পেশেন্স কুপার

ভারতীয় অভিনেত্রী

পেশেন্স কুপার (১৯০৫–১৯৮৩) ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং বলিউডের প্রথম দিকের মহাতারকাদের মধ্যে অন্যতম। কলকাতার একটি ইঙ্গ-ভারতীয় পরিবারে জন্মগ্রহণকারী কুপার নির্বাক এবং সবাক চলচ্চিত্রে সাফল্যের সাথে কাজ করেছিলেন। তাঁকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে সর্বপ্রথম দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ের কৃতিত্ব দেয়া হয়। তিনি পত্নী প্রতাপ চলচ্চিত্রে জমজ বোনের চরিত্রে এবং কাশ্মীরী সুন্দরী চলচ্চিত্রে মা-মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে এই খেতাব অর্জন করেন।[১] যদিও আনা সালুঙ্কে ইতিপূর্বে ১৯১৭ সালে লঙ্কা দহন চলচ্চিত্রে প্রধান পুরুষ চরিত্র রাম এবং প্রধান নারী চরিত্র সীতা উভয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[২]

পেশেন্স কুপার
১৯৩০ সালে একটি প্রচারণা প্রতিকৃতিতে কুপার
জন্ম১৯০৫
মৃত্যু১৯৮৩ (বয়স ৭৭–৭৮)
পাকিস্তান
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯২০-১৯৪৬
দাম্পত্য সঙ্গীমির্জা আহমেদ ইস্পাহানি (বি. ১৯২৬)
গুল হামিদ খান (বি. ১৯৩০; মৃ. ১৯৩৬)

মঞ্চনাটকে অভিনয়জীবন সম্পাদনা

কুপার ব্যান্ডম্যান'স মিউজিক্যাল কমেডি নামের একটি ইউরেশিয়ান দলে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডানের করিন্থিয়ান স্টেজ কোম্পানিতে অভিনেত্রী হিসেবে যোগ দেন।

চলচ্চিত্র অভিনয়জীবন সম্পাদনা

 
১৯২০-এর দশকে পেশেন্স কুপার।

কুপার নল দময়ন্তী (১৯২০) তে অভিনয় করে সর্বপ্রথম সাড়া ফেলেন। ছবিটিতে কেকি আদাজানিয়া নল চরিত্রে এবং কুপার দময়ন্তী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি ম্যাডান থিয়েটারের একটি বড় বাজেটের প্রযোজনা ছিল এবং এটি পরিচালনা করেছিলেন ইউজেনিও দে লিগুরো, যিনি ইতালিতে ফ্যাসিনো দ'ওরো (১৯১৯) এর মতো প্রাচ্যবাদী আকর্ষণী প্রদর্শনীর জন্য পরিচিত ছিলেন। নল দময়ন্তী সেই সময়ে তার বিশেষ আবহের জন্য বিখ্যাত ছিল — নারদের মেরু পর্বত থেকে স্বর্গে আরোহণ, চার দেবতার নলের কলেবর পরিগ্রহ, কালীর সাপে রূপান্তর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

কুপারের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি ছিল পতি ভক্তি (১৯২২)। কুপার এই ছবিতে লীলাবতীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যেটি জেজে ম্যাডান নিজে পরিচালনা করেছিলেন। ছবির বিষয়বস্তু ছিল নারীদের তাদের স্বামীর প্রতি অনুগত হওয়া উচিত। চলচ্চিত্রটি কুপারের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসাবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও চলচ্চিত্রটি একটি ছোট বিতর্ক সৃষ্টি করে। মাদ্রাজ সেন্সর অশ্লীলতার ভিত্তিতে একটি নৃত্য দৃশ্য সরানোর আদেশ দেয়।

কুপার হিন্দি চলচ্চিত্রে সম্ভবত প্রথম দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন — পত্নী প্রতাপ (১৯২৩) ছবিতে তিনি দুই বোনের চরিত্রে এবং কাশ্মীরী সুন্দরী (১৯২৪) ছবিতে তিনি মা ও মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

কুপারের তারকা খ্যাতির একটি প্রধান দিক ছিল আলো এবং প্রযুক্তিগত ভিন্নতা সত্ত্বেও সফলভাবে 'হলিউড লুক' তৈরি। তার স্বতন্ত্র ইঙ্গ-ভারতীয় গড়ন, যেমন কালো চোখ, তীক্ষ্ণ বৈশিষ্ট্য, আবলুস চুল এবং হালকা রঙের ত্বক প্রযুক্তিবিদদের চোখের উচ্চতায় আলোর আমদানি করা কৌশল নিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ দিয়েছিল এবং নির্বাক যুগের হলিউড তারকাদের মতো একটি চেহারা অর্জন করতে সাহায্য করেছিল।

১৯২০-এর দশকে রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে চলচ্চিত্র শিল্পে মহিলাদের, বিশেষ করে হিন্দুদের কম সংখ্যার কারণে কুপারের মতো ইঙ্গ-ভারতীয় অভিনেত্রীদের ব্যাপক চাহিদা ছিল। একটানা বেশকয়েকটি সফল চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতির জন্য তাকে প্রথম ভারতীয় নারী চলচ্চিত্র তারকা বলা হয়।

পরবর্তী জীবন সম্পাদনা

সাধারণত মনে করা হত কুপার সুপরিচিত ভারতীয় ব্যবসায়ী মির্জা আহমেদ ইস্পাহানিকে বিয়ে করেন এবং ১৯৪৭ সালে তারা পাকিস্তানে চলে যান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ২১ বছর বয়সে মির্জা আহমেদ ইস্পাহানিকে বিয়ে করেছিলেন এবং কিছু সময় পরেই তাঁদের তালাক হয়ে যায়। তারপর তিনি নির্বাক চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের অভিনেতা গুল হামিদ খানকে বিয়ে করেন। ছয় বছর পর তিনি হজকিনস ডিজিজে মারা যান। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ইস্পাহানির সাথে বন্ধুত্ব রেখেছিলেন। কুপার তার নাম পরিবর্তন করে সাবেরা বেগম রাখেন এবং তার শেষ দিনগুলো তার দুই দত্তক কন্যা জিনাত এবং হালিমার সাথে পাকিস্তানের করাচিতে কাটিয়েছিলেন। তার পালক কন্যা সৈয়দা নাফীস রিজভী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে থাকেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় ১৭জন সন্তানকে লালন-পালন করেছিলেন এবং/অথবা দত্তক নিয়েছিলেন। কুপার ১৯৮৩ সালে মারা যান।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Personalities of Indian Cinema - Silent screen stars."। www.indiaheritage.org। ১৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৬ 
  2. "Dadasaheb Phalke - Father of Indian Cinema"। Dadasaheb Phalke Academy। ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা