কোনো প্রতিযোগিতায় সার্বিক চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করতে কিছু পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হল একক-বিদায়, বেস্ট অফ সিরিজ, সমষ্টিগত স্কোর ও রাউন্ড-রবিন টুর্নামেন্ট। এগুলিকেই প্লে-অফ পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।

একক-বিদায়

সম্পাদনা

একক-বিদায় প্রতিযোগিতায় একজন প্রতিযোগীকে পরাজয়বরণ করা মাত্র নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয়। এ পদ্ধতিতে পরাজিত দল বা ব্যক্তি চ্যাম্পিয়নশীপ বা প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় ও প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে। এ ধরনের বিদায়ী প্রতিযোগিতাকে অলিম্পিক পদ্ধতি প্রতিযোগিতা, নক-আউট কিংবা আকস্মিক বিদায় প্রতিযোগিতা নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

সাধারণত ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, টেনিস প্রভৃতি প্রতিযোগিতায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু প্রতিযোগিতায় ফাইনাল খেলার পাশাপাশি তৃতীয় স্থান নির্ধারক খেলাও হয়ে থাকে (যেমন– অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদকের খেলা)। এখানে সেমি-ফাইনালে হেরে যাওয়া দল বা খেলোয়াড়দ্বয় পুনরায় একটি ম্যাচ খেলে, সম্পূর্ণ বাদ হয়ে যায় না।

উদাহরণ

সম্পাদনা

২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় নক-আউট পর্বে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল:

কোয়ার্টার-ফাইনাল সেমি-ফাইনাল ফাইনাল
         
এ৩   শ্রীলঙ্কা ১৩৩
বি২   দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৪/১
বি২   দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮১/৫
এ১   নিউজিল্যান্ড ২৯৯/৬
এ১   নিউজিল্যান্ড ৩৯৩/৬
বি৪   ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৫০
এ১   নিউজিল্যান্ড ১৮৩
এ২   অস্ট্রেলিয়া ১৮৬/৩
বি৩   পাকিস্তান ২১৩
এ২   অস্ট্রেলিয়া ২১৬/৪
এ২   অস্ট্রেলিয়া ৩২৮/৭
বি১   ভারত ২৩৩
বি১   ভারত ৩০২/৬
এ৪   বাংলাদেশ ১৯৩

সমষ্টিগত স্কোর

সম্পাদনা

ক্রীড়ায়য (বিশেষত ফুটবল) দুই লেগ সমতা হচ্ছে দুটি দলের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা, যা দুটি ম্যাচ বা "লেগ" নিয়ে গঠিত, প্রতিটি দল একটি লেগ হোম দল হিসেবে খেলে। বিজয়ী দলটি সাধারণত দুইটি লেগের সামগ্রিক ফলাফলের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি দুটি লেগের স্কোর হয়:

  • প্রথম লেগ: ক দল ৪–১ খ দল
  • দ্বিতীয় লেগ: খ দল ২–১ ক দল

তবে সামগ্রিক ফলাফলের হুবে ক দল ৫–৩ খ দল, যার মানে হচ্ছে ক দল জয়লাভ করেছে। কিছু প্রতিযোগিতায়, সামগ্রিক ফলাফল নির্বিশেষে প্রতিটি দল একটি লেগ জয়লাভ করলে একটি সমতা বিবেচিত করা হয়। নক-আউট কাপ প্রতিযোগিতা এবং প্লে অফে দুই লেগ সমতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

উত্তর আমেরিকাতে, দুই লেগ সমতার সমতুল্য শব্দ হচ্ছে হোম-অ্যান্ড-হোম সিরিজ বা সমষ্টিগতভাবে ফলাফল নির্ধারিত হলে, দুই-খেলা সর্বমোট গোলসংখ্যা সিরিজ

ফুটবলে টাইব্রেকার হিসেবে পূর্বে ও বর্তমানে অনেক প্রতিযোগিতায় অ্যাওয়ে গোল নিয়ম মানা হয়, নতুবা পেনাল্টি শুট-আউট দ্বারা বিজয়ী নির্ধারিত হয়।

রাউন্ড-রবিন

সম্পাদনা

রাউন্ড-রবিন টুর্নামেন্ট এক ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা পদ্ধতি ও ক্রীড়া পরিভাষা। এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগী বা দল পর্যায়ক্রমে অন্যান্য প্রতিযোগী বা দলের বিরুদ্ধে খেলায় অংশগ্রহণ করে। প্রায় সকল প্রতিযোগিতাতেই এর প্রয়োগ লক্ষণীয়।

উদাহরণ

সম্পাদনা

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার লিগ পর্ব:

অব দল খেলা হা টাই ফহ পয়েন্ট নে.রা.রে. যোগ্যতা অর্জন
  ভারত ১৫ +০.৮০৯ সেমি-ফাইনালে উত্তীর্ণ
  অস্ট্রেলিয়া ১৪ +০.৮৬৮
  ইংল্যান্ড (H) ১২ +১.১৫২
  নিউজিল্যান্ড ১১ +০.১৭৫
  পাকিস্তান ১১ −০.৪৩০ বিদায়
  শ্রীলঙ্কা −০.৯১৯
  দক্ষিণ আফ্রিকা −০.০৩০
  বাংলাদেশ −০.৪১০
  ওয়েস্ট ইন্ডিজ −০.২২৫
১০   আফগানিস্তান −১.৩২২
উৎস: আইসিসি, ক্রিকইনফো
শ্রেণীবিভাগের নিয়মাবলী: ১) পয়েন্ট; ২) জয়; ৩) নেট রান রেট; ৪) টাই করা দলগুলির মধ্যে ফলাফল; ৫) প্রাক-টুর্নামেন্ট ভাগ
(H) স্বাগতিক।

দ্বৈত-বিদায়

সম্পাদনা

মই-আকৃতি

সম্পাদনা

মই-আকৃতির প্লে-অফ পদ্ধতি হল একক-বিদায় প্রতিযোগিতারই একটি রূপভেদ, যা দেখতে মই-এর মতো ধাপ যুক্ত। উচ্চ বীজপ্রাপ্ত দল ছাড় পেয়ে পরবর্তী রাউন্ডে অনায়াসে উত্তীর্ণ হয় ও পূর্ববর্তী রাউন্ডের বিজয়ীর সাথে ম্যাচ খেলে। নিম্ন বীজপ্রাপ্ত দলকে অনেক ম্যাচ খেলে ফাইনালের দিকে অগ্রসর হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিগ ইস্ট পুরুষদের বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা, জাপানের নিপন পেশাদার বেসবল লিগ, দক্ষিণ কোরিয়ার কেবিও বেসবল লিগ প্রভৃতিতে এটি সচল। এছাড়া বিভিন্ন ক্রিকেট লিগেও, যাতে তিনটি দল অন্তিম পর্বে উত্তীর্ণ হয় তাতে এই পদ্ধতি দেখা যায় (যেমন– নিউজিল্যান্ডের সুপার স্ম্যাশ টি২০ লিগ)।

হাইব্রিড বিদায়ী প্রতিযোগিতা

সম্পাদনা

পেজ-ম্যাকইন্টায়র পদ্ধতি

সম্পাদনা

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, পাকিস্তান সুপার লিগ প্রভৃতি বিখ্যাত টুয়েন্টি২০ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় এই পদ্ধতি দ্বারা চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হয়। মূলত লিগ পর্বের সেরা দুই দলকে প্লে-অফে হেরে গেলেও পুনরায় ফাইনালে যাবার সুযোগ দেওয়া হয় এই পদ্ধতিতে। তবে, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানাধিকারী দল হেরে গেলেই বিদায় নেয়।

এই পদ্ধতি পূর্বে বিভিন্ন সফটবল, কার্লিং প্রতিযোগিতায় দেখা যেত।

উদাহরণ

সম্পাদনা
পেজ প্লেঅফসেমিফাইনালফাইনাল
  অন্টারিও  অন্টারিও
  কুইবেক  কুইবেক
  কুইবেক
  নোভা স্কোশিয়া
  অ্যালবার্টা
  নোভা স্কোশিয়া

সর্বোচ্চ পাঁচ পদ্ধতি

সম্পাদনা

লিগ পর্বে সেরা পাঁচটি দল প্লে-অফে গেলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি দুরকম পদ্ধতির হয়ে থাকে–

  • ১ম পদ্ধতি অস্ট্রেলীয়-নিউজিল্যান্ড রাগবি লিগ ও ব্রিটিশ রাগবি সুপার লিগ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে:
    • ১ম দল দ্বিতীয় পর্বে সরাসরি উত্তীর্ণ হয় এবং ২য় বনাম ৩য় ও ৪র্থ বনাম ৫ম এর দুটি ম্যাচ প্রথম পর্বে হয়ে থাকে।
    • ২য় বনাম ৩য় ম্যাচের বিজয়ী দল ১ম দলের সাথে খেলতে দ্বিতীয় পর্বে উত্তীর্ণ হয় ও পরাজিত দল ৪র্থ ও ৫ম দলের মধ্যেকার ম্যাচের বিজয়ীর সঙ্গে খেলতে দ্বিতীয় পর্বে উত্তীর্ণ হয়। অপরপক্ষে, ৪র্থ ও ৫ম দলের মধ্যেকার ম্যাচের পরাজিত দল বিদায় নেয়।
    • ১ম দল ও ২য় বনাম ৩য় ম্যাচের বিজয়ী দলের মধ্যেকার বিজয়ী সরাসরি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় ও পরাজিত দল একটি প্রিলিমিনারি ফাইনাল খেলার সুযোগ পায়।
    • ২য় ও ৩য় দলের মধ্যে পরাজিত দল ৪র্থ ও ৫ম দলের মধ্যেকার ম্যাচের বিজয়ীর সঙ্গে যে ম্যাচ খেলে তাতে পরাজিত দল বিদায় নেয় ও বিজয়ী দল প্রিলিমিনারি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়।
    • প্রিলিমিনারি ফাইনালে বিজয়ী দল ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় ও পরাজিত দল বিদায় নেয়।
    • ফাইনাল খেলায় বিজয়ী দল চ্যাম্পিয়ন রূপে ঘোষিত হয়।

যেমন– ২০০৬ নিউজিল্যান্ড রাগবি লিগ প্লে-অফ পর্ব:

 
  বাছাই ফাইনাল সেমি-ফাইনাল প্রাথমিক ফাইনাল ফাইনাল
                                     
অকল্যান্ড লায়নস ২৭  
    ক্যান্টারবেরি বুলস ১৪         অকল্যান্ড লায়নস ২৫
ক্যান্টারবেরি বুলস ২৬     ক্যান্টারবেরি বুলস ৩০   ক্যান্টারবেরি বুলস ১৮
ওয়েইটাকেরে রেঞ্জার্স ২০       তামাকি লিওপার্ডস  
ওয়েইটাকেরে রেঞ্জার্স ২৪
তামাকি লিওপার্ডস ২৫   তামাকি লিওপার্ডস ২৫  
কাউন্টি মানুকাউ জেটস ১২
  • ২য় পদ্ধতি বিগ ব্যাশ লিগ ব্যবহার করে:
    • ১ম ও ২য় দল বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয় ও ৩য় দল নক-আউট নামক পর্বে উত্তীর্ণ হয়। এলিমিনেটর পর্বে ৪র্থ ও ৫ম দল পরস্পরের মুখোমুখি হয়।
    • এলিমিনেটর পরাজিত দল বিদায় গ্রহণ করে এবং বিজয়ী দল নক-আউটে উত্তীর্ণ হয় ৩য় দলের সাথে খেলতে।
    • বাছাইপর্বে বিজয়ী দল সরাসরি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় এবং পরাজিত দল চ্যালেঞ্জার নামক পর্বে উত্তীর্ণ হয় (অর্থাৎ, এখানেও পরে পেজ প্লে-অফ পদ্ধতি চলে আসে)
    • নক-আউট এর বিজয়ী দল চ্যালেঞ্জারে উত্তীর্ণ হয় এবং পরাজিত দল বিদায় নেয়।
    • চ্যালেঞ্জারে বিজয়ী দল ফাইনালে ওঠে এবং পরাজিত দল বিদায় নেয়।
    • ফাইনালে জয়ী দল চ্যাম্পিয়ন হয়।

যেমন– ২০২১-২২ বিগ ব্যাশ লিগ প্লে-অফ পর্ব:

  এলিমিনেটর   বাছাই   চ্যালেঞ্জার   ফাইনাল
                                     
 পার্থ স্কর্চার্স ৩/১৮৯  
 সিডনি সিক্সার্স ১৪১        
         পার্থ স্কর্চার্স ৬/১৭১
          ২   সিডনি সিক্সার্স ৯২
  নকআউট         সিডনি সিক্সার্স  ৬/১৭০   
        ৪   অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স  ৪/১৬৭ 
     সিডনি থান্ডার ৬/১৭৮  
     অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স ৬/১৮৪
   অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স ৬/১৮৮  
   হোবার্ট হারিকেন্স ১৬৬


সর্বোচ্চ সাত পদ্ধতি

সম্পাদনা

সাধারণত লিগ পর্বে সেরা সাতটি দল প্লে-অফে গেলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার মূলপর্বটি এই পদ্ধতিতেই সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতির সাথে মই আকৃতির পদ্ধতির অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়।

যেমন– ২০২১ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ মূল পর্ব:

প্লে-অফ কোয়ার্টার-ফাইনাল সেমি-ফাইনাল ফাইনাল
  ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ – আবুধাবি (জা)                          
    আল জাজিরা     ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ – আবুধাবি (জা)        
    পিরায়   ১         আল হিলাল  
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ – আবুধাবি (জা)
      আল জাজিরা   ১    
    আল হিলাল   ০
        চেলসি    
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ – আবুধাবি (জা)
    চেলসি (অ.স.প.)  
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ – আবুধাবি (না)
      পালমেইরাস   ১
    আল আহলি  
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ – আবুধাবি (না)
    মোন্তেররেই   ০    
    পালমেইরাস  
৫ম স্থান নির্ধারণী ৩য় স্থান নির্ধারণী
        আল আহলি   ০  
    মোন্তেররেই       আল হিলাল   ০
    আল জাজিরা   ১     আল আহলি  
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ – আবুধাবি (না) ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ – আবুধাবি (না)

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা