পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সি

পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সি বা পূর্ব রাজ্য এজেন্সি কিংবা পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সংস্থা বা পূর্ব রাজ্য সংস্থা (Eastern States Agency) ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের শেষদিকের বছরগুলিতে ব্রিটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় দেশীয় রাজ্যগুলোর একটি জোট ছিল। ১৯৩৩ সালে তৎকালীন ছত্তিশগড় রাজ্য এজেন্সি এবং উড়িষ্যা রাজ্য এজেন্সি একীকরণের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সি গঠন করা হয়। তবে এই একীভূত এজেন্সির মধ্যে প্রাক্তন এজেন্সিগুলো তথা ছত্তিশগড় রাজ্য এজেন্সি এবং উড়িষ্যা রাজ্য এজেন্সি অক্ষত ছিল। ১৯৩৬ সালে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সির সাথে বেঙ্গল রাজ্য এজেন্সি যুক্ত করা হয়।

পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সি
ব্রিটিশ ভারতের এজেন্সি
১৯৩৩–১৯৪৮

১৯০৭ সালে বেঙ্গল, উড়িষ্যা এবং সামন্ত রাজ্য সহ ব্রিটিশ ভারতের মানচিত্র।
ইতিহাস 
• প্রাক্তন ছত্তিসগড় ও উড়িষ্যা এজেন্সি একীভূত হয়
১৯৩৩
• কোচবিহারত্রিপুরা (বেঙ্গল এজেন্সি) যুক্ত হয়
১৯৩৬
১৯৪৮
উত্তরসূরী
পূর্ব রাজ্যসংঘ

ইতিহাস সম্পাদনা

উনিশ শতক থেকে উড়িষ্যা এবং ছোট নাগপুরের দেশীয় রাজ্য এবং করদ রাজ্যগুলো বাংলা তথা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অংশ ছিল না, তবে এসব দেশীয় রাজ্য এবং করদ রাজ্যগুলোর সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্ক বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মাধ্যমে তাদের সরকার পরিচালনা করতো।

১৯৩৩ সালের ১ এপ্রিলে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সিটি গঠন করা হয়। এই সংস্থাটি বর্তমান ভারতের ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত পূর্ব ভারতের মোট চল্লিশটি দেশীয় রাজ্যের সাথে কাজ করেছিল।

১৯৩৩ সালে এই পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সি গঠনের আগে প্রাক্তন উড়িষ্যার করদ রাজ্য এবং ছোট নাগপুর করদ রাজ্য গুলোর অন্তর্ভুক্ত তেইশটি দেশীয় রাজ্য বিহারউড়িষ্যার ব্রিটিশ প্রদেশের আধিপত্যের অধীনে ছিল এবং ষোলটি দেশীয় রাজ্য ও করদ রাজ্য কেন্দ্রীয় প্রদেশের অধীনে ছিল।

 
ব্রিটিশ রাজ আমলে ছোট নাগপুর এবং উড়িষ্যা অঞ্চলের রাজনৈতিক বিভাজন। ১৯০৯ সালের ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অফ ইন্ডিয়ার প্রকাশিত মানচিত্র।

এজেন্ট ভারতের গভর্নর জেনারেলকে রিপোর্ট করেছিলেন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে দুজন রাজনৈতিক এজেন্ট সমবলপুররায়পুরে পোস্ট করা হয়েছিল। [১]

