বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প
বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্প দেশটির ক্রমশ উন্নয়নশীল অর্থনীতির একমাত্র বর্ধনশীল উৎস হিসেবে অবদান রাখছে। [১] বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস। ২০০২ সালে বাংলাদেশ হতে রপ্তানি করা পন্যদ্রব্যের ৭৭ শতাংশই ছিল বস্ত্র, পোশাক ও তৈরি পোশাক শিল্প। [২]
১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৬.২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২১ সালে ৩৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নিত হয়। এই জিডিপির ৪৬ বিলিয়ন ডলার আএস রপ্তানি থেকে যার ৮২ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক রপ্তানি। [৩] ২০২০ সাল পর্যন্ত চীনের পর বাংলাদেশ সারা বিশ্বে বস্ত্র উৎপাদনে ২য় অবস্থান বজায় রেখেছে। [৪] বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে পশ্চিমা ফাস্ট ফ্যাশন ব্র্যান্ডসমূহের ২য় সর্ববৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক। বাংলাদেশ পশ্চিমে রপ্তানি করা কার্যাদেশের ৬০ শতাংশ পায় ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের কাছ থেকে, ৩০ শতাংশ পায় আমেরিকান ক্রেতাদের থেকে এবং বাকী ১০ শতাংশ পায় অন্যান্য ক্রেতাদের কাছ থেকে। [৫] বাংলাদেশে মাত্র ৫ শতাংশ বস্ত্র কারখান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানায় চললেও উৎপাদনের অধিকাংশ কাজই স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। [৬] ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তৈরি পোশাক শিল্প ২৮.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে, যা ছিল মোট রপ্তানি আয়ের ৮০.৭ শতাংশ এবং জিডিপির ১২.৩৬ শতাংশ। এসময় বাংলাদেশের এই শিল্পটি পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। [৭] ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যায় শীর্ষস্থান অর্জন করে। [৮][৯]
বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প ব্যবসা বনাম সহযোগিতা বিতর্কের একটি উপলক্ষ্য হয়ে আছে। উন্মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে উৎসাহিত করা বৈদেশিক সাহায্যের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর বলে ধরা হয়। টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লোথিং (এটিসি), এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) এবং বৈশ্বিক পোশাক বাজারে মার্কিন ২০০৯ ট্যারিফ রিলিফ এসিসটেন্সের মতো কোটা সুবিধা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের উপকৃত করেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪৫ শতাংশই বস্ত্র শিল্পের অধীনে হলেও মোট জাতীয় আয়ে মাত্র ৫ শতাংশ অবদান রাখতে পেরেছে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ফলশ্রুতিতে এবং অনেক কারখানায় আগুন লাগার প্রেক্ষিতে হাজারও শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশি বস্ত্র শিল্পের উৎপাদক ও ক্রেতারা সমালোচনার শিকার হন। অনেকেই শ্রমিক নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং নিরাপত্তা আদর্শ উন্নয়নে সরকারের সাথে কাজ করা শুরু করেন। বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ কারণ কেউ কেউ যুক্তি দেখান যে বস্ত্র শিল্প নারীদের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আবার অন্যরা এই বিষয়টির উপর মনোযোগ দেন যে নারীরা অসমনুপাতিকভাবে বস্ত্র শ্রমিক ফলে অসমনুপাতিকভাবে এই ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়। কর্ম পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনেকে মনে করেন এই বিষয়ে আরও কাজ করা যায়। [১০] প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেয় বাংলাদেশের বস্ত্র উৎপাদন শিল্প, শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের মাধ্যমে সরাসরি কাঁচা তুলা আমদানি করে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন মাত্রায় পৌঁছুতে পারে। যা ২০১৮ সালে ৩০.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছুতে পারে। [১১]
বস্ত্র শিল্পের ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময় কালে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক বস্ত্র কারখানা পশ্চিম পাকিস্তানের আয়ত্তে ছিল।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Reproductive Health and Rights is Fundamental for Sound Economic Development and Poverty Alleviation," United Nations Population Fund. Retrieved 9 June 2009.
- ↑ "Textiles on the WTO Website"। WTO Secretariat। ৩ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ Latifee, Enamul Hafiz (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "RMG sector towards a thriving future"। The Daily Star।
- ↑ Mirdha, Refayet Ullah (২০২০-০৮-২৫)। "Bangladesh still in second spot in global apparel trade"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১১।
- ↑ Paul, Ruma; Quadir, Serajul (৪ মে ২০১৩)। "Bangladesh urges no harsh EU measures over factory deaths"। Reuters।
- ↑ "Textiles Intelligence || Press Release: Garment industries in Bangladesh and Mexico face an uncertain future"। www.textilesintelligence.com। ২০১১-০৭-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১১।
- ↑ "Going green to woo foreign buyers"। The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১১।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানায় দ্বিশতকের পথে বাংলাদেশ"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১১।
- ↑ "বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব হচ্ছে – DW – 12.03.2023"। dw.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১১।
- ↑ উল্লাহ, আনাম (এপ্রিল ২০১৫)। "Is Neoliberal Globalization Grief for Labour ? An Experience of Bangladeshi Garment Industry"। Middle East Journal of Business (English ভাষায়)। ৫৫ (২০৩১): ১–৬। ডিওআই:10.5742/MEJB.2015.92640।
- ↑ Hossian, Md Sajib; Kabir, Rashedul; Latifee, Enamul Hafiz (২০১৯-০৫-১০)। "Export Competitiveness of Bangladesh Readymade Garments Sector: Challenges and Prospects"। International Journal of Research in Business and Social Science (2147- 4478) (ইংরেজি ভাষায়)। 8 (3): 45–63। আইএসএসএন 2147-4478। ডিওআই:10.20525/ijrbs.v8i3.205।