বল্লাল ঢিপি

নদিয়া জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান

বল্লাল ঢিপি নদিয়ার অন্যতম প্রত্নস্থল।[১] নবদ্বীপের নিকটবর্তী মায়াপুরে কাছে বামুনপুকুরে ভক্ত চাঁদকাজীর সমাধিস্থল থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে বল্লাল ঢিপির অবস্থান।[২] এই ঢিপির নিচে বল্লাল সেনের আমলে নির্মিত প্রাসাদ ছিল বলে অনুমান করা হয়। তবে বর্তমানে এটি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন অনুসারে এই অঞ্চল সংরক্ষিত করা হয়েছে। বল্লাল ঢিপি প্রায় চারশো ফুট প্রশস্থ ও উচ্চতায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ ফুট।[৩] ঢিপিটি সবুজ ঘাসে মোড়া, আর চারিদিক কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা রয়েছে। সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের নামানুসারে এই ঢিপিটির নামকরণ করা হয়েছিল। উৎখননের আগে অনেক ইতিহাসবিদ এটিকে সেন রাজাদের রাজধানী হিসাবে মনে করতেন কিন্তু বর্তমানে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।বিজয় নগর বা বিজয়পুর ছিল সেই সময়ের একটি অত্যাধুনিক শহর ও সেন বংশের রাজধানী যার অবস্থান এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত নয় । বিজয়পুর স্থাপন করেন বল্লাল সেনের পিতা রাজা বিজয় সেন[৪]

বল্লাল ঢিপি
বল্লাল সেনের ঢিপি
বৌদ্ধ বিহার এর ভগ্নাবশেষ
বল্লাল ঢিপি ভারত-এ অবস্থিত
বল্লাল ঢিপি
ভারতে অবস্থান
অবস্থানবামুনপুকুর, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
অঞ্চলবঙ্গ
স্থানাঙ্ক২৩°২৬′৫৫″ উত্তর ৮৮°২৪′১১″ পূর্ব / ২৩.৪৪৮৫৫১৮° উত্তর ৮৮.৪০২৯৮৩২° পূর্ব / 23.4485518; 88.4029832
উচ্চতা১৬ মি (৫২ ফু)সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে
ধরনদেবালয় এর ধ্বংসাবশেষ
যার অংশসেন রাজবংশ
উচ্চতা২৫ - ৩০ ফুট
ইতিহাস
নির্মাতাসেন নৃপতিগণ
উপাদানইট, চুন সুরকি
প্রতিষ্ঠিত৮০০ খ্রিস্টাব্দ - ১২০০ খ্রিস্টাব্দ
সংস্কৃতিদেবালয় (অনুমান)
যার সাথে যুক্তসেন রাজবংশ
স্থান নোটসমূহ
আবিষ্কৃত হয়েছে১৯৮২
খননের তারিখ১৯৮২-১৯৮৯
অবস্থাভগ্নপ্রায়
মালিকানাভারতের প্রত্নতত্ত্ববিভাগ
জনসাধারণের প্রবেশাধিকারদর্শনার্থীদের জন্য নিঃশুল্কে উন্মুক্ত
স্থাপত্য
স্থাপত্য শৈলীইমারত

প্রত্নখনন কার্য সম্পাদনা

ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে ফলকে লিখিত তথ্য


সেন রাজাদের রাজা বল্লাল সেনের নামাঙ্কিত এই বৃহদাকার ঢিপিতে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ১৯৮২-৮৩ থেকে ১৯৮৮-৮৯ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে উৎখনন পরিচালনা করে। উৎখননের দ্বারা এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে বিস্তৃত প্রাঙ্গনের মধ্যে অবস্থিত বৃহদায়তন ইটের ইমারত যার চারিদিকে ছিল উচ্চ প্রাচীর। উৎখননে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পঙ্খের মূর্তি, পোড়ামাটির মানুষ, জীবজন্তুর মূর্তি, তামা ও লোহার তৈরি নানান জিনিসপত্র, পেরেক ও নানান প্রত্নসামগ্রী। অষ্টম ও নবম শতকের ধংসপ্রাপ্ত পুরাতন স্থাপত্যকীর্তির উপর পুনঃনির্মিত এই সৌধের উপরিভাগ আনুমানিক দ্বাদশ শতকের। বিভিন্ন সময়ে মেরামত, পরিবর্তন ও সংযোজনের নিদর্শনবাহী এই স্থাপত্য দ্বাদশ শতকে একটি বিশাল দেবালয় রূপ পরিগ্রহন করে।

এই বৃহদাকার ঢিপিটি ১৯৭০-এর শেষের দিকে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব দুটি ভাগে খননকার্য সম্পূর্ণ করেছিল। প্রথমটি ১৯৮২-১৯৮৩ সালে এবং দ্বিতীয়টি ১৯৮৮-১৯৮৯ সালে। উৎখননে প্রাপ্ত বস্তুর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল, পক্ষের মূর্তি, পোড়ামাটির মানুষ ও জীব-জন্তুর মূর্তি, তামা ও লোহার নানান জিনিসপত্র, পেরেক ও নানান প্রত্নসামগ্রী। উৎখননের ফলে অঞ্চলটি বর্তমানে অনাবৃত রয়েছে। বিস্তৃত প্রাঙ্গনের মধ্যে অবস্থিত বৃহদায়তন ইটের ইমারত যার চারিদিকে ছিল উচ্চ প্রাকার। ইতিহাসবিদে্রা এই ইটের তৈরী ইমারত দেখে ইমারতটি কিসের তার সঠিক কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ইতিহাসবিদ্ বা প্রত্নতাত্ত্বিকরা গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারেন যে নিচের অংশের অনেক পরে ইমারতের উপরের অংশটি নির্মাণ করা হয়। অষ্ঠম ও নবম শতকের ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরাতন স্থাপত্যকীর্তির উপর পুনঃনির্মিত এই সৌধের উপরিভাগ আনুমানিক দ্বাদশ শতকের। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ের মেরামত,পরিবর্তন ও সংযোজন নিদর্শন পাওয়া গেছে।[৫]

বল্লাল সেন সম্পাদনা

বল্লাল সেন বাংলার সেন রাজবংশের দ্বিতীয় তথা শ্ৰেষ্ঠ নৃপতি ছিলেন।[৬] তিনি ১১৬০ থেকে ১১৭৯ সাল পর্যন্ত সেনবংশের রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের পুত্র এবং তার যোগ্য উত্তরসূরী। রাজা বল্লাল সেন বাংলার সামাজিক সংস্কার, বিশেষ করে কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনকারী হিসাবে পরিচিত। তিনি সুপণ্ডিত ও লেখক ছিলেন। ‘দানসাগর’ ও ‘অদ্ভুদসাগর’ তার উল্লেখযোগ্য রচনা। বল্লাল সেন তার রাজত্বের সময় বহুদূর পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। বরেন্দ্রভূমি, রাঢ়, বঙ্গ, এবং মিথিলা তার অধীনস্থ ছিল।[৭]

স্থির চিত্রাবলী সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Alphabetical List of Monuments – West Bengal « Archaeological Survey of India" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. General, India Office of the Registrar (১৯৬২)। Census of India, 1961। Manager of Publications। 
  3. ইমাম, আলী (১৯৯৭)। বাঙলা নামে দেশ। অনন্যা। 
  4. "‌পর্যটন কেন্দ্রের দাবি বল্লাল সেনের ঢিপি ঘিরে"www.aajkaal.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "সম্পাদক সমীপেষু"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৮ 
  6. Cakrabartī, Alokakumāra (১৯৮৯)। Mahārājā Kr̥shṇacandra o tat̲kālīna Baṅgasamāja। Pragesibha Buka Phorāma। 
  7. "Sena Dynasty | Sena Empire | Senas of Bengal"ImportantIndia.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৭-০৭। ২০১৯-০৪-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা