বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বগুড়া জেলা তথা রাজশাহী বিভাগের অত্যন্ত স্বনামধন্য একটি বিদ্যালয়। যা সাধারণত 'ভি এম স্কুল' নামে পরিচিত। বিদ্যালয়টি বগুড়া শহরে ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১] বিদ্যালয়টিতে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে ।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় | |
---|---|
অবস্থান | |
, বগুড়া–৫৮০০ | |
তথ্য | |
বিদ্যালয়ের ধরন | সরকারি বালিকা বিদ্যালয় |
নীতিবাক্য | জ্ঞানই শক্তি |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৬৯ |
অবস্থা | সক্রিয় |
বিদ্যালয় বোর্ড | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড,রাজশাহী |
বিদ্যালয় জেলা | বগুড়া |
সেশন | জানুয়ারি |
প্রধান শিক্ষক | ১ |
কর্মকর্তা | ৭ |
শিক্ষকমণ্ডলী | ৫৪ |
কর্মচারী | ৩ |
শ্রেণি | ৩য়-১০ম |
Years offered | ১ |
লিঙ্গ | মেয়ে |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ২১০০ জন |
ভাষা | বাংলা |
সময়সূচির ধরন | প্রাথমিক |
সময়সূচি | দিবা ও প্রভাতি |
বিদ্যালয়ের কার্যসময় | ৭ |
শ্রেণিকক্ষ | ২০ |
শিক্ষায়তন | ৯৬ শতাংশ |
ইতিহাস
সম্পাদনাইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে হিন্দু, মুসলিম এবং ব্রহ্মা সমাজের গণ্যমান্য মানুষের উদ্যোগে ১৮৬৯ সালে নবাব আলতাফ আলী প্রাসাদের দক্ষিণে ৯৬ শতাংশ জায়গার উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুতে মহারাণী ভিক্টোরিয়া এর ভারত সফরকে স্মরনীয় করে রাখতে এর নাম রাখা হয় 'ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল'। শুরুরদিকে মাত্র ৩ জন ছাত্রী নিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে বিদ্যালয়টিকে সরকারী করণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাকালীন নামটি পরিবর্তন করে 'বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়' করা হয়। যদিও অনেকে এখনো এই বিদ্যালয়টিকে 'ভি এম স্কুল' (ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সংক্ষিপ্ত রূপ) নামেই চেনে। বিদ্যালয়টিতে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে হানাদার বাহিনী বিদ্যালয়টিতে অগ্নি সংযোগ করে। এতে বিদ্যালয়েল অতীতের সমস্ত কাগজপত্র পুড়ে যায়। ফলে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক ঘটনার দলিল চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রায় ২১০০ ছাত্রী পড়াশুনা করছে।
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাবর্তমানে বিদ্যালয়টিতে দুই শিফটে প্রায় ২১০০ ছাত্রী অধ্যায়নরত এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৫৩ জন। বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ রাবেয়া খাতুন।[২]
প্রাত্যহিক কার্যক্রম
সম্পাদনাদুই শিফটে পরিচালিত এ বিদ্যালয়টির প্রভাতি শাখার কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৭.০০ টায় এবং শেষ হয় বেলা ১১.৩০ টায়। দিবা শাখার যাত্রা শুরু হয় দুপুর ১২.০০ টায় এবং সমাপ্তি ঘটে বিকাল ৪.৩০ টায়। প্রত্যেক শিফটের শুরুতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ছাত্রী সমাবেশে কুরআন তেলাওয়াত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সম্মান প্রদর্শন, শপথ বাক্য পাঠ এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে পরম স্রষ্টার নিকট বিশেষ প্রার্থনা জানিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
শ্রেনী শিক্ষণ-লিখন কার্যক্রম
সম্পাদনাসমাবেশ শেষে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেনীর দুটি করে শাখার ষোলটি কক্ষে এক জন করে মোট ষোল জন শ্রেনী শিক্ষক-শিক্ষিকার মাধ্যমে প্রতিটি শিফটের ছাত্রীদের শিক্ষন-লিখন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিটি ক্লাসের সীমা ৪০ মিনিট থেকে ৫৫ মিনিট পর্যন্ত বিস্তৃত। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রীদের শিক্ষন লিখন কার্যক্রম চলে পঞ্চম পিরিয়ড পর্যন্ত আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনীর ছাত্রীদের শিক্ষন-লিখন কার্যক্রম চলে সপ্তম পিরিয়ড পর্যন্ত। শনিবার থেকে বুধবার এই পাঁচদিন চতুর্থ পিড়িয়ডের পর কুড়ি মিনিটের জন্য টিফিনের বিরতী দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণীর শিক্ষন-লিখন কার্যক্রম চলে একটানা পঞ্চম পিরিয়ড পর্যন্ত।
টিফিন
সম্পাদনাবৃহস্পতিবার ব্যতীত অন্যান্য দিন স্কুল চলাকালে একটানা চার পিরিয়ড পর বিদ্যালয়ের নিজস্ব বাবূর্চি দ্বারা তৈরি সাস্থ্য-সম্মত ও সুস্বাদু খাবার ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে বিতরন করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য ঋতুভিত্তিক ফল-ফলাদি এবং অন্যান্য রুচিপূর্ণ খাবারও টিফিনের অন্তর্ভুক্ত থাকে। টিফিনের ফাকে ফাকে ছাত্রীরা মাঠে নানা ধরনের খেলা-ধুলা, আড্ডা, গল্প করে।
সহ-শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম
সম্পাদনাপড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এবং বাহিরে নান প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে অনেক বিজয় এনে দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অর্জন করেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সাফল্য। সংগীত, নৃত্য, চিত্রাংকন, বিতর্ক, নাট্যসহ সাহিত্য-শিল্পের নানা ক্ষেত্রে ছাত্রীরা প্র্রতিভার পরিচয় দিয়ে থাকে। ২০১০ সালে ১২ তম টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা শ্রেষ্ঠ বক্তা সহ বিজয়ী[৩] হয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরনী উৎসব, ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ডিসপ্লেতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে।
সহায়ক সংগঠন
সম্পাদনাবিদ্যালয়ে বাংলাদেশ গার্ল গাইড্'স এসোসিয়েশন, রেড ক্রিসেন্ট ও গার্ল ইন স্কাউট নামের তিনটি শিক্ষা সহায়ক সংগঠন সক্রীয় রয়েছে।
অবস্থান
সম্পাদনাবগুড়া জেলা সার্কিট হাউজের ঠিক পূর্ব পাশে বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম।
গ্যালারি
সম্পাদনা-
বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় একাডেমিক ভবন
-
বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কম্পিউটার ল্যাব
-
বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনার
-
বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ব্যায়ামাগার
-
প্রজেক্টরে ক্লাস নিচ্ছেন একজন শিক্ষক
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৫।
- ↑ "বগুড়া সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগার এর উদ্ধোধন"। Bangla Sangbad 24। ৩০ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৫।
- ↑ অঙ্গীকার(বার্ষিকী ২০১২) পৃষ্ঠা ২০