ফরহাদ মজহার
ফরহাদ মজহার (জন্ম: ৯ আগস্ট ১৯৪৭) একজন বাংলাদেশি কবি, দার্শনিক, মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদী।[১][২][৩][৪][৫] বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি ১৯৭২ সালে প্রবর্তিত সংবিধানের একজন বড় সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।[৬][৭][৮] মজহার রচিত গণঅভ্যুত্থান ও গঠন (২০২৩) বইটির দ্বারা গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতারা প্রভাবিত হয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন, যেহেতু ছাত্রনেতাদের অনেকে তার পাঠচক্রে অংশ নিত।তার পাঠচক্র থেকে অনুপ্রেরণা পেত।
ফরহাদ মজহার | |
---|---|
জন্ম | ৯ আগস্ট, ১৯৪৭ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দি নিউ স্কুল |
পেশা | কবি, কলামিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | প্রস্তাব, মোকাবিলা, ভাবান্দোলন, এবাদতনামা |
দাম্পত্য সঙ্গী | সাকী সেলিমা (বিচ্ছেদ), ফরিদা আখতার (-বর্তমান) |
ওয়েবসাইট | www |
জীবনী
সম্পাদনাফরহাদ মজহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে ঔষধশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দি নিউ স্কুল ফর সোশাল রিসার্চ থেকে অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সামাজিক অর্থনীতিতেও গবেষণা করেছেন। চিন্তা নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক মজহার উবিনীগ এনজিও গঠন করে নয়াকৃষি আন্দোলনও শুরু করেন।[৯]
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হল: প্রস্তাব, মোকাবিলা, এবাদতনামা ও মার্কস পাঠের ভূমিকা।
সমালোচনা
সম্পাদনাফরহাদ মজহার সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার জন্য ২০১৩-২০১৪ সালে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।[১০][১১]। সলিমুল্লাহ খানের সাথে তাঁর বিতর্ক লেখক ও বুদ্ধিজীবী মহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল[১২]
অপহরণ বিষয়ক বিতর্ক
সম্পাদনা২০১৭ সালের ৩ জুলাই ঢাকার শ্যামলীর আদাবরের নিজ বাড়ি থেকে ভোর পাঁচটার দিকে ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়। এর ১৮ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে যশোরের অভয়নগরে একটি বাস থেকে উদ্ধার করে।[১৩][১৪][১৫][১৬] পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও পুলিশ অবশ্য এই সন্দেহ প্রকাশ করে যে, ফরহাদ মজহারকে গুম করা হয়নি, বরং তিনি নিজেই আত্মগোপন করেছিলেন। অবশ্য গুম নাকি আত্মগোপন, কোনোটির স্বপক্ষেই যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ফরহাদ মজহার অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাকে অপহরণ করে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। তিনি বলেন, "আমি মৃত্যু ভয়ে ভীত, বিধ্বস্ত শারীরিক অসুস্থতায় নির্জীব হয়ে পড়ি। শোরগোল শুনে আমি জেগে উঠি। কিছু শাদা পোশাকের লোক জোর করে আমাকে আবার নামিয়ে আনার চেষ্টা করে। শাদা পোশাকের কিছু লোক বন্দুক তুলে শাসিয়ে আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে উভয়ের মধ্যে প্রচণ্ড তর্কাতর্কি হয়। কিন্তু র্যাব ছোটখাটো যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে আমাকে তাদের গাড়িতে উঠায়। এবং আমার স্ত্রী ফরিদা আক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করে।অপহরণকারীরা ওই এলাকায় থাকতে পারে ভেবে র্যাব আমাকে নিয়ে খুলনায় ঘটনাটি তদন্ত করতে চাইলেও কে বা কারা র্যাবের গাড়ির দুদিকে রাস্তায় রাতের ট্রাক থামিয়ে দু'দিকের পথরোধ করে। এবং র্যাবের গাড়িসহ আমাকে একটি জায়গায় নিয়ে আসে। আমাকে তখন র্যাবের গাড়ি থেকে নামানো হয়। আমার সঙ্গে তারা প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করে। এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমাকে বলতে বাধ্য করা হয় যে আমি বিনোদনের জন্যে বেরিয়েছি।" তিনি জানান, এর পর তাকে ক্যামেরাসহ কিছু লোকের সামনে দাঁড় করানো হয়। "সাংবাদিকদের সামনে আমি বিনোদনের জন্যে স্বেচ্ছায় বেরিয়েছি এটা স্বীকার করার জন্যে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়। অনেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে আমাকে পুলিশের একটি গাড়িতে নিয়ে উচ্চস্বরে গান গাইতে গাইতে ঢাকার পথে রওনা হয়। সারা পথে নানা ভাবে আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়।"
তিনি বলেন, ঢাকায় নিয়ে আসার পরেও বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাকে তার পরিবারের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। পরে তাকে গোয়েন্দাদের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় তাকে জেরা করা হয়।
ফরহাদ মজহার বলেন, আদালতকে তিনি জানান তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ডিবি অফিস তাকে দিয়ে যা লিখিয়ে নিয়েছে সেটাই তিনি আদালতে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "পরে জানতে পারি এবং এখন বুঝতে পারি অপহরণকারীরা খুলনা যশোর সীমান্তের দিক দিয়ে আমাকে সীমান্তের ওপাশে নিতে চেষ্টা করেছিলো।"
তিনি অভিযোগ করেন পুলিশ ঘটনাটিকে অন্যদিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে।"তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রেস কনফারেন্স করে আমাকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা করেন। পুলিশের প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করলে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন," বলেন মি. মজহার।
তিনি জানান, গোয়েন্দা পুলিশ পরেও তাদেরকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে সায় না দিলে তাদেরকে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন।
মি. মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা এখন এর সুবিচার চেয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন।[১৭][১৮][১৯]
গ্রন্থতালিকা
সম্পাদনাগদ্য
সম্পাদনা- প্রস্তাব (১৯৭৬)
- সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উত্থান প্রসঙ্গে (১৯৮৫)
- রাজকুমারী হাসিনা (১৯৯৫)
- সাঁইজীর দৈন্য গান (২০০০)
- জগদীশ (২০০২)
- সামনা সামনি: ফরহাদ মজহারের সঙ্গে কথাবার্তা (২০০৪)
- বাণিজ্য ও বাংলাদেশের জনগণ (২০০৪)
- মোকাবিলা (২০০৬)
- গণপ্রতিরক্ষা (২০০৬)
- ক্ষমতার বিকার ও গণশক্তির উদ্বোধন (২০০৭)
- পুরুষতন্ত্র ও নারী (২০০৮)
- ভাবান্দোলন (২০০৮)
- সাম্রাজ্যবাদ (২০০৮)
- রক্তের দাগ মুছে রবীন্দ্রপাঠ (২০০৮)
- সংবিধান ও গণতন্ত্র (২০০৮)
- নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০০৮)
- জ্যাক দেরিদা-র চিহ্ন বিচার (২০১০)
- তিমির জন্য লজিকবিদ্যা (২০১১)
- প্রাণ ও প্রকৃতি (২০১১)
- মার্কস পাঠের ভূমিকা (২০১১)
- ডিজিটাল ফ্যাসিবাদ (২০১২)
- যুদ্ধ আরো কঠিন আরো গভীর (২০১৪)
- ব্যক্তি বন্ধুত্ব ও সাহিত্য (২০১৬)
- মার্কস, ফুকো ও রুহানিয়াত (২০১৮)
- সিনেমাপাঠ(২০২১)
কবিতা
সম্পাদনা- খোকন এবং তার প্রতিপুরুষ (১৯৭২)
- ত্রিভঙ্গের তিনটি জ্যামিতি (১৯৭৭)
- আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে (১৯৮৩)
- সুভাকুসুম দুই ফর্মা (১৯৮৫)
- বৃক্ষ: মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক বিষয়ক কবিতা (১৯৮৫)
- অকস্মাৎ রপ্তানিমুখী নারীমেশিন (১৯৮৫)
- খসড়া গদ্য (১৯৮৭)
- মেঘমেশিনের সঙ্গীত (১৯৮৮)
- অসময়ের নোটবই (১৯৯৪)
