পেনেলোপে ক্রুজ
পেনেলোপে ক্রুজ সানচেস (স্পেনীয়: Penélope Cruz Sánchez; বিকল্প উচ্চারণ: পেনেলোপি ক্রুজ, জন্ম: ২৮ এপ্রিল, ১৯৭৪) [১] একজন স্পেনীয় অভিনেত্রী। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেন। অল্প বয়সেই জামোন, জামোন. দ্য গার্ল অফ ইয়োর ড্রিমস, বেল্লা ইপোকে প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়েন। এছাড়া বিভিন্ন মার্কিন চলচ্চিত্রেও তাকে দেখা যায়। এসকল চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে, ব্লো, ভ্যানিলা স্কাই, ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা, এবং নাইন। এছাড়া স্পেনীয় চলচ্চিত্র পরিচালক পেড্রো আলমোডোভারের সাথে ব্রোকেন এমব্রাসেস, ভলভার, অল অ্যাবাউট মাই মাদার এবং পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান: অন স্ট্রেঞ্জার টাইডস চলচ্চিত্রে কাজ করার জন্যেও তিনি সুপরিচিত। তিনি প্রথম স্পেনীয় অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমি পুরস্কার (সেরা অভিনেত্রী) জয় করেন এবং হলিউড ওয়াক অফ ফেম এ নাম লিখান।
পেনেলোপে ক্রুজ | |
---|---|
জন্ম | পেনেলোপে ক্রুজ সানচেজ এপ্রিল ২৮, ১৯৭৪[১] |
পেশা | অভিনেত্রী, মডেল |
কর্মজীবন | ১৯৯২ — বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | হাভিয়ের বারদেম (বি. ২০১০) |
সন্তান | ২ |
পিতা-মাতা | আদোয়ার্দো ক্রুজ (বাবা) এনকার্না সানচেস |
ওয়েবসাইট | www |
ক্রুজ তিনবার গয়া অ্যাওয়ার্ড, দুইবার ইউরোপিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, এবং ২০০৬ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেছেন।[২] ২০০৯ সালে তিনি ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার জয় করেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বাফটা ও গয়া পুরস্কারও লাভ করেন। তিনি হচ্ছেন প্রথম স্পেনীয় অস্কার জয়ী নারী[৩][৪], এবং ষষ্ঠ হিস্পানিক ব্যক্তি। এর আগের অস্কারজয়ীরা ছিলেন, হোসে ফেরার, রিতা মোরেনো, বেনিসিও দেল তোরো (পুয়ের্টো রিকো), অ্যান্থনি কুইন (মেক্সিকো), এবং স্পেনীয় হাভিয়ের বারদেম[৩][৪] নাইন চলচ্চিত্রে কার্লা অ্যালবানিজ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১০ সালে ক্রুজ তৃতীয়বারের মতো একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাক্রুজ মাদ্রিদে আলকোবেন্দাস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা এনকারনা সানচেস একজন চুলবিন্যাসকারী এবং পিতা এদুয়ার্দো ক্রুজ একজন গাড়ি মেকানিক। তার দুই ভাইবোন রয়েছে। তার বোন মনিকা একজন অভিনেত্রী এবং ভাই এদুয়ার্দো একজন গায়ক। তার পিতার দিক থেকে তার একজন সৎবোন রয়েছে, তার নাম সালমা।[৫][৬][৭][৮] পেনেলোপে রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী হিসেবে বেড়ে ওঠেন।[৯] তার শৈশব কাটে আলকোবেন্দাসে এবং তার অধিকাংশ সময় কাটান তার দাদীর অ্যাপার্টমেন্টে।[৮][১০] তিনি বলেন তার শৈশব খুবই আনন্দে কেটেছে।[৮]
কর্মজীবন
সম্পাদনা২০০৮ সালে ক্রুজ ফিলিপ রথের দ্য ডাইং অ্যানিমেল গল্প অবলম্বনে নির্মিত ইসাবেল কোইহেতের এলিজি চলচ্চিত্রে অভিনয় মুখ্য নারী চরিত্র কনসেলা কাস্তিয়ো ভূমিকায় অভিনয় করেন।[১১] দ্য হলিউড রিপোর্টার-এর রে বেনেট ক্রুজের অভিনয় সম্পর্কে লিখেন, "আনাড়ি পুরুষতান্ত্রিক কল্পনাধর্মী চলচ্চিত্র সত্ত্বেও তিনি অসাধারণ"।[১২] পরের বছর তিনি উডি অ্যালেনের ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা চলচ্চিত্রে মানসিকভাবে ভঙ্গুর নারী, মারিয়া এলেনা, চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। সান ফ্রান্সিস্কো ক্রনিকল-এ মাইক লাসাল লিখেন, "পেনেলোপে ক্রুজ নিজেকে প্রকাশ করেছেন, যিনি মার্কিন চলচ্চিত্রে আগে এতটা ভালো ছিলেন না। হঠাৎ এবং প্রথমবারের মত তার তারকা খ্যাতি ব্যপ্ত হয়েছে। মারিয়া এলেনা হিসেবে ক্রুজ ছিলেন সেরা, আনন্দ প্রদায়ক, পরিত্যাক্ত, আবেগপ্রবণ, পূর্ণ পরিব্যপ্ত অভিনয়সম্পন্ন। তিনি আন্না মানিয়ানির মত আনন্দ প্রদায়ক ও ক্ষমতাসম্পন্ন এবং পাশাপাশি সুন্দরী। তার এমন কাউকে প্রয়োজন ছিল, যে তার মধ্য থেকে এসব বের করে আনতে পারবে।"[১৩] একই রকমভাবে দ্য গার্ডিয়ান-এর পিটার ব্র্যাডশ তার কাজের প্রশংসা করেল লিখেন, "মারিয়া এলেনা চরিত্রে অভিনয় করা ক্রুজ পিকাসো-ধর্মী চিত্রশিল্পীর আবেগপ্রবণ ও পাগলাটে প্রাক্তন স্ত্রী, তিনি যা কিছু বলেছেন তা আরও বেশি কিছু বুঝিয়েছে। এর মানে এই নয় যে তার কথায় বেশি হাসি এসেছে, বা কোন হাসি এসেছে, কিন্তু তিনি নিশ্চিতভাবে চলচ্চিত্রের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখেছেন।"[১৪] ক্রুজ এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা পুরস্কার ও গয়া পুরস্কার লাভ করেন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে তার প্রথম অস্কার জয় করেন। এছাড়া তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তিনি প্রথম স্পেনীয় অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী[১৫] এবং ষষ্ঠ হিস্পানিক অস্কার বিজয়ী ব্যক্তি।[১৬]
২০১২ সালে ক্রুজ নিউ সুপার মারিও ব্রস. টু ও নিনটেন্ডো থ্রিডিএস এক্সএল-এর প্রচারণার জন্য প্রথমবারের মত নিনটেন্ডোর বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করেন। এই বিজ্ঞাপন চিত্রে তিনি মারিও চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি উডি অ্যালেনের প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র টু রোম উইথ লাভ-এ একজন যৌনকর্মী চরিত্রে কাজ করেন, যে একজন নববিবাহিতের স্ত্রী হিসেবে অভিনয় করেন। এই কাজের তাকে পুনরায় ইতালীয় ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়। ক্রুজকে নিয়ে কাজ করতে পেরে আনন্দিত অ্যালেন এই চলচ্চিত্রে ক্রুজের কাজকে ইতালীয় আইকন আন্না মানিয়ানি ও সোফিয়া লরেনের সাথে তুলনা করেন। চলচ্চিত্রটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে, এবং ক্রুজ তার "প্রাণোচ্ছল ও কার্টুনের মত যৌন আবেদনময়ী" কাজের জন্য প্রশংসিত হন। একই বছর তিনি ইতালীয় পরিচালক সের্জিও কাস্তেলিত্তোর ভেনুতো মোন্দো চলচ্চিত্রে বন্ধ্যা ইতালীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার অতীত জানাতে সারায়েভোতে ফিরে এসেছে। কাস্তেলিত্তোর স্ত্রী মার্গারেত মাজ্জানতিনির একই নামের সর্বাধিক বিক্রীত বই অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ক্রুজ কৈশোরের শেষভাগ থেকে শুরু করে চল্লিশ বছরের শেষভাগ পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন পর্যায় উপস্থাপন করেন। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের কাছ থেকে অল্প প্রশংসা পেলেও এমিল হার্শের বিপরীতে ক্রুজের কাজ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লাভ করে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Penélope Cruz Biography"। Biography.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Festival de Cannes: Volver"। festival-cannes.com। ২০১১-০৮-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১২-১৩।
- ↑ ক খ Hollywood loves foreigners, so long as they're not the stars
- ↑ ক খ Penelope Cruz: Hollywood learns a new film language
- ↑ "Penelope Cruz's father has passed away"। এমএসএন। ১৯ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ "Penelope Cruz's father dies"। এমএসএন। ১৯ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ "Penelope Cruz Biography (1974–)"। ফিল্ম রেফারেন্স। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ ক খ গ রোজ, চার্লি (১৭ জানুয়ারি ২০১০)। "The Rising Star of Penelope Cruz (Page 2)"। সিবিএস নিউজ। ২৮ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ "Penelope Cruz, Javier Bardem Are Engaged!"। ইউএস উইকলি। ৫ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;mariéclairepage3
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ স্টেসি, লিন্ডা (৮ আগস্ট ২০০৮)। "Deluded Pupil"। নিউ ইয়র্ক পোস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ বেনেট, রে (১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)। "Elegy"। দ্য হলিউড রিপোর্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ লাসাল, মাইক (১৫ আগস্ট ২০০৮)। "Movie review: 'Vicky Cristina Barcelona'"। এসএফগেট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ ব্র্যাডশ, পিটার (৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Vicky Cristina Barcelona"। দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ রস, চার্লি (১৭ জানুয়ারি ২০১০)। "The Rising Star of Penelope Cruz (Page 1)" (ইংরেজি ভাষায়)। সিবিএস নিউজ। ২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ পারকিনসন, ডেভিড (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Hollywood loves foreigners, so long as they're not the stars"। দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- অলমুভিতে পেনেলোপে ক্রুজ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে পেনেলোপে ক্রুজ (ইংরেজি)
- টার্নার ক্লাসিক মুভিজ ডেটাবেজে পেনেলোপে ক্রুজ (ইংরেজি)
- Penélope Cruz Cannes Interview
- Penélope Cruz interviewed ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ অক্টোবর ২০১২ তারিখে by Charlie Rose of 60 Minutes originally aired January 17, 2010