পাকিস্তান গণপরিষদ
পাকিস্তানের গণপরিষদ (উর্দু: پاکستانی آئین ساز اسمبلی) ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল।[১] ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলাপের জন্য গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন কর্তৃক আহূত ১৯৪৭ সালের ৩ জুনের সম্মেলনে নতুন রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের জন্য দুইটি গণপরিষদ গঠনের আদেশ জারি করা হয়েছিল যা ১৯৪৭ সালের ২৬ জুন গ্যাজেট অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়। এসময় ৬৯ সদস্য নিয়ে পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়। এদের মধ্যে একজন নারী সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৭৯ করা হয়।[২]
পাকিস্তান গণপরিষদ آئین ساز اسمبلی | |
---|---|
ইতিহাস | |
শুরু | ১১ আগস্ট ১৯৪৭ |
বিলুপ্তি | ২৪ অক্টোবর ১৯৫৪ |
পূর্বসূরী | সাম্রাজ্যিক বিধান পরিষদ ও ভারতের গণপরিষদ |
উত্তরসূরী | পাকিস্তানের সংসদ |
নেতৃত্ব | |
President | |
আসন | ৯৬ |
সভাস্থল | |
করাচি |
পরিষদ গঠন
সম্পাদনাব্রিটিশ ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় ভারত অধিরাজ্য ও পাকিস্তান অধিরাজ্য নামের দুইটি ডোমিনিয়ন গঠিত হয়। স্বাধীনতা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রণীত ভারত স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ অনুযায়ী সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানে দুইটি গণপরিষদ স্থাপিত হয়। আইনে সাবেক কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের হাতে ন্যস্ত সকল ক্ষমতা গণপরিষদের হাতে ন্যস্ত করা হয় এবং এই আইন অনুযায়ী সংবিধান প্রণয়ন ও তা কার্যকর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষমতা পরিষদকে প্রদান করা হয়।[১][২] গণপরিষদ মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট গণপরিষদে মুসলিম লীগের সদস্য ছিলেন ৫৯জন।[১]
বৈঠক
সম্পাদনা১৯৪৭ সালের ১০ আগস্ট করাচির সিন্ধু পরিষদ ভবনে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরেরদিন ১১ আগস্ট মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ সর্বসম্মতিক্রমে পরিষদের স্পিকার হন।[১][২] একই দিনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। ১২ আগস্ট অনুমোদিত একটি প্রস্তাবে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহকে সরকারিভাবে কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ হিসেবে সম্বোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইদিনে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত কমিটি গঠিত হয়।[২]
১৪ আগস্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন লর্ড মাউন্টব্যাটেন পরিষদে ভাষণ দেন। মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ এরপর একটি বক্তব্য রাখেন এবং এতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি উল্লেখ করা হয়।[২]
সংবিধান প্রণয়ন
সম্পাদনা১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান লক্ষ্য প্রস্তাব তুলে ধরেন। ১২ মার্চ তা পরিষদে গৃহীত হয়। একই দিনে লক্ষ্য প্রস্তাবের ভিত্তিতে খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য ২৪ সদস্যবিশিষ্ট মূলনীতি কমিটি গঠিত হয়।[১][২] এছাড়া কয়েকটি উপকমিটি গঠিত হয়েছিল।[১] তবে নেতাদের আভ্যন্তরীণ বিভেদের কারণে সংবিধান প্রণয়নে বিলম্ব হয়েছিল।[১] ১৯৫৪ সালে খসড়া সংবিধান প্রণীত হয়। তবে তা পরিষদে গৃহীত হওয়ার পূর্বে গভর্নর জেনারেল মালিক গোলাম মুহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর পরিষদ বিলুপ্ত করে জরুরি অবস্থা জারি করেন।[২]
স্পিকার মৌলভি তমিজউদ্দিন খান এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করেন। মামলায় স্পিকার জয়ী হলেও সরকার পক্ষের আপিলের পর ফেডারেল আদালত রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে গভর্নর জেনারেলের আদেশ বহাল রাখেন।[২][৩]
মালিক গোলাম মুহাম্মদ আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯৫৫ সালের ২৮ মে গভর্নর জেনারেলের আদেশ নং ১২ এর মাধ্যমে দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠন করেন।[১][২] দ্বিতীয় গণপরিষদের ৮০ জন সদস্যের মধ্যে অর্ধেক পূর্ব পাকিস্তান এবং অর্ধেক পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন। পরিষদে এক ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়[২] যার মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানে তৎকালীন বিদ্যমান চারটি প্রদেশ যথা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ ও বালুচিস্তান নিয়ে একটি প্রদেশ গঠন করা হয়।
১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় গণপরিষদে খসড়া সংবিধান পেশ করা হয়। একই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি তা পরিষদে পাস হয়। ২ মার্চ গভর্নর জেনারেল এতে সম্মতি দেন। ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ থেকে সংবিধান কার্যকর করা হয়।[২]