বইয়ের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

বইয়ের ইতিহাস ১৯৮০ এর দশকে এক স্বীকৃত অধ্যয়নের শাখায় পরিণত হয় , এ বিষয়ে অবদানকারীদের মধ্যে পণ্ডিতেরা , কোডিকোলজি, গ্রন্থসূচী , সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ব , পুরালেখবিদ্যা , শিল্পকলার  ইতিহাস , সাংস্কৃতিক ইতিহাস (ইতিহাস) এবং সামাজিক ইতিহাসের বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন । এর মূল উদ্দেশ্য এটি প্রমাণ করা যে বই কেবলমাত্র তার ভিতরে থাকা পাঠ্যবস্তুই নয়, এটি এমন একটি প্রণালী  যার মাধ্যমে পাঠক এবং শব্দের মধ্যে আত্মীয়তা সৃষ্টি হয় ।

জন্মদিনে বইয়ের মুদ্রণ , ২০০৬  সালে বার্লিনে প্রদর্শিত ছয়টি ওয়াক অফ আইডিয়াস ভাস্কর্যগুলির মধ্যে চতুর্থটি যা আধুনিক পান্ডুলিপি বইয়ের একটি স্তূপ প্রদর্শন করে।

গুটেনবার্গ বাইবেল দ্বারা বিখ্যাত হওয়া মুদ্রণযন্ত্রের বিবর্তনের আগে, প্রতিটি বই একটি হস্তনির্মিত অনন্য বস্তু ছিল, যা লিপিকার , মালিক , বইবাঁধাইকারী এবং অঙ্কনশিল্পীর স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যগুলির বহিঃপ্রকাশ ছিল [১] বইয়ের প্রতিটি উপাদান বিশ্লেষণ করলে বইটি লেখার উদ্দেশ্য , কোথায় এবং কীভাবে সেটিকে রাখা হয়েছিল , কারা সেটি পড়েছিল , সমসাময়িক আদর্শ ও ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পাঠকেরা অভ্যন্তরীণ বিষয়বস্তুগুলিকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন কিনা তা জানা যায় । যদি এই প্রকার প্রমাণের অভাব থাকে তাসত্ত্বেও  সেই নির্দিষ্ট বইয়ের প্রকৃতি সম্পর্কে মূল্যবান সূত্র পাওয়া যায় ।

উৎস সম্পাদনা

বইয়ের ইতিহাস বিশ শতকের শেষার্ধে একটি স্বীকৃত অধ্যয়নের শাখায় পরিণত হয়েছিল। এবিষয়টি উইলিয়াম আইভিনস জুনিয়রের প্রিন্টস অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন (মুদ্রণ ও চাক্ষুষ যোগাযোগ) (১৯৫৩) এবং হেনরি-জ্যাঁ মার্টিন এবং  লুসিয়েন ফেবভ্রের " ল'অপারিটিশন ডু লিভ্রে " (দ্য কমিং অফ দ্য বুক , দ্য ইমপ্যাক্ট অফ প্রিন্টিং, ১৪৫০-১৮০০) (১৯৫৮)     মার্শাল ম্যাকলুহানের " গুটেনবার্গ গ্যালাক্সি : দ্য মেকিং অফ টাইপোগ্রাফিক ম্যান " (১৯৬২) ইত্যাদি দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল। বইয়ের ইতিহাসে আরেকজন উল্লেখযোগ্য অগ্রগামী হলেন রবার্ট ডার্নটন। [২]

প্যাপিরাস সম্পাদনা

 
১২৭৫ খ্রিষ্টপূর্বের হুনেফারের মৃতের বই , প্যাপিরাসের উপর কালি এবং রঞ্জক দিয়ে লেখা , বর্তমানে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা আছে ৷

প্যাপিরাসের খাগড়া থেকে মজ্জা বার করার পরে, বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপের (আর্দ্রতা, চাপ সৃষ্টি , শুকনো করা , জোড়া দেওয়া এবং কাটা) ফলে নানা মানের কাগজ তৈরি হয়েছিল,  এদের মধ্যে  সবচেয়ে ভালোটি ব্যবহৃত হত পবিত্র লেখালেখির জন্য ৷ [৩] প্রাচীন মিশরে প্যাপিরাস সমতল লেখার একটি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হত , সম্ভবত প্রথম রাজবংশের গোড়া থেকেই, তবে এ ব্যাপারে প্রথম প্রমাণ পঞ্চম রাজবংশের রাজা নেফেরিরকারে কাকাইয়ের হিসাবের বই থেকে পাওয়া যায় (প্রায় ২৪০০ খ্রীস্টপূর্ব)। [৪] ক্যালামাস নামক খাগড়ার কাণ্ডকে একটি বিন্দুতে ধারালো করে নেওয়া বা পাখির পালক লেখনী হিসাবে ব্যবহৃত হত। মিশরীয় লিপিকারদের লিপিকে হায়রেটিক বা বিদ্রূপমূলক লেখা বলা হত ; এটি হায়ারোগ্লিফিক নয়, পাণ্ডুলিপি রচনায় ব্যবহৃত হায়ারোগ্লিফের আরও সরলীকৃত রূপ (হায়ারোগ্লাইফগুলি সাধারণত খোদাই করা বা আঁকা হত)। মিশরীয়রা গ্রীক এবং রোম সহ ভূমধ্যসাগরীয় অন্যান্য সভ্যতায় এটি রপ্তানি করত এবং সেখানে পার্চমেন্ট কাগজ আবিষ্কার না হওয়া অবধি তা ব্যবহৃত হয়েছিল। [৫]

প্যাপিরাস বইগুলি ১০ মিটার বা তারও বেশি দৈর্ঘ্যের এক সাথে আটকানো কয়েকটি পাতার স্ক্রোল আকারে তৈরী হত। কিছু বই , যেমন তৃতীয় রামসেসের রাজত্বের ইতিহাস ৪০ মিটার দীর্ঘ ছিল। বইগুলিকে অনুভূমিকভাবে খোলা হত ; পাঠ্যবস্তু একদিকে থাকত এবং অনেক গুলি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। বইয়ের শিরোনামটি যে বেলনে বইটি ভরে সংরক্ষণ করা হত সেটির সাথে সংযুক্ত একটি লেবেল দ্বারা নির্দেশ করা হত । অনেক প্যাপিরাস গ্রন্থ সমাধি থেকে পাওয়া গেছে , যেখানে প্রার্থনা ও পবিত্র গ্রন্থগুলি  রেখে দেওয়া হত ( যেমন খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথম দিকের  মৃতের বই )।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Pearson, David (২০১১)। Books As History: The Importance of Books Beyond Their Texts। London: The British Library and Oak Knoll Press। পৃষ্ঠা 23। আইএসবিএন 978-0-7123-5832-3 
  2. I.R.Willison। "The History of the Book as a Field of Study within the Humanities" (পিডিএফ) 
  3. "How Ancient Papyrus Was Made | U-M Library"lib.umich.edu (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১১ 
  4. Leila Avrin. Scribes, Script and Books. The Book Arts from Antiquity to the Renaissance. American Library Association / The British Library 1991, p. 83.
  5. Lyons 2008 21