বাংলাদেশে মঞ্চনাটক

(বাংলাদেশে থিয়েটার থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বাংলাদেশী মঞ্চনাটক খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে সংস্কৃত নাটক থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। গুপ্ত বংশ কর্তৃক বঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রাচীন বাংলা সংস্কৃতিতে উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে এবং নাট্যচর্চার প্রসার ঘটে। পরবর্তীতে আদি বাংলা পল্লী সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়ে বাংলা মঞ্চনাটকে নিজস্ব ধারা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে সংস্কৃত মঞ্চনাটক ছাড়াও বাংলা মঞ্চনাটকে ইউরোপীয় মঞ্চনাটক ও পল্লী মঞ্চনাটকের প্রভাব বিদ্যমান।

সংস্কৃত মঞ্চনাটক সম্পাদনা

গুপ্ত সাম্রাজ্য বঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত হলে উত্তরভারতীয় আর্য সংস্কৃতি প্রাচীন বাংলা সংস্কৃতির সাথে মিশে যায়। সেসময় গ্রামীণ সংস্কৃতির আদলে সংস্কৃত নাটকের চর্চা শুরু হয়। স্থানীয় মানুষদের নানামুখী কর্মকাণ্ড বেশ কিছু শহরাঞ্চলের গোড়াপত্তন ঘটায় যা প্রাচীন বাংলাদেশের শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। চন্দ্রগোমী রচিত চার অঙ্ক বিশিষ্ট লোকানন্দ নাটকটি সেসময়ের জনপ্রিয় নাটক হিসেবে বিবেচিত হয়।[১]

৮ম শতাব্দীতে আর্য সংস্কৃতির সঙ্গে প্রাচীন বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সমন্বয় ঘটে। এই সময়কালে, ভাস্করবর্মন, হর্ষবর্ধন, ললিতাদিত্যের আনুকূল্যে এই অঞ্চলসমূহে নাট্যচর্চা আরও বিস্তৃত হয়। কাশ্মীরি কবি কল্যাণের মতে, সে সময় পুন্ড্রবর্ধনে কমলা নামে এক বিখ্যাত নর্তকী ছিলেন। পরবর্তীতে পাল শাসনামলে বিক্রমপুর বিহার নাট্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সেন শাসনামলে এ ধারা অব্যাহত থাকলেও মুসলমান শাসনামলে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে।[২]

সংস্কৃত মঞ্চনাটক ১৩ শতাব্দীতে মুসলিম শাসনের আগমনের ফলে অন্তরায়ের সম্মুখীন হয়। এই সময়ে মূলত কিছু হিন্দু সামন্ত প্রভুদের দ্বারা সমর্থিত কয়েকটি মঞ্চনাটক কার্যক্রমের ইতিহাস পাওয়া যায়। ভুলুয়ার লক্ষ্মণমাণিক্য এই সময়ের সংস্কৃত মঞ্চনাটকের একজন মহান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[৩]

পল্লী মঞ্চনাটক সম্পাদনা

পল্লী মঞ্চনাটক বলতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সৃষ্ট সকল ধরনের মঞ্চনাটককে বোঝায়। পল্লী মঞ্চনাটক সরাসরি স্থানীয় মানুষদের দ্বারা প্রয়োজনের তাগিদে সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটা সংস্কৃত নাটকের মৌলিক কাঠামো পুরোপুরি অনুসরণ করেনি। লোকজ মঞ্চনাটকে, কলাকুশলীসহ অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, সঙ্গীতজ্ঞ, এবং পুতুল (পুরুষ ও মহিলা উভয়) অন্তর্ভুক্ত। এখানে পরিবেশনা কেবল সংলাপ বা বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ছন্দ, কাব্য, সঙ্গীত, নৃত্য প্রভৃতি। বাংলাদেশের পল্লীনাট্য বর্ণনাত্মক, গীতি-নৃত্যমূলক, অধি-ব্যক্তিক, পুতুলনাট্য, যাত্রা, প্রভৃতি ধরনের হয়ে থাকে।[৪]

