বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ
বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ এবং র্যালী করা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ঘিরে প্রতিবাদ র্যালী করা হয়। এসব কর্মসূচী থেকে বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া চার ব্লগারকে জেল থেকে মুক্ত করার দাবি জানানো হয়। এই চারজন ব্লগার ব্লাসফেমীর অভিযোগে বাংলাদেশের জেলে বন্দি আছেন।২০১৩ সালের ২৫শে এপ্রিল থেকে ২রা মে সেন্টার ফর ইনকোয়ারি (CFI), আমেরিকান এথিস্ট, এবং ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড এথিক্যাল ইউনিয়ন এর উদ্যোগে এই প্রতিবাদ র্যালীর আয়োজন করা হয়।[১][২] এরকম প্রতিবাদ কর্মসূচি ঢাকা, নিউ ইয়র্ক সিটি,ওয়াশিংটন, ডি.সি., লন্ডনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়।[২] জেলে থাকা ব্লগারদের প্রতি সেক্যুলাররা তাদের একাত্মতা ঘোষোনা করে। ব্লগাররা ধর্ম নিয়ে তাদের মনের কথা প্রকাশ করেছিলো। যারা বাক স্বাধীনতার চর্চা করতো তাদের কাছে এই আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তারা আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ঐসব ব্লগারদের মুক্ত করার জন্য তদবীর করতে থাকে।[৩]
পটভূমি
সম্পাদনাএই আন্দোলনের পটভূমি শুরু হয় ২০১৩ সালে ঢাকার শাহবাগে। শাহবাগে তখন আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে আন্দোলন চলছিলো, যিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। এই আন্দোলন চলাকালে আহমেদ রাজীব হায়দার নামক একজন ব্লগার খুন হন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন কড়া সমালোচক ছিলেন।[৪] ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শাহ আহমদ শফী শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন শীর্ষক খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। ২০১৩ সালের ৭ই মার্চ "নাস্তিক নবী" হিসেবে পরিচিত আরো একজন লেখক নিহত হন। তিনি একইসাথে একজন লেখক, ব্লগার এবং অনলাইন কর্মী ছিলেন।[৫]
হেফাজতে ইসলামের মত কিছু মুসলিম সংগঠন ব্লগারদের ইসলাম বিরোধী আখ্যা দেয় এবং যারা ইসলাম ধর্ম অবমাননা করেছে তাদের শাস্তির দাবী জানায়। শাহবাগে যারা আন্দোলন করছিলো তাদের এরা নাস্তিক হিসেবে ঘোষণা করে।[৬]
এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একটি কমিটি গঠন করে যারা বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াতে ধর্ম অবমাননা হচ্ছে কি না তার ওপর নজর রাখে। তারা কিছু ব্লগ এবং ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়।[৭] এরপর ব্লগে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে চারজন ব্লগারকে সরকার গ্রেফতার করে।[৮] তারা হলেনঃ রাসেল পারভেজ, মশিউর রহমান, সুব্রত অধিকারী শুভ এবং আসিফ মহিউদ্দীন। রাসেল পারভেজ, তিনি একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৩ সালের পহেলা এপ্রিল নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন মশিউর রহমান। একই দিনে সুব্রত অধিকারী শুভ কে গ্রেফতার করা হয়, তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র।[৯] সবশেষে ৩রা এপ্রিল আসিফ মহিউদ্দীন তার বোনের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন।[১০]
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর পক্ষ থেকে সামহোয়্যার ইন ব্লগ কে বাধ্য করা হয় তারা যেন আসিফ মহিউদ্দীনের লেখা ব্লগ অপসারন করে নেয়।[১১] বর্তমানে সে ব্লগে লেখা আছে, "blog has been withdrawn or cancelled for violating terms and conditions" (transl.)। হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ এই পদক্ষেপের নিন্দা জানায়।[১২] একই সাথে নিন্দা জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, দ্য সেন্টার ফর ইনকোয়ারি, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস সহ আরো অনেক সংগঠন।[২] এভাবে ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিগোচর হয় এবং তারা বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ শুরু করেন।
ফলশ্রতিতে ১২ই মে পারভেজ এবং ১২ই জুন শুভ জামিনে মুক্তি পান। তিনমাস জেলে থাকার পর আসিফ ২৭শে জুন মুক্তি পান।[১৩]
প্রতিবাদ
সম্পাদনাসিএফআই (CFI) এর পরিচালক মাইকেল দে ডোরা বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচী পরিচালিত করেন।[১] একজন ইরানি কর্মী মারইয়াম নামাজী ২৫শে এপ্রিলকে বাংলাদেশী ব্লগারদের রক্ষা করার আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।[১৪] অনেক লেখক,কর্মী বুদ্ধিজীবী প্রকাশ্যে তাদের প্রতিবাদ বাণী প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে আছেন তসলিমা নাসরিন, হেমন্ত মেহতা, পিজে মেয়ার্স।[২] এভাবে সারা পৃথিবীতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশকে বাক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আরো বাস্তবিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহবান জানায়।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Atheists Rally Around Jailed Bangladeshi Bloggers"। huffingtonpost.com। ২০১৩-০৪-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০৬।
- ↑ ক খ গ ঘ Avijit Roy (২০১৩-০৫-০৮)। "The Struggle of Bangladeshi Bloggers"। Skeptic। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০৬।
- ↑ Spory, Karyn (২৬ এপ্রিল ২০১৩)। "Bloggers' imprisonment sparks free-speech rallies"। Columbia Daily Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Shahbagh protest to go relentless"। bdnews24.com। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "Blogger Saniur files case"। banglanews24.com। ২০১৩-০৩-০৯। ২০১৪-০২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৮।
- ↑ "Hardline Muslims rally in Bangladesh amid shutdown"। Associated Press। ৬ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "100,000 Bangladeshi Protesters Rallied To Demand The Execution of Atheist Bloggers"। ৬ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "Blogger Asif Mouhiuddin arrested over "blasphemous" blog posts"। Reporters without Borders। ৩ এপ্রিল ২০১৩। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Four Bangladeshi bloggers arrested for "blasphemous" posts"। ifex। ৪ এপ্রিল ২০১৩। ৯ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "Blogger Asif arrested"। Daily Star (Bangladesh)। ৪ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "Bangladesh gags award-winning blogger"। ২৫ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "Bangladesh: Crackdown on Bloggers, Editors Escalates"। Human Rights Watch। ১৫ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "4 bloggers charged"। bdnews24.com। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Speckhardt, Roy। "April 25 is International Day to defend atheist bloggers in Bangladesh"। Humanist Network News। ৯ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৪।