পৌষমেলা
পৌষমেলা হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক মেলা ও উৎসব। প্রতি বছর ৭ পৌষ এই মেলা শুরু হয় এবং চলে তিন দিন ধরে। তবে দোকানিরা সারা পৌষ মাস ধরেই মেলাপ্রাঙ্গনে দোকান দিতে পারেন। এই মেলার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বাংলা লোকসংগীতের (বিশেষত বাউল গান) অনুষ্ঠান।[১]
পৌষমেলা | |
---|---|
![]() পৌষ মেলার বাজার, ২০১২ | |
প্রতিষ্ঠিত | ১৮৯৪ |
প্রতিষ্ঠাতা | ঠাকুরবাড়ি |
প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য | ৭ পৌষ ১৯২৮ (২১ ডিসেম্বর ১৮৯১)-এ শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা স্মরণ |
ধরন | সাংস্কৃতিক |
স্থান | শান্তিনিকেতন |
পুনরাবৃত্তির হার | বাৎসরিক |
মেলা শুরু | ৭ পৌষ (২১/২২/২৩ ডিসেম্বর) |
ব্যাপ্তি | ৩ দিন |
অতিথি | সাধারণ মানুষ |
আকর্ষণ | বাউল গান |
প্রেক্ষাপটসম্পাদনা
১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কুড়ি জন অনুগামীকে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের থেকে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। এটিই শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের মূল ভিত্তি। [২]
১৮৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৯৮ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) শান্তিনিকেতনে একটি ব্রাহ্মমন্দির স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালে ব্রাহ্মমন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে মন্দিরের উল্টোদিকের মাঠে একটি ছোটো মেলা আয়োজন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনের সেই পৌষমেলা শুধুমাত্র বীরভূম জেলার নয়, অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকেদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।[৩]
১৮৯৪ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে আয়োজিত হয়ে আসছে পৌষমেলা। ১২৬ বছরের ইতিহাসে মোট দু’বার বন্ধ থেকেছে পৌষমেলা। ১৯৪৩ সালে দেবেন্দ্রনাথের দীক্ষাগ্রহণের শতবর্ষে মন্বন্তরের কারণে এবং ১৯৪৬-এ সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে মেলা আয়োজন সম্ভব হয়নি। এই বছর কোভিড পরিস্থিতির জন্য পৌষমেলা বন্ধ থাকছে। [৪]
প্রথম দিকে ব্রাহ্মমন্দিরের (যা কাঁচমন্দির নামেও পরিচিত) উত্তর দিকের মাঠে মেলা আয়োজিত হত। সেই দিন সান্ধ্য উপাসনার পর বাজি পোড়ানো হত। পরে মেলার আয়তন বৃদ্ধি পেলে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে মেলার আয়োজন শুরু হয়।
উদ্বোধনসম্পাদনা
পৌষ উৎসব শুরু হয় ৭ পৌষ (২৩ ডিসেম্বরের কাছাকাছি কোনো তারিখ) তারিখে। ভোরবেলায় সানাই বাদনের আয়োজন করা হয়। বৈতালিক দল গান গাইতে গাইতে আশ্রম পরিক্রমা করে। এরপর ছাতিমতলায় উপাসনার আয়োজন করা হয়। এরপর উপস্থিত সবাই গান গাইতে গাইতে উত্তরায়নে উপস্থিত হন।[২] ছাতিমতলার উপাসনার আগে কোনো বৈকালিক হয়না
অন্যান্য দিনসম্পাদনা
পৌষমেলায় বাংলা লোকসংগীত (বিশেষত বাউল গানের) আয়োজন করা হয়। লোকসংগীতের সঙ্গে লোকনৃত্য ও লোকক্রীড়ার অনুষ্ঠান হয়। এই মেলায় পশ্চিমবঙ্গের সকল অঞ্চলের সাংস্কৃতিক নিদর্শনের প্রদর্শনী হয়। শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা নাচ, গান ও নাটকের আয়োজন করেন। প্রত্যেক দিনই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। মেলার শেষ দিনটি শান্তিনিকেতনের ব্যক্তিত্বদের প্রতি উৎসর্গিত।
এ তাবত পৌষমেলার সময় কোনো নাচ গান নাটক দেখিনি । ভুল তথ্য না দেওযাই ভালো।
মেলাসম্পাদনা
মেলায় প্রায় ১,৫০০টি স্টল দেওয়া হয়।[৫] মেলা উপলক্ষে তিন দিনে ১০,০০০ পর্যটক সমাবেশ হয় এখানে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, শান্তিনিকেতনে প্রতিদিন গড়ে ৩,৫০০ পর্যটক আসেন। কিন্তু পৌষ উৎসব, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্রপক্ষ ও নববর্ষ উপলক্ষে শান্তিনিকেতনে দৈনিক ৪০,০০০ বা তারও বেশি পর্যটক আসেন। তবে শান্তিনিকেতনে পর্যটক নিবাসের সংখ্যা মাত্র ৮৫ এবং তাতে সর্বাধিক ১,৬৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকায় সবাই শান্তিনিকেতনে থেকে যেতে পারেন না। যদিও এখানে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ভাড়ায় ঘর পাওয়া যায়।[৬]
স্থানীয় ছাপা কাপড়ের সামগ্রী ও কুটির শিল্প এই মেলায় পাওয়া যায়।
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Poush Mela"। West Bengal Tourism। ২০০১-০২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৪।
- ↑ ক খ Basak, Tapan Kumar, Rabindranath-Santiniketan-Sriniketan (An Introduction), p. 36, B.B.Publication
- ↑ Ghosh, Swapan Kumar, Santiniketan-Visva Bharati – Birbhumer Srestha Tirtha,Paschim Banga, February 2006, (in Bengali), Birbhum special issue, p. 250, Information and Culture department, Govt. of West Bengal
- ↑ সংবাদদাতা, নিজস্ব। "শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা বন্ধ এ বার, তবে পালিত হবে পৌষ উৎসব"। anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৩।
- ↑ "Poush Mela to start from Dec 23"। Financial Express, 22 December 2007। ২০০৭-১২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৪।
- ↑ "Santiniketan-Bolpur"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৫।
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
উইকিমিডিয়া কমন্সে পৌষমেলা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- উইকিভ্রমণ থেকে পৌষমেলা ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন