ফটিকছড়ি করোনেশন সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
ফটিকছড়ি করোনেশন সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (বড় স্কুল নামে অধিক পরিচিত) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় অবস্থিত একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয়করণ করা হয়।
ফটিকছড়ি করোনেশন সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় | |
---|---|
অবস্থান | |
তথ্য | |
ধরন | সরকারি |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯১২ |
বিদ্যালয় বোর্ড | চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড |
সেশন | জানুয়ারি - ডিসেম্বর |
ইআইআইএন | ১০৪৩১৯ |
প্রধান শিক্ষক | মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন |
অনুষদ | মানবিক, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কারিগরি শিক্ষা |
শ্রেণি | ষষ্ঠ-দশম |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ১২ শতাধিক |
শিক্ষায়তন | ৫.১৩ একর |
ওয়েবসাইট | fatickcharicmhighschool |
অবস্থান
সম্পাদনাএই প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি পৌরসভায় অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনাউচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত বলে উল্লেখ থাকলেও অনেকে মনে করেন যে, বিদ্যালয়টি ১৮৮০ সালের দিকে প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল। ইংরেজ শাসন আমলে আধুনিক শিক্ষায় অনগ্রসর যুগে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মনীষীদের সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি ইংরেজ রাজশক্তির পৃষ্ঠপোষকতাও উল্লেখযোগ্য ছিল বলে স্পষ্ট ধারণা করা যায়। ১৯১১ সালে ইংরেজ রাজ পরিবারের ঐতিহাসিক রাজাভিষেক বা 'Coronation Ceremony' এর প্রেক্ষিতে 'Coronation High English School' নামকরণ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে। তৎকালীন সময়ে এ পূর্ববঙ্গে একইভাবে একইনামে আরো দু'টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একটি নারায়ণগঞ্জে এবং অন্যটি খুলনায়। কালক্রমে অন্য দু'টি বিদ্যালয় সরকারিকরণের মাধ্যমে উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়ে ধন্য হলেও এ বিদ্যালয়ের ভাগ্যে তা হয়ে উঠেনি। অনেকে মনে করেন যে, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা পশ্চিম বঙ্গের অধিবাসী সাব রেজিস্ট্রার আহাম্মদ এজাহার। মাঝে মাঝে তার ওয়ারিশেরা এসে এ বিদ্যালয়টি দেখে যেতেন। বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সাথে আর একজন মনীষীর নাম জড়িয়ে আছে, তিনি হলেন আক্কাস আলী মুনসেফ। বিদ্যালয়টির পুকুরঘাটে ১৯৩৪ সালে তার সম্মানার্থে মার্বেল পাথরের স্মৃতি ফলক লাগানো আছে। আর একজন সরকারী কর্মকর্তার নামও জড়িয়ে আছে এ বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে। তিনি হলেন সাব রেজিষ্টার আব্দুল ওয়াহাব সাহেব। ১৯৪০ সালে নির্মিত মসজিদের ভিত্তি প্রস্তরে তার সম্মানার্থে মার্বেল পাথরের স্মৃতি ফলক লাগানো আছে। এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিবর্গের অনুদান ও অবদান অবশ্যই ছিল। এমন ব্যক্তিবর্গ ছিলেন নিঃস্বার্থ, উদার ও উন্নত চিন্তায় চিন্তাশীল। তাই বিদ্যালয়ের নামকরণে কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম যুক্ত হয়নি। প্রথম দিকে বিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ফটিকছড়ি মুন্সেফ আদালতের পূর্বদিকে রাস্তার উত্তর পার্শ্বে। পরবর্তীতে ১৯১৭ সালের দিকে বিদ্যালয়ের বর্তমান স্থানে আধাপাকা ভবন তৈরি হলে পূর্ববর্তী স্থানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাসভবন বিদ্যমান ছিল। পরে ১৯৫৮ সালে ফটিকছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়। প্রথম দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং একই গৃহে পরিচালিত হতো। পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায় দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করায় বিদ্যালয়ের পূর্বাংশে ৩০ শতক জমি দানপত্র দ্বারা প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য আলাদা ঘরদরজা তৈরি হয়। উল্লেখ্য যে, ফটিকছড়ি কলেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল এই বিদ্যালয়ের হোস্টেলে ক্লাসের ব্যবস্থা করে ক্লাস নেওয়া হতো, পরবর্তীতে কলেজের বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হ্য এবং ডিগ্রী কলেজে উন্নীত হয়।[১] গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিদ্যালয়টি উপজেলার মডেল বিদ্যালয় হিসেবে রুপান্তরিত হয়েছে।ফলে বিদ্যালয়ের পিছনে ১,২৩,০০০০০/-(এককোটি তেইশ লক্ষ) টাকা ব্যয়ে চার তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।ফলে বর্তমানে আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত পাঠদানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের লেখাপড়া অনেক এগিয়ে যাবে।
জাতীয়করণ
সম্পাদনা২৯ আগস্ট ২০১৭ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪৮টি স্কুল জাতীয়করণে সদয় সম্মতি প্রদান করেন এবং জাতীয়করণের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশও দেন। সরকার কর্তৃক চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন করে যে কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ বা সরকারিকরণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে ফটিকছড়ি
করোনেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নামও রয়েছে।[২] ইতিমধ্যে জাতীয়করণের লক্ষে গত ১৬/১০/২০১৭ ইংরেজি তারিখে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাননীয় উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে পরিদর্শনকারি দল বিদ্যালয়ের যাবতীয় তথ্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ সুসম্পন্ন করেন ৷
অবকাঠামো
সম্পাদনাফটিকছড়ি বিবিরহাট বাজার ও ব্যবসা কেন্দ্র থেকে একটু দূরে ৫.১৩ একর জমির সুবিশাল এলাকা জুড়ে এ বিদ্যালয়ের অবস্থান।[৩] দক্ষিণমুখী ২৫০ ফুট লম্বা পাঁকা স্কুল গৃহ। বিদ্যালয় গৃহের উপর সোভা বৃদ্ধি করে আছে মুকুট আকারের অদ্বিতীয় স্থাপিত কারু কাজ যা অযত্ন অবহেলা জীর্ণ হয়েও দর্শককূলকে মুগ্ধ করে তোলে।বিদ্যালয়ের সামনে খেলার মাঠ ও তার পার্শ্বে স্বচ্ছ সরোবরের ন্যায় পুকুর এবং রাস্তা।পুকুরের প্রাচীন সানবান্ধা ঘাট ও তিন পাড়ে বসার পুরাতন গ্যালারী আজো বিদ্যমান আছে।এগুলো বিদ্যালয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট অতীতের মনীষীদের মন- মানসীকতা ও রুচির স্বাক্ষর বহন করে। এ বিদ্যালয়ে ১টি প্রশাসনিক ভবন, সর্বমোট ৩০ শ্রেণীকক্ষ সংবলিত ৪টি একাডেমিক ভবন, ১টি মসজিদ ও ১টি বিজ্ঞান ল্যাবরেটরী এবং ১ টি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে। এছাড়া এ বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সমৃদ্ধ সুপরিসর কম্পিউটার ল্যাব এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে।[৪]
ব্যবস্থাপনা
সম্পাদনাবেসরকারি ব্যবস্থাপনার নীতি অনুসারে এটি একজন সভাপতির নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয় যার সদস্য সচিব হচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।[৫]
শিক্ষকবৃন্দ
সম্পাদনাবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক এবং ভোকেশনালের শিক্ষক সহ মোট ২৯ জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন।[৬]
শিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনাএই প্রতিষ্ঠানটিতে ১২ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।[৭] এই প্রতিষ্ঠানে রাঙ্গামাটিয়া, ধুরুং, সুন্দরপুর, পাইন্দং,হারুয়ালছড়ি,ভুজপুর, কাঞ্চননগর ইউনিয়ন সহ ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন দূর-দূরান্তের জায়গা হতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যা অর্জন করতে আসে।
সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
সম্পাদনাবিদ্যালয়ের পোশাক
সম্পাদনাসাদা শার্ট এবং কালো প্যান্ট।
ফলাফল ও কৃতিত্ব
সম্পাদনাবিগত বছরের পাশের হার ৯৮.৫%।[৭] এছাড়া বিগত কয়েকবছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ছাত্ররা কৃতীত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে।২০১৩ সালের এস.এস.সি. পরীক্ষায় মোট ১৬ জন ছাত্র জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।২০১৪ সালের এস.এস.সি. পরীক্ষায় মোট ১৩ জন ছাত্র জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।২০১৭ সালের এস.এস.সি. পরীক্ষায় মোট ০৮ জন ছাত্র জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
কৃতি সন্তান
সম্পাদনা- বিনোদবিহারী চৌধুরী- ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী কর্মী যিনি বিপ্লবী সূর্য সেনের সহকর্মী ছিলেন।[৮]
- অশোক বড়ুয়া- কবি,গল্পকার, নাট্যকার,অনুবাদক ও গীতিকার।[৯]
- আহমদুল হক চৌধুরী-বিশিষ্ট সমাজসেবী,ব্যবসায়ী এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রীয় অংশগ্রহণকারী।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন
সম্পাদনাআরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৯।
- ↑ http://m.dainikshiksha.com/১৪৮-স্কুল-জাতীয়করণে-দ্র/109799/
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৭।
- ↑ ক খ http://fatikchhari.chittagong.gov.bd/site/education_institute/4a3233dd-214a-11e7-8f57-286ed488c766/ফটিকছড়ি%20করোনেশন%20উচ্চ%20বিদ্যালয়[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ দৈনিক প্রথম আলো[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ http://suprobhat.com/স্মরণে-অশোক-বড়ুয়া/[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]