বর্ণনাত্মক নাট্যরূপ সম্পাদনা

বর্ণনাত্মক মঞ্চনাটকে বর্ণনাকারী বা গায়েন বিভিন্ন চরিত্র উপস্থাপনার মাধ্যমে নামপুরুষে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। এসময় তিনি আংশিক গদ্য, আংশিক ছন্দ, আংশিক গানে তার গল্প উপস্থাপন করেন। কখনও কখনও গায়েন কোরাস শিল্পী (গায়েন) বা বাদকদের (মৃদঙ্গ ও মন্দিরা সহযোগে) সাহায্যও নিয়ে থাকেন। গায়েন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একটি ঝাড়ু বহন করেন এবং মাঝে মাঝে গাওয়ার সাথে নাচও করেন। কখনও কখনও কলাকুশলীগণ কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে চরিত্রায়ণ ফুটিয়ে তোলেন। কখনও তিনি তার মূল পোশাক (গামছা, উত্তরীয় ইত্যাদি) দিয়ে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন উপকরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন।[৫]

গীতি-নৃত্যমূলক নাট্যরূপ সম্পাদনা

একটি গীতি-নৃত্যমূলক নাট্যরূপ গায়ক এবং সঙ্গীতশিল্পীদের একটি দলের সঙ্গীত পরিবেশনায় নাচ দ্বারা চিহ্নিত হয় এবং কুশীলবদের চরিত্রায়ন দ্বারা মঞ্চস্থ হয়।[৬]

অধি-ব্যক্তিক প্রদর্শনী সম্পাদনা

গম্ভীরা উৎসবের মুখোশধারী নাচ মূলত কোচ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলে বিবেচিত। ৯ম শতাব্দীতে বাংলাদেশের তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম সম্প্রদায়ের অনুসারীরা অনুষ্ঠানটি গ্রহণ করে নিজস্ব রূপ তৈরি করে যা Astamatrika নৃত্য, Mahakali Pyayakhan, দেবী Pyayakhan (কাঠমান্ডু, নেপাল) ও তিব্বতীয় বৌদ্ধ ছদ্মবেশী নাচের অনুরূপ ছিল। এইসব নাচ সাধারণত তিব্বতীয় ও নেপালি ধর্মীয় উৎসবের সময় বৌদ্ধ মঠে অনুষ্ঠিত হতো। এছাড়া এই অনুষ্ঠানগুলো বছর শেষে চৈত্রসংক্রান্তিতে এবং শোভাযাত্রা শেষের অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।[৭]

১২ শতাব্দীর শেষে, যখন বাংলাদেশের তান্ত্রিক শৈবমত ক্ষয়িষ্ণু তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের সম্পৃক্ত ছিল, Mahakali Pyayakhan, দেবী Pyayakhan এবং অনুরূপ নাচের উৎকর্ষে বৌদ্ধ মুখোশধারী নাচ যুক্ত হয়েছিল। বাংলাদেশে তান্ত্রিক Saivite ছদ্মবেশী নাচ, যা কাঠমান্ডু উপত্যকার নাচের সদৃশ নয়, তা মুসলিম বিজয়ের কারণে জীর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমানে কেবল মুক্তনৃত্য, কালীনৃত্য, গম্ভীরা ও সঙ্গযাত্রা অবশিষ্ট রয়েছে।[৮]

পটচিত্র প্রদর্শনী সম্পাদনা

প্রাচীন বাংলাদেশে পটুয়া সঙ্গীত এর অস্তিত্ব দুটি সূত্র দ্বারা নিশ্চিত করা হয়ঃ হর্ষচরিতসাঁওতালদের পটচিত্র প্রদর্শনী। হর্ষচরিতে বাণভট্ট (হর্ষবর্ধনের রাজকবি) বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন হর্ষবর্ধন কর্তৃক পটপ্রদর্শনী অনুষ্ঠান দর্শনের কাহিনীর, যখন হর্ষবর্ধন তার ভ্রাতার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাজধানীতে ফিরে আসছিলেন। একজন অভিনেতা প্রেতলোকের রাজা যমের পটচিত্র দ্বারা এটি করছিলেন। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাঁওতাল লোকেরা তাদের মধ্যে প্রাণের উৎপত্তি প্রতিনিধিত্বমূলক এবং নশ্বর দুনিয়া থেকে মৃতলোকে উত্তরণমূলক পটচিত্র প্রদর্শনী করে থাকে। এগুলো বাংলাদেশে প্রাচীন পটুয়াগান উৎপত্তির ইতিহাস নির্দেশ করে। মধ্যযুগে রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, মনসা, চণ্ডীর পটপ্রদর্শনী অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ১৮শ শতাব্দীতে পটপ্রদর্শনী মুসলমানদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা পায়, যেমন গাজীর পট,যা আজও বাংলাদেশে দেখা যায়।[৯]

পুতুলনাট্য সম্পাদনা

বাংলাদেশে কখন পুতুল মঞ্চনাটক চালু করা হয়, তা সঠিক জানা যায় না। এর অস্তিত্বের প্রাচীনতম সাহিত্যিক নিদর্শন ইউসুফ জোলেখা। মুকুন্দ চক্রবর্তীর চন্ডীমঙ্গল (১৫৫৫-৫৬) এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত (১৫৬০-৮০) স্পষ্টভাবে এই সময়কালে পুতুল মঞ্চনাটক অস্তিত্ব নির্দেশ করে। পুতুলনাচে এক বা একাধিক ব্যক্তি প্রকাশ্যে বা নেপথ্যে থেকে হাতের কুশলতায় মানুষরূপী বা প্রাণীরূপী পুতুলকে পরিচালনার মাধ্যমে নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। কোনো গল্প বা কাহিনী অবলম্বনে পুতুলগুলি দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়। ধারণা করা যায় যে এই কাহিনীসমূহ কৃষ্ণ, রাম, মনসা, চন্ডী ও চৈতন্য এর সাথে সম্পর্কিত। মজার ব্যাপার হল, বাংলাদেশে কোন ইসলামী আখ্যান পুতুল দ্বারা সম্পন্ন করা হয়নি। পুতুলনাচ আজও বাংলাদেশে প্রচলিত।[১০]

যাত্রাপালা সম্পাদনা

যাত্রাপালা অনুষ্ঠান বড় প্রসেনিয়াম মঞ্চে সঙ্গীত, গান এবং নাচ ব্যবহার দ্বারা মঞ্চস্থ করা হয়। যাত্রা শব্দটির অর্থ গমন করা। অতীতে কোনো স্থানে যাত্রা বা গমন উপলক্ষে যেসব উৎসব অনুষ্ঠিত হতো, তাই যাত্রাপালার রূপ ধারণ করে। দেবতার উৎসব উপলক্ষে নৃত্যগীতপূর্ণ শোভাযাত্রা বের করা হতো। রথযাত্রা এরূপ একটি উৎসব। যাত্রা প্রাচীন লোকসাহিত্যের একটি ক্রমবিবর্তিত রূপ। এটি দেশীয় মঞ্চনাটকের সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপ যা প্রকৃতপক্ষে জাতীয় নাট্যশালার সমার্থক দাবী করতে পারে।[১১]

ইউরোপীয় ভাবধারার মঞ্চনাটক সম্পাদনা

১৭৫৭ সাল থেকে ইংরেজি ঔপনিবেশবাদীদের গৃহীত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ ১৯ শতকের প্রথম দিকে বাঙালি রেনেসাঁর জন্ম দেয়। এসময় বাংলাদেশের সমাজ,সংস্কৃতি ও সাহিত্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। ১৭৯৫ খ্রিষ্টাব্দে গেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেদেফ কর্তৃক সর্বপ্রথম কলকাতায় "দ্য বেঙ্গলি মঞ্চনাটক" নামে একটি মঞ্চনাটক গড়ে ওঠে। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে প্রসন্নকুমার ঠাকুর হিন্দু মঞ্চনাটক প্রতিষ্ঠা করেন যা কোনো বাঙালি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম মঞ্চনাটক। এসময় বাংলা আধুনিক নাটকের জনক মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজি নাটক অবলম্বনে বেশ কিছু নাটক রচনা করেন। ফলে ইউরোপীয় প্রভাবে আধুনিক বাংলা নাটকের ভিত রচিত হয়। এছাড়া ঢাকা থেকে প্রকাশিত দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটকটি সেসময়ের সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উল্লেখযোগ্য নাটক হিসেবে পরিগণিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইউরোপীয় ভাবধারায় বাংলা নাটকের নিজস্ব রূপ প্রদান করেন। পরবর্তীতে গিরিশচন্দ্র ঘোষ বাংলা নাটকের এই আধুনিক রূপ গণমানুষের দ্বারে নিয়ে যান।[১২]

