বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ

বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ হ‌লো এক‌টি রাজ‌নৈ‌দিক এবং সামা‌জিক সংগঠন, যা বাংলা‌দে‌শের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কল‌্যা‌ণে কাজ ক‌রে।[১][২]

ই‌তিহাস সম্পাদনা

১৯৪৯ সালের ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানে বৌদ্ধদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অবস্থান সুদৃঢ় করতে চট্টগ্রাম বিভা‌গের পা‌টিয়া উপ‌জেলার লাখেরা অভয় বিহারে ‘পূর্ব পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ’ নামে এউ সংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী‌তে বাংলাদেশ স্বাধীন হ‌লে এর নাম প‌রিবর্তন ক‌রে রাখা হয় 'বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ'। এই সং‌ঘের প্রথম কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি ছি‌লেন শ্রীমৎ ধর্মদর্শী মহাথেরো এবং শ্রীমৎ বংগীশ ভিক্ষু ছি‌লেন সাধারণ সম্পাদক। সেসময় বিশিষ্ট বৌদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কয়েকজন সংঘের পৃষ্ঠপোষক হি‌সে‌বে মনোনীত হন এবং একটি ট্রাস্টি বোর্ডও গ‌ঠিত হয়। শুরু থে‌কেই এ সংঘ বৌদ্ধ ছাত্রছাত্রীদের জন্য উচ্চতর শিক্ষাক্ষেত্রে এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ, প্রাচীন বৌদ্ধ ঐতিহ্য উদ্ঘাটন ও সংরক্ষণ, বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন জাতীয় ছুটি ঘোষণাসহ অন্যান্য দাবি উত্থাপন ক‌রে এবং আন্দোলন ক‌রে। ১৯৫৪ সালে অনু‌ষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন‌ে সমতলীয় বৌদ্ধদের জন্য সংরক্ষিত একটি আসনে সংঘের সুধাংশু বিমল বড়ুয়া নির্বাচিত হন।[৩]

কার্যক্রম সম্পাদনা

১৯৬০ সালে সংঘের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার প্রতি‌ষ্ঠা করা হয় এবং সেখা‌নে সংঘের সদর দপ্তর স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীকালে এই বিহারটি কেন্দ্র করে ধর্মরাজিক অনাথালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, বোধিঅঙ্গন ও আন্তর্জাতিক মানের একটি উপাসনালয় স্থাপন করা হয়। ১৯৬২ সালে এই বিহা‌রে থাইল্যান্ডের ভূমিবল অতুল্যতেজ এবং রাণী সিরিকিতকে সংঘের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। এর সংবর্ধনার মাধ্যমে থাইল্যান্ডবাংলাদেশের মধ্যকার মৈত্রী সুদৃঢ় হয়। ১৯৬৩ সালে সংঘের তৎকালীন সভাপতি বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরোর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল চীন সফরে যায় এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সা‌থে সাক্ষাৎ করে অতীশ দীপঙ্করের দেহভস্ম বাংলাদেশে আনা এবং সংরক্ষণের প্রস্তাব দেন, যা ১৯৭৮ সালে কার্যকর করা হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে বৌদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ এবং বিকাশে এই সংঘ বি‌ভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তার ম‌ধ্যে ১৯৮৩ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের সহস্রতম জন্মবার্ষিকী পালন এবং ১৯৮৭ সালে ‘পাহাড়পুর বৌদ্ধ সভ্যতা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন উল্লেখযোগ্য। এতে এতে ইউরোপ আমেরিকাসহ অ‌নেক রাষ্ট্রের প্রতি‌নি‌ধিগণ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

এই সংঘ ১৯৮৫ সাল থেকে নিয়মিতভাবে বার্ষিক শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আ‌য়োজন ক‌রে আস‌ছে এবং ১৯৫৬ সাল থেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক দ্বিভাষিক মুখপত্র কৃষ্টি নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে আস‌ছে। সংঘের চট্টগ্রাম শাখা থেকে প্রকাশ করা হচ্ছে চৈত্যগ্রাম নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা।

সংঘ‌টি ভারতের বুদ্ধগয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পক্ষে ‘বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করে, যা সংঘ‌টির এক‌টি অন্যতম কৃতিত্ব।[৩] ১৯৯৯ সালে এই বিহারে প্রথমবরের মতো কঠিন চীবর দান উদ্‌যাপন করা হয়। সংঘ‌টির সভাপ‌তি এক‌টি বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের জন‌্য আ‌বেদন ক‌রেছেন, যার প্রস্তা‌বিত নাম হ‌চ্ছে 'সংঘনায়ক শ্রাদমন্ডো মাহা‌থে‌রো'।[৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ‌্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Lewis, Craig। "Bangladesh's Foremost Buddhist Leader Suddhananda Mahathero Dies Aged 87"buddhistdoor.net। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২০ 
  2. "Buddha Purnima celebrated"New Age (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২০ 
  3. সুকোমল বড়ুয়া (২০১২)। "বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. "Govt approves two new private universities"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

বাংলাপিডিয়ায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