- দরদী বকুল (১৯৯৪)
- গুবরে পোকার শ্বশুর (২০০০)
- কবিতার বোনের সঙ্গে আবার (২০০৩)
- ক্যামেরাগিরি (২০১০)
- এবাদতনামা (২০১১)
- এ সময়ের কবিতা (২০১১)
- যে তুমি রঙ দেখোনি (২০১১)
- কবিতাসংগ্রহ (২০১১)
- তুমি ছাড়া আর কোন্ শালারে আমি কেয়ার করি? (২০১৬)
- সদরুদ্দীন (২০১৮)
নাটক
সম্পাদনা- প্রজাপতির লীলালাস্য (১৯৭২)
অনুবাদ
সম্পাদনা- অর্থশাস্ত্র পর্যালোচনার একটি ভূমিকা (মূল: কার্ল মার্ক্স) (২০১০)
- খুন হবার দুই রকম পদ্ধতি (মূল: রোকে ডাল্টন) (২০১১)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "'Missing' Bangladeshi activist found"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৭।
- ↑ Safi, Michael (২০১৭-০৭-১২)। "Bangladesh's disappeared: activist found on bus claims he was latest target" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৭।
- ↑ Hossain, Selina, সম্পাদক (২০০০)। Bangla Academy Dictionary of Writers (English ভাষায়)। Dhaka: Bangla Academy। পৃষ্ঠা 67–68। আইএসবিএন 984-07-4052-0।
- ↑ Gordimer, Nadine; Devi, Mahasweta; Derrida, Jacques (২৫ আগস্ট ১৯৯৫)। "Bangladesh Jails Writer Without Charges"। w:The New York Times।
- ↑ হোসেন, আকবর (২০১৭-০৭-০৪)। "আমাকে যারা নিন্দা করেন, আমি তাদের উপভোগ করি: ফরহাদ মজহার"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ "Can't demand polls until new constitution drafted, Farhad Mazhar to BNP"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৯।
- ↑ "সংবিধান বাতিল এবং ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করতে হবে"। Samakal। আগস্ট ১৫, ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪।
- ↑ "সংবিধান সংস্কার নয়, চাই নতুন গঠনতন্ত্র"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৯।
- ↑ "ফরহাদ মজহার আদাবর থানায়"। ৪ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "ফরহাদ মজহারের বোমা অথবা রেটরিক প্রসঙ্গে"। ২০১৮-০৪-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৭।
- ↑ BanglaNews24.com। "সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষম পরিণাম"। banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৭।
- ↑ হোসেন, আকবর। "আমাকে যারা নিন্দা করেন, আমি তাদের উপভোগ করি: ফরহাদ মজহার"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ পারভীন, ফারহানা (৩ জুলাই ২০১৭)। "ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছে: পরিবার"। বিবিসি বাংলা।
- ↑ "'আমি তাঁকে জীবিত, অক্ষত ফেরত পেতে চাই' বিবিসিকে বললেন ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার"। বিবিসি বাংলা। ৩ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "ফরহাদ মজহার অপহরণ রহস্য: কী বলছে পরিবার"। বিবিসি বাংলা। ৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "আমাকে অপহরণ করে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো: ফরহাদ মজহার"। বিবিসি বাংলা। ৯ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "ফরহাদ মজহার অপহরণ পরকীয়া এবং মামলা | প্রথম পাতা | The Daily Ittefaq"। archive1.ittefaq.com.bd। ২০২০-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৪।
- ↑ "ফরহাদ মজহারের অপহরণ মামলায় জবানবন্দি দিলেন এক নারী | banglatribune.com"। Bangla Tribune। ২০২০-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৪।
- ↑ "সরকারকে বিব্রত করার জন্য ফরহাদ মজহারের ঘটনা: পুলিশ মহাপরিদর্শক"। BBC বাংলা। ২০১৭-০৭-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৪।