স্বাধীনতাপূর্ব মঞ্চনাটক সম্পাদনা

১৯৪৭ এর পূর্ব পর্যন্ত বাংলা নাট্যচর্চা ছিল ১৯ শতকের ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিপীঠ কলকাতাকেন্দ্রিক। দেশবিভাগের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় এবং ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হিসেবে পরিগণিত হয়। নতুন দেশের মঞ্চনাটক ধীরে ধীরে দুটো বিপরীতধর্মী শিবিরে মেরুকরণের দিকে ধাবিত হয়ঃ (ক)ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ এবং (খ)ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। ধর্মভিত্তিক প্রবণতা ঢাকার বাইরে শহরাঞ্চলে বেশি প্রভাবশালী ছিল। এ প্রবণতা ঐতিহাসিক নাটকের মাধ্যমে ইসলামের মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, বাংলা ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করার প্রয়াস পায়। আকবরউদ্দিন, ইবরাহীম খাঁ, আসকার ইবনে শাইখ এ ধারার অন্যতম পথিকৃৎ। দ্বিতীয় ধারাটি প্রধানত ঢাকা শহরে প্রভাবশালী ছিল এবং এই প্রবণতার নাট্যকারগণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ ধারার পথিকৃৎ হলেন নাট্যগুরু নুরুল মোমেন। তার পরে এই ধারায় যারা অবদান রাখেন, তারা হলেন শহীদুল্লাহ কায়সার, জসীম উদ্‌দীন, মুনীর চৌধুরী, শওকত ওসমান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর মঞ্চনাটক সম্পাদনা

বাংলাদেশে মঞ্চনাটক সত্যিকার অর্থে বিকাশ লাভ করে স্বাধীনতাত্তোর সময়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নতুন মঞ্চনাটক আন্দোলনের জন্ম দেয়। নবান্ন উত্তর কলকাতার গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের পর সারা দেশে অনেক অ-পেশাদার মঞ্চনাটক দল গঠন করা হয়। ঢাকা শহরে এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল থিয়েটার (ফেব্রুয়ারি ১৯৭২-এ প্রতিষ্ঠিত), নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় (১৯৬৮-এ প্রতিষ্ঠিত, প্রথম প্রদর্শনী আগস্ট ১৯৭২-এ), নাট্যচক্র (প্রতিষ্ঠিত আগস্ট ১৯৭২-এ), আরণ্যক নাট্যদল (১৯৭২-এ প্রতিষ্ঠিত), ঢাকা থিয়েটার (জুলাই ১৯৭৩-এ প্রতিষ্ঠিত), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুশীলন নাট্যদল (প্রতিষ্ঠাকাল-১৯৭৯), কণ্ঠশীলন (এপ্রিল ১৯৮৪ –এ প্রতিষ্ঠিত) এবং চট্টগ্রামের থিয়েটার '৭৩ (১৯৭৩-এ প্রতিষ্ঠিত), তির্যক (মে ১৯৭৪-এ প্রতিষ্ঠিত) এবং অরিন্দম (সেপ্টেম্বর ১৯৭৪-এ প্রতিষ্ঠিত)। এসময় জন্মলাভ করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, গ্রাম থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি। নাট্যকারদের একটি সম্পূর্ণ নতুন দল দেখা দেয়, যারা বাংলা মঞ্চনাটকের এই বিবর্তনকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন অনেকটা পথ। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ বাংলাদেশের মঞ্চনাটক বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। যাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন বাদল সরকার, সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হক, মামুনুর রশীদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রামেন্দু মজুমদার,এস এম সোলায়মান, রবিউল আলম, মান্নান হীরা, আব্দুল হালিম আজিজ, মাসুম রেজা, সায়মন যাকারিয়া, মীর বরকত,গোলাম সারোয়ার প্রমুখ।

গুরুত্ব সম্পাদনা

ইতিহাস ও বাংলাদেশীদের প্রতিদিনের জীবনে মঞ্চনাটক সংস্কৃতির নানা তাৎপর্য বিদ্যমান। মঞ্চনাটক পারফরমেন্স বাংলাদেশে ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার আন্দোলনকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। এছাড়া বাংলা ভাষা আন্দোলনে এটি গভীর প্রভাব বিস্তার করে। পূর্ব পাকিস্তান আমলে ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুনীর চৌধুরী রচিত কবর নাটকটি ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি বিখ্যাত নাটক। মঞ্চনাটক পারফরমেন্স বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। বর্তমানে অনেক এনজিও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক সামাজিক সমস্যার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে মঞ্চনাটক ব্যবহার করছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bharucha 1993, পৃ. 3।
  2. Bharucha 1993, পৃ. 5।
  3. Bharucha 1993, পৃ. 6।
  4. Bharucha 1993, পৃ. 7।
  5. Ahmed 2000, পৃ. 4।
  6. Ahmed 2000, পৃ. 21।
  7. Ahmed 2000, পৃ. 52।
  8. Ahmed 2000, পৃ. 56।
  9. Ahmed 2000, পৃ. 241।
  10. http://bangla.samakal.net/2016/12/22/257341[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. Ahmed 2000, পৃ. 184।
  12. Bharucha 1993, পৃ. 63।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা