বড়গাম জেলা
বড়গাম জেলা ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের একটি জেলা। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জেলার সদর বড়গাম। কারগিলের পর এটি কাশ্মীর উপত্যকার দ্বিতীয় জেলা যেখানে প্রচুর শিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে।[১]
বড়গাম জেলা | |
---|---|
জেলা | |
জম্মু ও কাশ্মীরের মানচিত্রে বড়গ্রাম জেলা | |
ভারতের মানচিত্রে জেলা সদরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৩৪°১′১২″ উত্তর ৭৪°৪৬′৪৮″ পূর্ব / ৩৪.০২০০০° উত্তর ৭৪.৭৮০০০° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | জম্মু ও কাশ্মীর |
প্রতিষ্ঠা | ১৯৭৯ |
প্রতিষ্ঠাতা | আগা সৈয়দ ইউসুফ |
সদর | বড়গাম |
সরকার | |
• ধরন | গণতান্ত্রিক |
আয়তন | |
• মোট | ১,৩৭০ বর্গকিমি (৫৩০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৭,৫৩,৭৪৫ |
• জনঘনত্ব | ৫৩৭/বর্গকিমি (১,৩৯০/বর্গমাইল) |
ভাষাসমূহ | |
• অফিসিয়াল | উর্দু, কাশ্মীরি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
যানবাহন নিবন্ধন | JK04 |
লিঙ্গ অনুপাত | ১.১৩২৫০২৮৩ ♂/♀ |
স্বাক্ষরতা | ৫৭.৯৮% |
গ্রাম সমূহ | খানসাহিব, পার্নেওয়া, বেরওয়াহ, চাডুরা, ওহাবপোড়া |
ওয়েবসাইট | budgam |
প্রশাসন
সম্পাদনাবাড়গাম জেলা জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের সবচেয়ে কাছের (১১ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত) জেলা । এ জেলাটি ১৯৭৯ সালে আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে এটি শ্রীনগর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্ববর্তী সময়ে বড়গাম বারমুলা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল, যখন শ্রীনগর নিজেই অনন্তনাগ জেলার একটি অংশ ছিল। এটি তখন তহসিল শ্রী প্রতাপ নামে পরিচিত ছিল । ঐতিহাসিক রেকর্ডগুলো থেকে জানা যায় যে বড়গামকে পরগনা দেসু হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছিল। বিখ্যাত ঐতিহাসিক খাজা আযম দেমারির মতে এই অঞ্চলটি ডিডমারবাগ নামেও পরিচিত ছিল। বড়গাম জেলার উত্তরে বারমুলা জেলা এবং শ্রীনগর জেলা, দক্ষিণে পুলওয়ামা এবং দক্ষিণ পশ্চিমে পুঞ্চ জেলা অবস্থিত। এ জেলা আটটি ব্লক নিয়ে গঠিত। সেগুলো হলো: বীরওয়াহ, মাগাম, বাড়গাম, বি.কে. পোরা, খানসাহেব, খাগ, নারবল ও চাদূরা ।[২] প্রতিটি ব্লকেই কিছু সংখ্যক পঞ্চায়েত রয়েছে। এ জেলাটি সাত তহশিল এ বিভক্ত। এগুলো হলো:
- চরারি শরিফ তহশীল
- মাগাম তহশীল
- বীরওয়াহ তহশীল
- বাড়গাম তহশীল
- চাদোরা তহশীল
- খানসাহেব তহশীল এবং
- খাগ তহশীল ।[৩]
জনসংখ্যার চিত্র
সম্পাদনাভারতের জনগণনা ২০১১ অনুসারে বড়গাম জেলার জনসংখ্যা ৭৫৩,৭৪৫[৪] যা গায়ানা রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার[৫] এবং মার্কিন স্টেট আলাস্কার জনসংখ্যর প্রায় সমান।[৬] এ দিক দিয়ে ভারতের মোট ৬৪০ টি জেলার মধ্যে বড়গামের অবস্থান ৪৯৪ তম।[৪] এ জেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব ৫৩৭ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (১,৩৯০ জন/বর্গমাইল) ।[৪] ২০০১ থেকে ২০১১ এর দশকে এ জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২১.১৮% ।[৪] আর লিঙ্গ অনুপাতে এ জেলায় প্রতি ১০০০ জন পুরুষের বিপরীতে রয়েছে ৮৮৩ জন নারী ।[৪] এখানকার স্বাক্ষরতার হার ২০০১ সালে ছিল ৩৯.৫৪% যা থেকে বেড়ে ২০১১ সালে হয়েছে ৫৭.৯৮% ।[৪]
ভারতের জনগণনা ২০১১ এর সময় জেলাটির ৯৪.৭৮% মানুষ কাশ্মীরি ভাষাকে, ৪.০০% মানুষ হিন্দি ভাষাকে এবং ০.৫০% মানুষ পাঞ্জাবি ভাষাকে তাদের প্রথম ভাষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।[৭]
বড়গামে সরকারী এবং বেসরকারী মিলিয়ে মোট ৯৮ টি স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় । বড়গামে একটি মাত্র সরকারি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে যা প্যালার গ্রামের কাছে অবস্থিত । কিছু রাজনৈতিক বিষয়ের কারণে বুদগাম আজ অবধি কাশ্মিরের অন্যতম পশ্চাৎপদ জেলা । বড়গাম জেলাটি এর বিখ্যাত ইসলাম ধর্ম প্রচারকদের কাছেও পরিচিত। যেমন: বাবা-হানিফ-উদ-দ্বীন, স্থানীয়ভাবে যার কবরস্থানটি "বাবা সাবিন জিয়ারথ" নামে পরিচিত। মাজারটি একটি অতি সুন্দর পাহাড়ের উপরে অবস্থিত যা রথসুন নামক একটি ছোট্ট সুন্দর গ্রামে এসে শেষ হয়। প্রাচীন কাল থেকেই রথসুনের লোকেরা অত্যন্ত দয়ালু ।
