বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সংক্ষেপে বিকেএসপি) বাংলাদেশের একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষাকেন্দ্র। ঢাকার অদূরে সাভারের জিরানিতে এ প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। তবে সাভারের প্রধান কেন্দ্র ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, কক্সবাজার, রাজশাহী ওদিনাজপুরে রয়েছে বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এছাড়া ময়মনসিংহে আরও একটি কেন্দ্র সম্প্রসারণের অপেক্ষায় রয়েছে। ৩০ জন ফুটবল ও ৬০ জন হকি খেলোয়াড় নিয়ে ১৪ এপ্রিল ১৯৮৬ যাত্রা শুরু করে বিকেএসপি। বিকেএসপির মূল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত। তবে স্নাতক (পাস) ও বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রিতেও কিছু শিক্ষাথীর ভর্তি করানো হয়।[১]
সংক্ষেপে | বিকেএসপি |
---|---|
গঠিত | ১৯৮৬ |
সদরদপ্তর | সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ |
যে অঞ্চলে কাজ করে | বাংলাদেশ |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা |
মহাপরিচালক | ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন |
ওয়েবসাইট | bksp |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৭৪ সালে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআইএস (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালে বিআইএস বাংলাদেশ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিকেএসপি’ নাম ধারণ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্বে থাকা মন্ত্রীকে প্রধান করে ১০ সদস্যের বোর্ড দ্বারা এটা পরিচালিত হয়। সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এই প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক, একজন কর্নেল পরিচালক প্রশিক্ষণ এবং একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন[২]। বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার সাদাত আবু মোঃ ফুয়াদ ডিজি এবং লেঃ কর্নেল মোঃ ইকবাল হোসেন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। [৩]
বিভাগসমূহ
সম্পাদনাবাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২১টি ক্রীড়া বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। বিভাগগুলো হলো ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, শ্যুটিং, আর্চারি, জুডো, উশু, তায়কোয়ান্দো, অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল, সাঁতার, জিমন্যাস্টিকস, বক্সিং, টেনিস, ভলিবল, কারাতে , টেবিল টেনিস, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভারোত্তলন ও স্কোয়াশ।
ভর্তি যোগ্যতা
সম্পাদনাবিকেএসপিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় সপ্তম শ্রেণিতে। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ রয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, শ্যুটিং, আর্চারি, জুডো, উশু, তায়কোয়ান্দো ও অ্যাথলেটিকসে। এ ছাড়া চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয় সাঁতার, জিমন্যাস্টিকস, বক্সিং ও টেনিসে। শুধু বাস্কেটবল ও ভলিবল বিভাগে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। তবে বিশেষ ক্রীড়া যোগ্যতাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে বয়স ও উচ্চতা শিথিল করা হয়।[৪]
নির্বাচনপদ্ধতি
সম্পাদনাভর্তি ইচ্ছুকদের প্রথমে বাছাই করা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর তাদের নিয়ে সাত দিনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। আর সবশেষে নেওয়া হয় লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষার বিষয় হলো: বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। মানবণ্টন করলে দেখা যায়– শতকরা হিসাবে ৭০ ভাগ শারীরিক যোগ্যতা ও ক্রীড়া নৈপুণ্য, ১০ ভাগ ক্রীড়াবিজ্ঞান-সংক্রান্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা, আর বাকি ২০ ভাগ লিখিত পরীক্ষা।[৫]
স্নাতক ও ডিপ্লোমা কোর্স
সম্পাদনাজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় প্রতিবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী স্নাতক (পাস) এবং ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে ১০ মাসের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।[৬] ক্রীড়াবিজ্ঞানের চারটি বিষয়ের ওপর এই ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এগুলো হলো এক্সারসাইজ ফিজিওলজি, স্পোর্টস সাইকোলজি, স্পোর্টস বায়োমেকানিকস ও সায়েন্স অব স্পোর্টস ট্রেনিং। ভর্তির যোগ্যতা চাওয়া হয় যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি। তবে এক্সারসাইজ ফিজিওলজি ও স্পোর্টস বায়োমেকানিকস বিষয়ে ভর্তির জন্য বিজ্ঞানে স্নাতক হতে হবে। আর স্পোর্টস সাইকোলজি বিষয়ে ভর্তি হতে চাইলে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। সায়েন্স অব স্পোর্টস ট্রেনিং বিষয়ে ভর্তি হতে চাইলে আবেদনকারীকে বিপিএড বা এমপিএড ডিগ্রিধারী হতে হবে।[৭]
প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম
সম্পাদনাবিকেএসপি’র আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো দেশজুড়ে প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম পরিচালনা। এ লক্ষ্যে ট্যালেন্ট হান্ট কার্যক্রম পরিচালনা করে বিকেএসপি। এর মাধ্যমে সারাদেশ থেকে খুঁজে বের করা হয় সেরা খেলোয়াড়দের। এসব খেলোয়াড়দের আবার বিভিন্ন মেয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়।
খ্যতিমান শিক্ষার্থী
সম্পাদনা- নাইমুর রহমান দুর্জয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অভিষেক টেস্ট অধিনায়ক।
- রকিবুল হাসান, ক্রিকেটার,বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- আসিফ হোসেন খান , কমনওয়েলথ গেম্স এ সোনাজয়ী শুটার
- সাকিব আল হাসান, ক্রিকেটার,বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- মুশফিকুর রহিম, ক্রিকেটার,বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- আব্দুর রাজ্জাক, ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- সৌম্য সরকার, ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- মুমিনুল হক, ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- নাসির হোসেন, ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- নাঈম ইসলাম, ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- সোহরাওয়াদী শুভ, ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- লিটন দাস, ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
- মামুনুল ইসলাম,ফুটবলার,বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল
- জাহিদ হাসান এমিলি, ফুটবলার,বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল
- হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, ফুটবলার,বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল
- ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, ফুটবলার,বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল
- রিসালাত আল-রিফাত, ভলিবল খেলোয়াড়, বাংলাদেশ ভলিবল জাতীয় দল
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "::. Bangladesh Krira Shikkha Protishtan .::"। bksp-bd.org। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান"। www.bksp.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান"। www.bksp.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "গন্তব্য এখন বিকেএসপি"। প্রথম আলো। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। Archived from the original on ৯ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ "বিকেএসপিতে ৩ বিষয়ে অনার্স, পড়াশোনার সঙ্গে খেলোয়াড় হতে"। দৈনিক প্রথম আলো। ২২ জুন ২০২৪।
- ↑ "ক্রীড়াবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা"। প্রথম আলো। ২৪ মে ২০১৪।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- উইকিমিডিয়া কমন্সে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।