ফখরুদ্দিন চৌধুরী

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

ফখরুদ্দিন চৌধুরী (জন্ম: ১১ নভেম্বর, ১৯৪৬ - মৃত্যু: ২১ এপ্রিল, ২০১৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১][২]

ফখরুদ্দিন চৌধুরী
জন্ম১১ নভেম্বর, ১৯৪৬
মৃত্যু২১ এপ্রিল, ২০১৪
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম সম্পাদনা

ফখরুদ্দিন চৌধুরী ১৯৪৬ সালের ১১ নভেম্বর সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বোরহান উদ্দিন চৌধুরী এবং মাতা ছাহেবা খাতুন। ফখরুদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীর নাম হোসনে শাহাদাত চৌধুরী। তাদের তিন মেয়ে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

ফখরুদ্দিন চৌধুরী কর্মজীবী মানুষ ছিলেন। প্রাত্যহিক কর্মব্যস্ততায় কাটতে থাকে তার সময়। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম এলাকায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ২০ বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা পুরো চট্টগ্রাম শহরে তাণ্ডবলীলা চালাতে থাকে। ষোলশহরে অবস্থানরত ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর সেনারা প্রথম প্রহরেই সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করেন। ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিদ্রোহী বাঙালি সেনাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রতিরোধযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তিনি চট্টগ্রাম শহরের প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম শহরের পতন হলে তিনি নিজ এলাকা গোলাপগঞ্জে চলে আসেন। কয়েক দিন পরিবারের সাথে সময় অতিবাহিত করার পর চলে যান মেঘালয়ে। সেখানে ইকো-১ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারো নিজ এলাকায় অপারেশনাল কার্যক্রম চালানোর উদ্দেশ্যে আসেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্বল্পপ্রশিক্ষিত গণযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন পাকিস্তানি ক্যাম্পে ঝটিকা আক্রমণ, রেইড, অ্যামবুশ, হ্যারিসিং, ফায়ার ডিমোলিশন চালাতে থাকেন।

১২ অক্টোবর মেজর শাফায়াত জামিলের কমান্ডাধীন জেড ফোর্সের অন্যতম ব্যাটালিয়ন ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিলেটে আগমন করে। অতিরিক্ত জনবল সংগ্রহের নিমিত্তে ফখরুদ্দিন চৌধুরীর কোম্পানিকে ওই ব্যাটালিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ডি কোম্পানির সেনা হিসেবে সে সময় তিনি গোয়াইনঘাট, রাধানগর, ছাতক, লামাকাজি, গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। সিলেট মহানগরীর পশ্চিমে সুরমা নদীর তীরবর্তী স্থান লামাকাজি ঘাট। অদূরেই গোবিন্দগঞ্জ রেলওয়ে জংশন। সুনামগঞ্জ ও ছাতকের সাথে চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে গোবিন্দগঞ্জের। মধ্য অক্টোবর থেকে জেড ফোর্সের সাঁড়াশি আক্রমণে পতন হতে থাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একের পর এক দুর্গের। তাদের সর্বশেষ ঘাঁটি ছিল গোবিন্দগঞ্জে। সিলেট শহর ও আশপাশ এলাকা থেকে পলায়নপর পাকিস্তানি সেনারা শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে সেখানে। ১৪ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে গোবিন্দগঞ্জ আক্রমণ করে। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে হতাহত হয় অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। বাকিরা আত্মসমর্পণ করে। সেদিনের যুদ্ধে অসাধারণ রণকুশলতা প্রদর্শন করেন ফখরুদ্দিন চৌধুরী। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। তার খেতাব নম্বর ৬০৬।

মৃত্যু সম্পাদনা

তিনি ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। 

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৪-১১-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা (প্রথম খন্ড), আনোয়ার শাহজাহান। বইপত্র। ফেব্রুয়ারি ২০১৬। আইএসবিএন 978-984-6000-719 

পাদটীকা সম্পাদনা

বহি:সংযোগ সম্পাদনা