বাংলার লোকসম্প্রদায়

বাংলার লোকসম্প্রদায় বলতে বাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা অঞ্চলজুড়ে বিরাজমান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে বুঝানো হয়। বর্তমান কালেও এই অঞ্চলে বলরামী, বাউল, সাহেবি, করতা ভাজা, মতুয়া, জাগোমোহনী এবং ন্যায়দারের মতো লোকসম্প্রদায়ের দেখা মিলে।[১]

বলরামী সম্পাদনা

বলরামী সম্প্রদায় বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির নদিয়া জেলার মেহেরপুরে বলরাম হরি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল (বর্তমানে বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলা)।[২] এই সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, লোভ ও ইন্দ্রিয়পরায়ণতার ঊর্ধ্বে জীবন পবিত্র ও সরল। এই সম্প্রদায়ে প্রচারক, গুরু ও অবতার উপস্থিত নেই। অনুসারীদের কোনও সম্প্রদায় চিহ্ন বা নির্দিষ্ট পোশাক নেই।[৩] মুসলিম শিষ্যরা তাদের দেবতাকে হরি-আল্লাহ বলে ডাকে এবং হিন্দু শিষ্যরা হরি রাম শব্দটি ব্যবহার করে। বাংলাদেশের মেহেরপুর এবং নিশ্চিন্তপুর, ভারতের শবেনগর, পালিশিপারা, নাতনা, হাওলিয়া, আরশিনগর, নদীয়ার গরিবপুর, পুরুলিয়াতে দাইকিয়ারি, বাঁকুড়ার শালিনীগ্রাম ইত্যাদি কিছু জায়গায় এখনও বলরামদের পাওয়া যায়।

বাউল সম্পাদনা

বাউল বাংলার সর্বাধিক পরিচিত লোকসম্প্রদায়। বাউল সহজা ও সুফিবাদের মিশ্র উপাদানের একটি দল। বাউলদের একটি ঐতিহ্য রয়েছে যা সমকালীন ধর্মীয় এবং সঙ্গীত ঐতিহ্যের সমন্বয়ে তৈরি।[৪]

বাউল সম্প্রদায় বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং বারাক উপত্যকা নিয়ে গঠিত বাংলা অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে আছে। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক মানবতার মৌখিক ও অমূর্ত ঐতিহ্যের মাস্টারপিসের তালিকায় বাংলাদেশের বাউল ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। লালন শাহকে ইতিহাসের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ বাউল সাধু হিসাবে গণ্য করা হয়।[৫]

সাহেবধানী সম্পাদনা

সাহেবধানী সম্প্রদায় ধর্ম বা বর্ণে বিশ্বাস করে না। এই সম্প্রদায় একসাথে প্রার্থনায় বিশ্বাস করে। শিষ্যরা মুসলিম এবং হিন্দু উভয় ধর্মেরই হয়ে থাকে। এই সম্প্রদায়ের অনুসারীরা আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকদের দীনদয়াল, দীনবন্ধু বলে।[৬] নদীয়া জেলার বৃত্তিহুদা গ্রামে সাহেবানির উৎপত্তি। কুবির সরকার এবং জদুবিন্দু দুজন বিখ্যাত এবং বিখ্যাত সাহেবাধানী সাধু।[১]

মতুয়া সম্পাদনা

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বাংলাদেশে হরিচাঁদ ঠাকুর দ্বারা মতুয়া সম্প্রদায় উদ্ভূত হয়। এই সম্প্রদায়ের অনুসারীরা মূলত বাংলার তফসিলি জাতিগোষ্ঠী নমঃশূদ্র। তারা বৈষ্ণবী হিন্দুধর্ম এবং আত্ম-উপলব্ধিতে ("স্বয়ং-দীক্ষিতি") বিশ্বাস করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গও যথেষ্ট সংখ্যক মতুয়া পাওয়া যায়।[৭]

অন্যান্য সম্প্রদায়সমূহ সম্পাদনা

বাংলার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লোকসম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে:[৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Cakrabartī, Sudhīra (২০০২)। Gabhīra nirjana pathe (2. saṃskaraṇa সংস্করণ)। Kalakātā: Ānanda। আইএসবিএন 81-7756-266-5ওসিএলসি 54047438 
  2. MUKHERJEE, SUJATA (১৯৯৬)। "Popular Sects and Elite Culture in Nineteenth Century Bengal : Some Aspects of Interraction and Assimilation"Proceedings of the Indian History Congress57: 612–623। আইএসএসএন 2249-1937জেস্টোর 44133366 
  3. Bhattacharya, Jogendra Nath (১৮৯৬)। Hindu Castes and Sects: An Exposition of the Origin of the Hindu Caste System and the Bearing of the Sects Towards Each Other and Towards Other Religious Systems (ইংরেজি ভাষায়)। Thacker, Spink। 
  4. ওয়াকিল আহমদ (২০১২)। "লোকসম্প্রদায়"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  5. World and its peoples : Eastern and southern Asia.। New York: Marshall Cavendish। ২০০৮। আইএসবিএন 978-0-7614-7631-3ওসিএলসি 80020223 
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :1 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. Biśvāsa, Ratana (ডিসেম্বর ২০১০)। Namasudra movements in Bengal (1872-1947) : a case study of the transition from caste struggle to political identity (1st সংস্করণ)। Kolkata। আইএসবিএন 978-81-88006-19-9ওসিএলসি 932407935