ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা (ক্রিকেট)

ক্রিকেট খেলায় ম্যাচের ধরনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। কিছু নির্দিষ্ট বোলিং কৌশল নিরুৎসাহিত করতে বা ব্যাটসম্যানদের বড় শট খেলতে উৎসাহিত করতে, চার ও ছক্কা মারার সুবিধার দিতে এটি করা হয়। প্রতিটি দলে উইকেটরক্ষক এবং বোলার ছাড়া নয় জন ফিল্ডার থাকে। অধিনায়ক সাধারণত বোলারের সাথে পরামর্শক্রমে ফিল্ডিং এর অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের তুলনায় টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচে ফিল্ডিং বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়।

পাওয়ারপ্লে চলাকালীন সীমিত সংখ্যক ফিল্ডারকে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে ফিল্ডিং করার অনুমতি দেওয়া হয়।

সব ধরনের ক্রিকেটে সম্পাদনা

সব ধরনের ক্রিকেটে স্কোয়ার লেগ এবং লং স্টপ ফিল্ডিং অবস্থানের এক-চতুর্থাংশ এলাকায় মাত্র দুজন ফিল্ডারকে ফিল্ডিং করা অনুমতি দেওয়া হয়েছে।[১] নিষিদ্ধ এবং বিতর্কিত বডিলাইন কৌশল ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে এটি করা হয়েছে। ব্যাটসম্যান বল না খেলা পর্যন্ত কোনও ফিল্ডার পিচ-এর উপরে থাকতে বা তার উপর দিয়ে অন্য পাশে যেতে পারে না।

একদিনের ক্রিকেট সম্পাদনা

ব্যাটসম্যানকে আক্রমণাত্মক খেলা খেলতে উৎসাহিত করার এবং ফিল্ডিং দলকে তাদের সকল ফিল্ডারকে বাউন্ডারিতে সাজানোর মাধ্যমে আত্মরক্ষামূলক ফিল্ডিং করা থেকে বিরত রাখার দ্বৈত লক্ষ্যে একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে বিভিন্ন নিয়ম প্রয়োগ করা হয়েছে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রয়োগ করা বর্তমান নিয়মগুলি প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ২০০১ সালের জুলাইয়ে প্রবর্তন করা হয়েছিল এবং এটি অন্যান্য কয়েকটি সীমিত ওভারের টুর্নামেন্টেও ব্যবহৃত হয়।

ছেলেদের ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতার বৃত্ত সম্পাদনা

খেলার মাঠে দুটি অর্ধবৃত্ত অঙ্কন করে উপবৃত্তাকা তৈরি করা হয়। অর্ধবৃত্তদুটির কেন্দ্র পিচের উভয় প্রান্তের মাঝখানের স্টাম্প বরাবর থাকবে। প্রতিটি অর্ধবৃত্তের ব্যাসার্ধ ৩০ গজ (২৭ মিটার) হতে হবে। অর্ধবৃত্তগুলি পিচের সমান্তরাে রেখায় সংযুক্ত হবে। এই রেখাটি সাধারণত বৃত্ত হিসাবে পরিচিত। প্রতিটি উইকেটকে কেন্দ্র করে ১৫ গজ (১৪ মিটার) ব্যাসার্ধের আরও দুটি বৃত্ত আঁকা হয় এবং এদুটি একত্রিত হয়ে নিকটতম অন্তঃমাঠ হিসাবে পরিচিত একটি অঞ্চলকে সংযুক্ত করে। ৫০ ওভারের ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে সর্বোচ্চ দুইজন ফিল্ডারকে ৩০ গজ সীমানার বাইরে ফিল্ডিং করা অনুমতি দেওয়া হয়। জুলাই ২০১৫ এর আগে পাওয়ারপ্লে ১-এর সময় সর্বনিম্ন দুজন ফিল্ডারকে (বোলার এবং উইকেট-কিপার ব্যতীত) নিকটতম অন্তঃমাঠে মোতায়েন করতে হতো।[২] যদি ইনিংসে ওভারের সংখ্যা ২৪ এরও কম হয় তবে ফিল্ডিং বিধিনিষেধের ব্যাপ্তি আট বা নয় ওভারে নামিয়ে আনা হয়। কমপক্ষে ৩ জন ফিল্ডার অবশ্যই অফ বা লেগ সাইডে থাকতে হবে।

টি-টেন ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির মতোই বিধিনিষেধ রয়েছে তবে তা অর্ধেক সময়ের জন্য। প্রথম ছয় ওভারে বৃত্তের বাইরে কেবল দুইজন ফিল্ডার ফিল্ডিং করতে পারবে।

মেয়েদের ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতার বৃত্ত সম্পাদনা

মেয়েদের খেলায় ছেলেদের চেয়ে মধ্যমাঠ এবং নিকটতম অন্তঃমাঠের বৃত্তটি ছোট হয়। মধ্যমাঠের অর্ধবৃত্তের ব্যাসার্ধ ২৩ মিটার (২৫ গজ) এবং নিকটতম অন্তঃমাঠের বৃত্তের ব্যাসার্ধ ১২ মিটার (১৩ গজ) হয়।

