বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নির্বাচিত সরকারের থেকে আরেক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ৯০ দিনের জন্য সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশে কেবল সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। দশজন উপদেষ্টার সমন্বয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা কমিটির নেতৃত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা। একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার প্রায় সমতুল্য প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী ক্ষমতা কিছু সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ করা হয়। অন্যান্য উপদেষ্টাদের সাথে তাকেও রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হতো যাতে সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়।[১]

প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা
সম্বোধনরীতিপ্রধান উপদেষ্টা (অবলুপ্ত)
নিয়োগকর্তাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
মেয়াদকাল৯০ দিন
গঠন১৯৯৬
বিলুপ্ত২০১১
ওয়েবসাইটcao.gov.bd

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৯১ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সংশোধনীতে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়।[২] ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের সাথে ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করে দেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করায় কিছু জটিলতা ছিল যা ২০০৬-০৮ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের দিকে নিয়ে যায়।[৩] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত করে কিন্তু তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পদত্যাগের দাবির সম্মুখীন হন।[৪] পরে ইয়াজউদ্দিন আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হন ফখরুদ্দীন আহমদ। তৎকালীন রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ।[৫] ফখরুদ্দিন আহমেদ নিজের তিনজন বিশেষ সহকারী নিযুক্ত করেন যাদের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়। তার সহকারী ছিলেন ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. এ. মালেক এবং অধ্যাপক এম তামিম।[৬] তবে প্রধান উপদেষ্টার সহকারীদের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে কিছু বিতর্ক ছিল।[৭]

সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ভবিষ্যতে যেকোনো সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ২০১১ সালে ১৩তম সংশোধনীর সাথে বাতিল করা হয়।[৩] বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ. বি. এম. খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন সম্পাদনা

প্রধান উপদেষ্টা এবং দশ বা তার কম অন্যান্য উপদেষ্টাদের নিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে, যাদের সবাই রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত হবেন।[১][৭]

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাদের তালিকা সম্পাদনা

ক্রম নাম
(জন্ম–মৃত্যু)
ছবি প্রবেশ ত্যাগ রাজনৈতিক দল
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান[৮]
(১৯৩০–২০১৪)
  ৩০ মার্চ ১৯৯৬ ২৩ জুন ১৯৯৬ স্বতন্ত্র
লতিফুর রহমান (বিচারপতি)[৮]
(১৯৩৬–২০১৭)
১৫ জুলাই ২০০১ ১০ অক্টোবর ২০০১ স্বতন্ত্র
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ[৮]
(১৯৩১–২০১২)
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা
  ২৯ অক্টোবর ২০০৬ ১১ জানুয়ারি ২০০৭ স্বতন্ত্র
ফজলুল হক (বিচারপতি)[৮]
(১৯৩৮–)
ভারপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টা
১১ জানুয়ারি ২০০৭ ১২ জানুয়ারি ২০০৭ স্বতন্ত্র
ফখরুদ্দীন আহমদ[৯]
(১৯৪০–)
  ১২ জানুয়ারি ২০০৭ ৬ জানুয়ারি ২০০৯ স্বতন্ত্র

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Molla, MAS। "Should Justice Hasan express embarrassment?"The Daily Star। ২০২৩-০১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯ 
  2. "'Cancel system of appointing last retired CJ as chief adviser'"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-০৯-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯ 
  3. "Chief adviser from ex-chief justices"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৮-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯ 
  4. "Iajuddin must quit now as chief adviser"The Daily Star। ২০০৬-১২-১২। ২০২১-১১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯ 
  5. "Advisers acted differently"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৯-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯ 
  6. "3 special assistants to CA appointed"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-০১-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯ 
  7. "Legal position of special assistants to the chief adviser"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-০১-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯ 
  8. "Non-party caretaker"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-১০-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯ 
  9. "The chief adviser's education promises"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-০৩-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৯