কোচবিহার এবং ত্রিপুরা রাজ্য ১৯৩৬ সালের ১ নভেম্বর বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সিতে স্থানান্তরিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বরে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সির মর্যাদা প্রথম শ্রেণীর রেসিডেন্সি হিসাবে উন্নীত করা হয়। এই রাজ্যগুলি কলকাতায় "রেসিডেন্ট"-এর অধীনে তিনটি রাজনৈতিক সংস্থায় বিভক্ত হয়েছিল। উড়িষ্যা রাজ্য এজেন্সির সদর দফতর অবস্থিত ছিল সমবলপুরে আর ছত্তিসগড় রাজ্য এজেন্সির সদর দফতর রায়পুরে অবস্থিত ছিল। অন্যদিকে বেঙ্গল রাজ্য এজেন্সির তথা সম্পূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সির সদর দফতর কলকাতায় অবস্থিত ছিল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য থেকে ব্রিটিশ শাসন প্রত্যাহার করে ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়া হলে রাজ্যগুলো ভারতের নতুন ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দেয় অর্থাৎ রাজ্য গুলো ভারত অধিরাজ্যে যোগ দান করে। ভারতের যোগদান কারী পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য একত্রিত হয়ে পূর্ব রাজ্য ইউনিয়ন গঠন করে। যদিও এটি ছিল একটি ব্যর্থ সংস্থা এবং অল্প সময় পরেই তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। [২] পরবর্তিতে পূর্ব রাজ্য ইউনিয়নের এসব রাজ্য পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এজেন্সির সবগুলো রাজ্য ভারতের মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যা রাজ্যে একীভূত হয়। [৩] মধ্য প্রদেশের পূর্ব অংশ এবং বিহার রাজ্যের দক্ষিণ অংশটি ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে যথাক্রমে ছত্তিশগড়ঝাড়খণ্ড রাজ্যে পরিণত হয়।

পূর্ব রাজ্য এজেন্সি দেশীয় রাজ্য সম্পাদনা

উড়িষ্যা রাজ্য এজেন্সি সম্পাদনা

উড়িষ্যা রাজ্য এজেন্সির অন্তর্ভুক্ত স্যালু্ট রাজ্য, অগ্রাধিকার অনুসারে তালিকাকৃত:

  • কালাহাণ্ডি, উপাধি এইচ এইচ মহারাজা, ৯-বন্দুকের বংশগত সালাম
  • ময়ূরভঞ্জ, উপাধি এইচ এইচ মহারাজা, ৯-বন্দুকের বংশগত সালাম
  • পাটনা, উপাধি এইচ এইচ মহারাজা, ৯-বন্দুকের বংশগত সালাম
  • সোনপুর, উপাধি এইচ এইচ মহারাজা, ৯-বন্দুকের বংশগত সালাম

স্যালুট-বিহীন রাজ্য:

ছত্তিসগড় রাজ্য এজেন্সি সম্পাদনা

ছত্তিসগড় রাজ্য এজেন্সিতে শুধু অ-স্যালুট রাজ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। এগুলো হল:

বেঙ্গল রাজ্য এজেন্সি সম্পাদনা

বেঙ্গল রাজ্য এজেন্সির অন্তর্ভুক্ত দুইটি রাজ্যই ছিল স্যালুট রাজ্য। এগুলো হল:

  • কুচবিহার, উপাধি মহারাজা, ১৩-বন্দুকের বংশগত সালাম
  • ত্রিপুরা, উপাধি মহারাজা, ১৩-বন্দুকের বংশগত সালাম

বিহার রাজ্য এজেন্সি সম্পাদনা

স্যালুট-বিহীন রাজ্য:

  • মোহরামপুর জায়গীর, উপাধি রাজা সাহেব
  • দ্বারভাঙা, উপাধি মহারাজধিরাজ
  • রামগড়, উপাধি রাজা বাহাদুর
  • দিঘোয়ারা এস্টেট, উপাধি রাজা
  • তাজপুর এস্টেট, উপাধি রাজা সাহেব
  • বনাইলি এস্টেট, উপাধি মহারাজা
  • কাহড়া এস্টেট, উপাধি রাজা
  • ভৌর এস্টেট, উপাধি রাজা
  • চানুর এস্টেট, উপাধি রাজা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Devi, Bandita (১৯৯২)। Some Aspects of British Administration in Orissa (1912–1936)। Academic Foundation। পৃষ্ঠা 213। আইএসবিএন 81-7188-072-X 
  2. Sadhna Sharma ed. States Politics in India, 1995, p. 273
  3. "Amalgamation of Princely States" (পিডিএফ)। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা