প্রতাপেশ্বর মন্দির

কালনার মন্দির

প্রতাপেশ্বর মন্দির পশ্চিমবঙ্গের কালনা শহরে অবস্থিত।অম্বিকা কালনার ১০৮ শিবমন্দিরের বিপরীত গেট দিয়ে রাজবাড়ি মন্দির চত্বরে ঢুকে বাঁদিকের কামান পেরিয়ে একটু এগুলেই প্রথমেই পড়বে টেরাকোটা কারুকার্যমণ্ডিত প্রতাপেশ্বর দেউল-মন্দির। কেউ এটিকে জলেশ্বরের মন্দির বলেছেন। আবার কেউ বলেছেন প্যারীকুমারী মঠ। এর সমান্তরাল খাঁজকাটা গম্বুজাকৃতি শিখর ও নিচের দেওয়ালের চারপাশের প্রতিটি স্থানে ছোট ছোট অসংখ্য টেরাকোটা-ফলক সমৃদ্ধ এই দেউল সত্যই শিল্পীর এক অনাবদ্ধ সৃষ্টি। এই মন্দিরের স্থপিতি-শিল্পী ছিলেন বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীর মন্দির-সূত্রধর রামহরি মিস্ত্রি। তিনি সোনামুখীর প্রসিদ্ধ শ্রীধরজী'র পঁচিশচূড়া মন্দিরও নির্মাণ করেন। প্রতাপেশ্বর দেউল ১৭৭১ শকাব্দে বা ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দে রাজকুমার প্রতাপচন্দ্রের মহিষী প্যারীকুমারী দেবী প্রতিষ্ঠা করেন। [১] প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য, কালনা শহরে রাজকুমার প্রতাপচাঁদের অন্তর্ধান হয় এবং জাল প্রতাপচাঁদের নামে যে ফৌজদারী মামলা হয় সেই ঘটনার সূত্রপাত এখানেই হয়।

প্রতাপেশ্বর মন্দির

গঠন বৈশিষ্ট সম্পাদনা

উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, পূর্বমুখী, উড়িষ্যারীতির শিখর দেউলের প্রাচীন রীতির পরিবর্তিত ও সরলীকৃত রূপ এটি। গর্ভগৃহে একটি মাত্র দরজা, পূর্ব দিকে। বাকি তিনদিকে আছে ভরাট করা দরজা। আয়তন ১৫ ফুট ( ৪.৫৭ মি. ) X ১৫ ফুট ( ৪.৫৭ মি. )। উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট (১৩.৭ মি. )। এর চারদিকেই রয়েছে খুব ছোট পরিসরের ঢাকা বারান্দা। গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ নিত্যপূজিত। উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি ( ১৩৭ সেমি )।

ভাস্কর্য সম্পাদনা

 
টেরাকোটা কার্যে দেবীদুর্গা

মন্দিরে প্রবেশ পথের মাথায় রয়েছে রামসীতার অভিষেক। নিচে বাদ্যবন্দনা। উত্তর দিকের কৃত্রিম দ্বারের মাথায় আছে লঙ্কাযুদ্ধ। যুদ্ধে সিংহবাহিনী দুর্গার আবির্ভাব। রাবণের পাশে নগ্না নারীমূর্তি। অন্য দিকে বানর সৈন্য। নিচে রণবাদ্য। পশ্চিম দিকে কৃত্রিম দ্বারের মাথায় রয়েছে কীর্তনদলসহ 'গৌড়-নিতাই' মূর্তি। আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে রাধাকৃষ্ণ ও ললিতা-বিশাখা। অন্যান্য টেরাকোটা কাজের মধ্যে আছে দলবদ্ধ বিদেশিনী, বেহালা বাদিকা, কালী, রাধাকৃষ্ণলীলাদৃশ্য, অশ্বারোহী যোদ্ধা, ঝালওয়ালা, বাতায়নে মহিলা, সখীদ্বয়ের মাঝে শ্রীকৃষ্ণ, জগন্নাথ, শিব, মহিষমর্দিনী ( ভগ্নপ্রায় ), তীরন্দাজ, বীণাবাদক, গড়গড়ার নল হাতে এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, ঘোড়-সওয়ার, মালাজপরত বৈষ্ণব সাধু ও ফুলকারি নকশা ইত্যাদি।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ভট্টাচার্য, কেদারনাথ। "পুরাকীর্তি অজস্র, তবু পর্যটক আসে না"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৪