পাশ (হিন্দুধর্ম)

অতিপ্রাকৃত অস্ত্র, দড়ির ফাঁস ইত্যাদি

পাশ হল হিন্দু মূর্তিতত্ত্বে বর্ণিত একটি অতিপ্রাকৃত অস্ত্র। দড়ির এক বিশেষ ধরনের ফাঁসকে পাশ বলে। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে, এটি হল গণেশ, যম, বরুণ প্রমুখ কয়েকজন হিন্দু দেবতার অন্যতম অস্ত্র।

বিঘ্ননাশের দেবতা গণেশের সাধারণ প্রতীক;[১] বিঘ্নকে বন্ধন এবং মানুষকে বিঘ্ন থেকে মুক্তি দান করার তাঁর যে শক্তি, সেই শক্তিরই প্রতীক হল পাশ। মৃত্যুদেবতা যম পাশের মাধ্যমে মৃত্যুকালের জীবের দেহ থেকে আত্মাকে টেনে বের করে আনেন।[২] শাস্ত্রীয় বর্ণনায় দেখা যায়, পাশে একটি বা দু’টি গিঁটে দু’টি বা তিনটি বন্ধনী রয়েছে।[৩]

সংস্কৃত ভাষায় "পাশ" শব্দটির আদি অর্থ "গিঁট" বা "গ্রন্থিবন্ধন"।[৪] সাধারণত শত্রুর হাত-পা বাঁধার জন্য অথবা পশু শিকারের জন্য পাশ ব্যবহৃত হয়।[৩][৪] পাশ জাগতিক আসক্তির প্রতীক; আবার অমঙ্গল বা অজ্ঞানকে বন্দী ও বন্ধন করার কোনও দেবতার যে ক্ষমতা, তারও প্রতীক।[১] আনন্দ কুমারস্বামী পাশের সঙ্গে জাগতিক বন্ধনের যোগটি ব্যাখ্যা করেছেন।[৪]

হিন্দুধর্মের শৈব সিদ্ধান্ত সম্প্রদায়ে পাশ হল ‘পতি-পশু-পাশ’ ত্রয়ীর একটি অংশ। এই তিনটি শব্দের অর্থ হল যথাক্রমে "প্রভু, পশু, রজ্জু"; যা ঈশ্বর, মানব ও জগতের প্রতীক। "পতি" শব্দের মাধ্যমে ঈশ্বরকে শিব রূপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, তিনিই এই সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা। "পশু" হল মানুষের আত্মা এবং "পাশ" হল শিবের একটি বিশেষ ক্ষমতা। এই ক্ষমতার বলে তিনি আত্মাকে সত্যের পথে পৌঁছে দিতে পারেন অথবা এই ক্ষমতার বলে তিনি "অজ্ঞ" জীবকে তাঁর মায়ার প্রতি প্ররোচিতও করতে পারেন।[২][৫]

অলংকরণ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Eva Rudy Jansen (১৯৯৩)। The Book of Hindu Imagery: Gods, Manifestations and Their Meaning। Binkey Kok Publications। আইএসবিএন 978-90-74597-07-4 
  2. James G. Lochtefeld (২০০২)। "Pasha"। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: N-Z। The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 505। আইএসবিএন 978-0-8239-3180-4 
  3. Rao, T.A. Gopinatha (১৯১৪)। Elements of Hindu iconography। 1: Part I। Madras: Law Printing House। পৃষ্ঠা 8। 
  4. René Guénon (২০০৪)। Symbols of Sacred Science। Sophia Perennis। পৃষ্ঠা 328–330। আইএসবিএন 978-0-900588-77-8 
  5. Subramuniya; Subramuniya (Master.) (২০০০)। Loving Ganeśa: Hinduism's Endearing Elephant-faced God। Himalayan Academy Publications। পৃষ্ঠা 508। আইএসবিএন 978-1-934145-17-3