বঙ্গ (প্রাচীন রাজ্য)
বঙ্গ হলো ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বভাগে অবস্থিত একটি প্রাচীন রাজ্য। এই রাজ্যটি এখন রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত বঙ্গ অঞ্চলে (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) অবস্থিত ছিল। এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার একটি সমুদ্রচারী রাজ্য।
বঙ্গ | |
---|---|
![]() খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৫৫১ এ মহাজনপদ বঙ্গ | |
সরকার | রাজতন্ত্র |
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাচীন ভারত |
বর্তমানে যার অংশ | বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ |
যে ধারাবাহিকের অংশ সেটি হল
|
প্রাচীন বাংলা
|
---|
ধ্রুপদী বাংলা
|
মধ্যযুগীয় বাংলা
|
আধুনিক বাংলা
|
এছাড়াও দেখুন
|
মহাভারতে উল্লেখসম্পাদনা
মহাভারতে (৬।৯) অঙ্গ, বঙ্গ ও কলিঙ্গ রাজ্য তিনটাকে ভারতবর্ষ বা প্রাচীন ভারতের নিকটবর্তী রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১২ বছর তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে অর্জুন বঙ্গ ও কলিঙ্গের সকল পবিত্র স্থানে এসেছিলেন।[১]
পূর্বাঞ্চলের অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুহ্ম - এই পাঁচটি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একই বংশের সন্তান। এঁরা ছিলেন গিরিব্রজ শহরের কাছে অবস্থিত মগধ রাজ্যের অধিবাসী গৌতম দীর্ঘতম ঋষির ঔরসজাত এবং বলি রাজার দত্তক পুত্র।[২]
ভীমের বঙ্গ অভিযানসম্পাদনা
কর্ণের অঙ্গ রাজ্য জয় করার পর ভীম পার্বত্য অঞ্চলের এক শক্তিশালী রাজাকে পরাস্ত করেন। এরপর মদগিরির রাজাকে পরাস্ত করার পর পাণ্ডবগণ পুণ্ড্র অঞ্চলের রাজা বাসুদেব ও কৌশিক-মচ্ছের রাজা মহৌজকে পরাজিত করেন। তারপর তাঁরা বঙ্গ রাজ্য আক্রমণ করেন। সমুদ্রসেন ও তাম্রলিপ্তের রাজা চন্দ্রসেনকে পরাজিত করে তাঁরা সুহ্ম রাজ্যের কৈবর্ত রাজাকেও পরাজিত করেন। এরপর তাঁরা সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের রাজাদের পরাজিত করেন। এরপর তাঁরা লৌহিত্য রাজ্যের দিকে অগ্রসর হন। (২।২৯)
অন্যান্য বঙ্গ অভিযানসম্পাদনা
ভার্গব রাম কাশ্মীর, দারদ, কুন্তি, ক্ষুদ্রক, মালব, অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, বিদেহ, তাম্রলিপ্ত, রক্ষোবাহ, বিতাহোত্র, ত্রিগার্ত ও মার্তিকাবত রাজ্য জয় করেছিলেন। (৭।৬৮) কর্ণ অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, মণ্ডিকা, মগধ ও করকখণ্ডের অংশবিশেষ জয় করেন। (৩।২৫২)
অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, মগধ, কাশী, কোশল, বৎস, গর্গ্য, করুষ ও পৌণ্ড্র রাজ্যগুলিকে বাসুদেব কৃষ্ণ জয় করেছিলেন। (৭।১১)
অর্জুন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় বঙ্গ, পুণ্ড্র ও কোশল রাজ্যগুলিকে জয় করেন। (১৪।৮২)
যুধিষ্ঠিরের করদ রাজ্যসম্পাদনা
অঙ্গ, বঙ্গ ও পুণ্ড্র রাজ্যের রাজারা যুধিষ্ঠিরের রাজসভায় উপস্থিত থাকতেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। (২।৪) বঙ্গ, অঙ্গ, পুণ্ড্র, ওড্র, চোল, দ্রাবিড়, অন্ধ্র রাজ্য যুধিষ্ঠিরকে কর দিত বলে উল্লিখিত হয়। (৩।৫১) অঙ্গ, বঙ্গ, পুণ্ড্র, সনবত্য ও গয়া - এই সদ্বংশজাত ক্ষত্রিয় রাজারা নিয়মিত যুদ্ধবিদ্যার চর্চা করতেন। বঙ্গ, কলিঙ্গ, মগধ, তাম্রলিপ্ত, সুপুণ্ড্রক, দৌবলিক, সাগরক, পাত্রোনা, সৈসব ও কর্ণপ্রবর্ণকরা দলে দলে যুধিষ্ঠিরের রাজদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকতেন। (২। ৫১)।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে বঙ্গসম্পাদনা
বঙ্গ সেনাবাহিনী যুদ্ধহস্তী পরিচালনায় দক্ষ ছিল। কলিঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে তাঁরাও কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষ নেয়। (8।১৭) কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় বঙ্গের রাজা ছিলেন ভগদত্ত। (৬।৯৩)
বঙ্গের রাজাগণসম্পাদনা
মহাভারতের দ্বিতীয় পর্বে (শ্লোক পর্বাধ্যায় ২৯) সমুদ্র সেন ও চন্দ্র সেন নামে দুই রাজার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও তাঁরা বঙ্গের রাজা ছিলেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এই পর্বেই ৪৩ পর্বাধ্যায়ে কর্ণকে অঙ্গ ও বঙ্গের রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষ্ণের শত্রু পুণ্ড্রক বাসুদেবকে (জরাসন্ধের বন্ধু) বঙ্গ, পুণ্ড্র ও কিরাতদের রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (২।১৪) অষ্টম পর্বে ভগদত্তকে বঙ্গের রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্ভবত এই রাজারা বঙ্গ রাজ্য জয় করেছিলেন। মহাভারতের অন্যান্য অংশে এঁদের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভগদত্ত ছিলেন বঙ্গের উত্তর দিকে অবস্থিত প্রাগজ্যোতিষ রাজ্যের রাজা। পুণ্ড্রক বাসুদেব ও কর্ণ ছিলেন বঙ্গের পূর্ব দিকে অবস্থিত পুণ্ড্র ও অঙ্গ রাজ্যের রাজা।
অন্যান্য উল্লেখসম্পাদনা
মহাভারতের অন্য জায়গায় আছে বঙ্গ ও কলিঙ্গ রাজ্যের রাজারা পুণ্ড্রের পুণ্ড্রক বাসুদেবের সঙ্গে দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত ছিলেন।[৩]
আরও দেখুনসম্পাদনা
পাদটীকাসম্পাদনা
- Mahabharata of Krishna Dwaipayana Vyasa, translated to English by Kisari Mohan Ganguli