মাগাম বড়গামের অন্যতম প্রধান শহর কারণ এটি প্রায় বড়গাম জেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত । ওমপারা, চরার শরীফ, ক্রলপাড়া এবং সোইবাগ বাড়গাম জেলার সর্বাধিক জনবহুল অঞ্চল। এছাড়া বাড়গাম জেলার মাগাম, ইচগাম, ইস্কান্দারপাড়া, ওহাবপাড়া গ্রামগুলোতে শিয়া জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ।
আকর্ষণ
সম্পাদনাকাশ্মীর উপত্যকার একমাত্র বিমানবন্দরটি বড়গামে অবস্থিত । এ জেলার যেসব স্থান পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: দুধপথরি, যুসমার্গ, তোসাময়দান, নীলনাগ, খাগ, এমটি তাতাকুটি, এবং পেহজান। বড়গাম জেলায় অনেক চমকপ্রদ এবং অসাধারণ স্থান রয়েছে যাদের পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে অথচ তা এখন পর্যন্ত বহুলাংশে অব্যাহত রয়েছে। আকর্ষণীয় যে জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যেতে পারে সেগুলো হল ডুডপথার, ইউসুমার্গ, তোসময়দান, নীলনাগ এবং খাগ। কানি শাল সিজারের দরবারে সমাদৃত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে মুঘল সম্রাটদের কাছে এবং পরে নবাবদের কাছে আভিজাত্যের চিহ্ন হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছিল।১৭৭৬ সালে নেপোলিয়ন তাঁর স্ত্রী জোসেফিনের কাছে একটি কানি শাল উপহার দিয়েছিলেন এবং সেই সাথে ইউরোপে একটি নতুন ফ্যাশন প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছিল। শেখ নূর-উদ-দ্বীন ওয়ালীর পবিত্র মাজার বড়গাম জেলার চরারি শরিফ তহশীলে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিনার গাছ এ জেলাতেই রয়েছে। বড়গাম রেল স্টেশন ওমপরা শহরে অবস্থিত যা জেলা সদর থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দূরে এবং শহরের কেন্দ্র লালচোক হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটিই কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে স্টেশন। কাশ্মীর উপত্যকায় রেল পরিষেবা নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনিক প্রধানের অফিসও রয়েছে এ স্টেশনেই। আর রেলস্টেশনের বাইরে একটি বড় হাসপাতাল রয়েছে যা বড়গাম জেলার প্রথম বেসরকারী হাসপাতাল।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ
সম্পাদনা- চরের শরীফের শেখ উল আলম, যিনি উপত্যকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন।
- পাখারপোড়ার সৈয়দ আলী আলিবলখি।
- ড্রাইগ্যামের একটি জিয়ারাত
- মীর শামস উদ্দীন ইরাকি (রহ.), চাদোরার আশেপাশে তার খানকা অবস্থিত।
- খানসাহেবের সৈয়দ সালেহ।
- আগা সৈয়দ ইউসুফ আল-মুসাভি আল-সাফাভি
- আগা সৈয়দ মোহাম্মদ বাকির কিরমানি
- আগা সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলুল্লাহ
- স্যার সাইয়েদ সানী মাওলানা সৈয়দ আলী শাহ বুখারী, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা
- সাকলাইন শাহ
- পারনেওয়া'র হাকিম সাহেব
- গোলাম হুসাইন শাইখ, প্রবীণ নাগরিক ও সামাজিক কর্মী।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Are Kashmiri Shias The Next Pandits?"। ১৪ নভেম্বর ২০১৩। ২১ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৪।
- ↑ Statement showing the number of blocks in respect of 22 Districts of Jammu and Kashmir State including newly Created Districts ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে dated 2008-03-13, accessed 2008-08-30
- ↑ "ERO's and AERO's"। Chief Electoral Officer, Jammu and Kashmir। ২০০৮-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-২৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০।
- ↑ US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১।
Guyana 744,768
- ↑ "2010 Resident Population Data"। U. S. Census Bureau। ২০১১-০১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০।
Alaska 710,231
- ↑ 2011 Census of India, Population By Mother Tongue
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Risingkashmir.in ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ জুলাই ২০২০ তারিখে
- Greaterkashmir.com
- Kashmirtimes.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ জুন ২০১৩ তারিখে
- Kashmirwatch.com
- Kashmirmonitor.org
- Taghribnews.com