প্যারা শুমচা

পাখি প্রজাতি

প্যারা শুমচা (বৈজ্ঞানিক নাম: Pitta megarhyncha) হচ্ছে পিটিডি (Pittidae) পরিবারভুক্ত একটি পাখির প্রজাতি। এটি বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ভারত, সিঙ্গাপুরথাইল্যান্ডে পাওয়া যায়। [১] এর প্রাকৃতিক বাসস্থান উপক্রান্তীয় বা ক্রান্তীয় ম্যানগ্রোভ বনে।

প্যারা শুমচা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Passeriformes
পরিবার: Pittidae
গণ: Pitta
প্রজাতি: P. megarhyncha
দ্বিপদী নাম
Pitta megarhyncha
Schlegel, 1863

বাংলাদেশের প্যারা শুমচা সম্পাদনা

কোয়ালা সেলেঙ্গার, মালয়েশিয়া, আগস্ট ১৯৯৪

শিকারি বিড়াল ও সরীসৃপরে নাগাল থেকে ডিম ও ছানাকে রক্ষার জন্য প্যারা শুমচা কাঁটাঘেরা হেঁতালের মাথা অথবা উঁচু ধুন্দল-শাখার শেষ প্রান্তে বাসা বাঁধে। পৃথিবীর অন্যত্র, অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বনে প্যারা শুমচা মাঝে মাঝে মাটিতে বাসা বাঁধে, কিন্তু সুন্দরবনে কখনো নয়।

প্যারা শুমচা উজ্জ্বল লাল, নীল, সবুজ আর খয়েরি পালকবিশিষ্ট হয়। নানা রঙে রঙিন বলেই শুমচার আরেক নাম নওরং। তেলুগু ভাষায় শুমচার নাম ‘পিটা’, যার অর্থ ‘আদুরে’। এখন পিটা নামেই সে সারা বিশ্বে পরিচিত, কারণ এটাই এর ইংরেজি এবং বৈজ্ঞানিক নাম। শুমচা পরিবারে পৃথিবীতে ৩১ এবং বাংলাদেশে পাঁচ জাতের পাখি আছে। তিন জাতের শুমচা এ দেশের পরিযায়ী পাখি; বর্ষায় এখানে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে কিন্তু শুকনো মৌসুমে সবাই দেশত্যাগ করে দক্ষিণে উড়ে যায়। মাত্র দুই জাতের শুমচা এ দেশে স্থায়ী বসবাস করে, আমাদের পাহাড়ি-বনের নীলঘাড় শুমচা ও সুন্দরবনের প্যারা শুমচা।

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ-পুবে সুমাত্রা পর্যন্ত মাত্র চার হাজার কিলোমিটার লম্বা এক চিলতে উপকূলীয় প্যারাবনেই পৃথিবীর সব প্যারা শুমচার বাস এবং সুন্দরবনই এর বৃহত্তম আবাস। পাখিটি বিশ্বে ‘প্রায়-বিপদগ্রস্ত’ আখ্যায়িত হয়েছে এবং এর সীমিত বাসভূমির কোনো ক্ষতি হলে অচিরে বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সুন্দরবনের বাঘের মতোই প্যারা শুমচারা ‘টেরিটোরিয়াল’ বা এলাকাকাতর প্রাণী। নিয়মিত টহল দিয়ে, হাঁকডাক করে প্রত্যেকে নিজের বিচরণভূমি দখলে রাখে। ভাটার পানি সরে গেলে যে যার নিজের জমিতে নেমে কাঁকড়া ও পোকামাকড় শিকার করে। সুন্দরবনে এমন শত শত শুমচা-টেরিটোরি আছে, প্রতিটিতে এক জোড়া পাখির বাস। জমি নিয়ে বিবাদ হলে ছেলেরা ডাকাডাকির দীর্ঘ প্রতিযোগিতায় নামে। ডাকের ডুয়েলে মীমাংসা না হলে ডানার নীল পালক দেখিয়ে এরা যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মাধ্যমে লড়াইয়ের হারজিত নির্ধারিত হয়।

সুন্দরবনে এর সংখ্যা কত তা কারও জানা নেই; তবে বৈশ্বিক প্রায়-বিপন্ন এ পাখির সবচেয়ে বড় অংশ এখানেই রয়েছে বলে অনেকেই অনুমান করে।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. BirdLife International 2004. Pitta megarhyncha ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে. 2006 IUCN Red List of Threatened Species. Downloaded on 26 July 2007.
  2. "রূপসী প্যারা শুমচা"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], ইনাম আল হক| তারিখ: ০২-০৬-২০১০

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা