বকচর গণহত্যা
বকচর গণহত্যা হলো ১৯৭১ সালের ১৩ মে তারিখে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুর জেলার বকচর গ্রামে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী কর্তৃক বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত গণহত্যা। এই ঘটনায় মোট ৯ জন মানুষ প্রাণ হারান। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গণহত্যায় মুজাহিদের সম্পৃক্ততার জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। ২০১৫ সালে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতির বেঞ্চ মুজাহিদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে।[১]
বকচর গণহত্যা | |
---|---|
স্থান | বকচর, ফরিদপুর জেলা, বাংলাদেশ |
তারিখ | ১৩ মে ১৯৭১ (ইউটিসি+৬:০০) |
লক্ষ্য | বাঙালি হিন্দু |
ব্যবহৃত অস্ত্র | আগ্নেয়াস্ত্র |
নিহত | ৯ |
হামলাকারী দল | রাজাকার, শান্তি কমিটি |
প্রেক্ষাপটসম্পাদনা
১৯৭১ সালে বকচর গ্রাম ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি বর্তমানে ফরিদপুর সদর উপজেলার মাঝচর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফরিদপুরে প্রবেশ করে। তারা স্থানীয় সহযোগীদের সহায়তায় হিন্দু জনগোষ্ঠীকে হত্যা করতে শুরু করে। বকচর গ্রামে আক্রমণের পরিকল্পনা মূলত শান্তি কমিটির একটি বৈঠকে গৃহীত হয়েছিল।[২]
হত্যাকাণ্ডসম্পাদনা
১৩ মে তারিখে পাকিস্তানি বাহিনী বকচর গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত অংশে আক্রমণ শুরু করে এবং নয়জন হিন্দু ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায়। আটক ব্যক্তিরা হলেন বীরেন্দ্র সাহা, নৃপেন সাহা, শানু সাহা, জগবন্ধু মিত্র, জলধর মিত্র, সত্যরঞ্জন দাস, নিরদবন্ধু মিত্র, প্রফুল্ল মিত্র এবং উপেন সাহা।[৩] উপেন মিত্রের স্ত্রী রাজাকারদের নিকট টাকা ও সোনার গয়নার বিনিময়ে তার স্বামীর মুক্তি চেয়েও ব্যর্থ হন। রাজাকারেরা নয়জনকেই হত্যা করে।[৩][৪] রাজাকারেরা সুনীল কুমার সাহার কন্যা ঝুমা রাণী সাহাকে ধর্ষণ করে[৩] ও পরবর্তীতে হত্যা করে।[৫] এছাড়া তারা অনীল সাহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করে।[৩]
ফলাফলসম্পাদনা
মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলা চলাকালে বকচর গ্রামের বাসিন্দা ও গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী চিত্ত সাহা ট্রাইবুনালে সাক্ষ্য দেন। সুপ্রীম কোর্টে মুজাহিদের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হলে গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিজন ও বকচর গ্রামের মানুষেরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।[৫]
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "SC upholds Mojaheed's death sentence"। New Age। Dhaka। ১৬ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৬।
- ↑ "মুজাহিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ"। Samakal। Dhaka। ২৬ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ Mojtaba Dhruba, Golam (১৬ জুলাই ২০১৩)। "মুজাহিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৬।
- ↑ "মুজাহিদের ফাঁসির রায়"। The Daily Jugantor (Bengali ভাষায়)। Dhaka। ১৮ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৬।
- ↑ ক খ "মুজাহিদের রায়ে খুশি ফরিদপুরবাসী ॥ আনন্দ মিছিল মিষ্টি বিতরণ"। The Daily Janakantha (Bengali ভাষায়)। Dhaka। ১৬ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৬।