বহিঃমাঠে সর্বোচ্চ তিনজন ফিল্ডার থাকার সীমাবদ্ধতা পাঁচ ওভারের আরও দুটি ভাগে প্রয়োগ করা হয়, ফিল্ডিং এবং ব্যাটিং পক্ষের অধিনায়কদ্বয় প্রতিটি ভাগের সময় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এই পাঁচ-ওভারের স্পেলগুলিকে পাওয়ারপ্লে ২ এবং পাওয়ারপ্লে ৩ বলা হয় এবং ইনিংসের দৈর্ঘ্য কমে গেলে ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা ছোট করা যেতে পারে (প্রথম ১০ ওভার পাওয়ারপ্লে ১)। ২০০৫ সালের ৭ জুলাই ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথমবারের মতো পাওয়ারপ্লে চালু করা হয়।

ইনিংসের বাকি ওভারগুলিতে বহিঃমাঠে সর্বোচ্চ পাঁচজনজন ফিল্ডার রাখা যাবে।

ইতিহাস সম্পাদনা

ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৮০-৮১ মৌসুমে প্রবর্তিত হয়েছিল।[৩] ১৯৯২ এর মধ্যে প্রথম পনের ওভারে মাত্র দুজন ফিল্ডারকে বৃত্তের বাইরে ফিল্ডিং এর অনুমতি দেওয়া হয় এবং বাকী ওভারগুলিতে পাঁচজন ফিল্ডারকে বৃত্তের বাইরে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।[৪] ২০০৫ সালে এটি দশ ওভারে কমিয়ে আনা হয় এবং পাঁচ ওভারের দুটি পাওয়ারপ্লে চালু করা হয়, উভয় পাওয়ারপ্লে নেওয়ার সময়ের বিষয়টি বোলিং দলের ইচ্ছাধীন ছিল। ২০০৮ সালে দুটি পাওয়ারপ্লের মধ্যে একটির সময় নির্ধারণের ক্ষমতা ব্যাটিং দলকে দেওয়া হয়। ২০১১ সালে দলগুলিকে ১৬ তম থেকে ৪০ তম ওভারের মধ্যে পাওয়ারপ্লে শেষ করতে সময় বেধে দেওয়া হয়; এর আগে ১১ তম ও ৫০ তম ওভারের মধ্যে যে কোনও সময় পাওয়ারপ্লে নেওয়া যেত।

আইসিসি ২০১২ সালের ৩০ শে অক্টোবর একদিনের ম্যাচে ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতার নিয়মের পরিবর্তনগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ করে। পাওয়ারপ্লের সংখ্যা কমিয়ে দুইটি করা হয়; প্রথমটি প্রথম দশ ওভার করা হয়, ফিল্ডিং দল দুইজন ফিল্ডারকে ৩০-গজের বৃত্তের বাইরে রাখতে পারবে। দ্বিতীয়টি ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে, যা চল্লিশতম ওভারের মধ্যে অবশ্যই নিতে হবে এবং এসময় বৃত্তের বাইরে তিনজন ফিল্ডার রাখা যাবে।[৫] পাওয়ারপ্লে বিহীন ওভারগুলিতে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে ফিল্ডারের সংখ্যা চারজন (পাঁচজন থেকে) করা হয়।[৫]

২০১৫ সালের জুনে ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেসহ নিয়ম পরিবর্তিত হয় এবং শেষ দশ ওভারে ৫ জন ফিল্ডারকে বৃত্তের বাইরে থাকার অনুমতি দেয়। ২০১৫ সালের নিয়মের পরিবর্তনের মধ্যে ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে বাদদেওয়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৬]

টুয়েন্টি২০ সম্পাদনা

বহিঃমাঠে খেলোয়াড়ের সংখ্যা একদিনের আন্তর্জাতিকের মতো, তবে ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা বিশ ওভারের প্রথম ছয় ওভারে কার্যকর হয় এবং এখানে কোন "ব্যাটিং" বা "বোলিং" পাওয়ারপ্লে নেই (ওয়ানডেতে পাওয়ারপ্লে ২ এবং ৩)। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ ওভারের প্রথম ছয় ওভারের পর ৩০ গজ (২৭ মিটার) [নারীদের ক্রিকেটি ২৫ গজ (২৩ মিটার)] বৃত্তের বাইরে সর্বোচ্চ পাঁচজন ফিল্ডার থাকতে পারে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Law 28 – The fielder"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  2. ICC changes rules again
  3. "One-Day Cricket"। CricTrivia.com। ডিসেম্বর ২০০৫। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ 
  4. "Colourful cricket, and that rain rule"। ESPN Cric Info। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৪ 
  5. "Amended playing conditions to take effect"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৩ 
  6. http://economictimes.indiatimes.com/news/sports/icc-changes-powerplay-fielding-free-hit-rules-in-odis/articleshow/47839734.cms