাপেত্রা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ
জনসাধারণের প্রবেশাধিকারহ্যাঁ
ধরনসাংস্কৃতিক
মানকi, iii, iv
অন্তর্ভুক্তির তারিখ১৯৮৫ (৯ম অধিবেশন)
রেফারেন্স নং৩২৬
রাষ্ট্রীয় দলজর্ডান
অঞ্চলআরব রাষ্ট্র

খননের ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৫৭ সালে এই ক্ষেত্রটি প্রথম ডায়ানা কার্কব্রাইড এবং পরবর্তীতে ব্রায়ান বার্ড খনন করেন।[৩]

বসতি স্থাপনের পর্যায় সম্পাদনা

বসতি স্থাপনের তিনটি সময় নিশ্চিত করা হয়েছে: খ্রিস্টপূর্ব ১১শ সহস্রাব্দের নাতুফীয় যুগ,[৩][৪] খ্রিস্টপূর্ব ৭ম সহস্রাব্দের প্রাক-মৃৎশিল্প নিওলিথিক বি-এর (পিপিএনবি) একটি গ্রাম[৫][৬] এবং খ্রিস্টপূর্ব ১ম ও ২য় শতাব্দীর নাবাতীয় যুগ।[৭]

নাতুফীয় যুগ সম্পাদনা

নাতুফীয় বাইদাকে মৌসুমী শিবির হিসেবে প্রভেদ করা হয়েছে যা অনেকদিন ধরে বারবার দখল হয়েছিলো। চুলা ও রান্না করার স্থান থেকে পাথর যন্ত্রের প্রমান নির্দেশ করে যে এখানকার প্রাথমিক অধিবাসীরা শিকার সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত ছিল। এই দাবি স্থায়ী ভবন, সংরক্ষণাগার, কবরস্থান এবং বড় পাথরের সরঞ্জামের অভাব প্রমাণ করে।[৩]

নব্যপ্রস্তর যুগ সম্পাদনা

বাইদার নব্যপ্রস্তর পর্যায়কে ৭২০০ থেকে ৬৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সালের প্রাচীন গ্রাম হিসেবে নিশ্চিত করা গেছে। প্রাথমিক পিপিএনবি পর্যায়ে এই গ্রামের আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ৫০ থেকে ১১৫ জন।[৮] এই গ্রামবাসীরা পাথর যন্ত্র ব্যবহার করত এবং ভূগর্ভস্থ মেঝে সমেত বৃত্তাকার বাড়ির চারপাশে দেওয়াল নির্মাণ করত। এর দখলকারীরা প্রাথমিক গৃহপালিতকরণের সময় যবখাপলি ময়দা চাষ, ছাগল পালন ও বিভিন্ন প্রকারের পশু শিকার যেমন বন্য ছাগল, এবং ফলমূল সংগ্রহ করত।[৯] এলাকার এক স্থানে একটি কবর পাওয়া গিয়েছে যা ধর্মানুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হত বলে মনে করা হয়।[৯] প্রমান অনুসারে এটি আনুমানিক ৬৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আগুনে ধ্বংস হয়ে যায় এবং তারপর ভূমির উপর চতুর্ভুজাকৃতীর ঘর ও বিশেষায়িত কর্মশালা সহ এই গ্রাম পুননির্মাণ করা হয়। বাসস্থানের সোনালী সময়ে এর আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ১২৫ থেকে ২৩৫ জন।[৮] ৬৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে অজ্ঞাত কারণে গ্রামটি আবার পরিত্যক্ত হয়। এই অঞ্চলে কিছু উপাদান উদ্ধার করা গেছে যেগুলো দূরের অঞ্চলের যেমন আনাতোলীয় অবসিডিয়ান এবং লোহিত সাগরের মৌক্তিক। বৃত্তাকার থেকে চতুর্ভুজাকার ভবনে পরিবর্তন মানব সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ যা শহরগুলো উন্নয়নে অবদান রেখেছে।[৬][৯] এই স্থানের কয়েক গজ পূর্বে একটি কাঠামো পাওয়া গিয়েছে যাকে প্রাক-ইব্রাহিমীয় ধর্মের একটি মন্দির হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে যেখাবে নানা আচার অনুষ্ঠান সম্ভবত করা হত (কাঠামোর গঠন মন্দিরের মত হলেও সেখানে কোন খোদাই করা ছবির প্রমাণ বা নমুনা পাওয়া যায়নি)।

নাবাতীয় যুগ সম্পাদনা

প্রসিদ্ধ নাবাতীয় বসতি হিসেবে এই এলাকায় অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় যেমন কৃষিজ সোপানের চারপাশে প্রাচীরমালা নির্মাণ।[৩][১০]

সুরক্ষা এবং উন্নয়ন সম্পাদনা

সম্প্রতি জর্ডানের পুরাকীর্তি বিভাগ, পেত্রা বিভাগ ও পর্যটন অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, ইউএসএআইডি/জর্ডান পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্প ও কাউন্সিল ফর ব্রিটিশ রিসার্চ ইন দ্য লেভান্ট ২০১০ সালে বাইদাকে তুলে ধরা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রকল্প ঘোষণা করে। ১৮ মাস সময় নিয়ে একটি অনুবাদবিশিষ্ট উপস্থাপনা এবং নতুন দর্শনার্থী সুবিধার নকশা করার জন্য প্রস্তাব করা হয়।[১১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Negev, Avraham; Gibson, Shimon, সম্পাদকগণ (২০০১)। BeidhaArchaeological Encyclopedia of the Holy Land। New York and London: Continuum। পৃষ্ঠা 74। আইএসবিএন 0-8264-1316-1। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২১  (Snippet view).
  2. "Petra"UNESCO। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৫ 
  3. Brian F. Byrd (১৯৮৯)। The Natufian encampment at Beidha: late Pleistocene adaptation in the southern Levant। Jysk arkæologisk selskab। আইএসবিএন 978-87-7288-054-9 
  4. Brian Franklin Byrd (১৯৮৭)। Beidha and the Natufian: variability in Levantine settlement and subsistence। University Microfilms International। 
  5. Brian F. Byrd (২০০৫)। Early village life at Beidha, Jordan : neolithic spatial organization and vernacular architecture: the excavations of Mrs Diana Kirkbride-Helbæk। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-727013-4। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১১ 
  6. Diana Kirkbride (১৯৬৬)। Five seasons at the pre-pottery neolithic village of Beidha in Jordan 
  7. John F. Healey (১৯৯৩)। The Nabataean tomb inscriptions of Mada'in Salih। Oxford University Press on behalf of the University of Manchester। আইএসবিএন 978-0-19-922162-2 
  8. Shannon Birch-Chapman, Emma Jenkins, Fiona Coward & Mark Maltby (২০১৭)। "Estimating population size, density and dynamics of Pre-Pottery Neolithic villages in the central and southern Levant: an analysis of Beidha, southern Jordan"। Levant49: 1–23। ডিওআই:10.1080/00758914.2017.1287813  
  9. Moore, A.M.T. (১৯৭৮)। The Neolithic of the Levant। Oxford University, Unpublished PhD Thesis। পৃষ্ঠা 109–113, 243–256। 
  10. Watson E. Mills; Roger Aubrey Bullard (১৯৯০)। Mercer dictionary of the Bible। Mercer University Press। পৃষ্ঠা 641। আইএসবিএন 978-0-86554-373-7 
  11. Luck, Taylor., The Jordan Times - New project to promote Neolithic site of Beidha - 19 August 2010

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা