পদার্থবিজ্ঞানে নারী

উইকিমিডিয়ার তালিকা নিবন্ধ

পদার্থ বিজ্ঞানে নারীদের অবদান গবেষণা, নিবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশনার মধ্যে ব্যাপ্ত। তিনজন নারী নোবেল পুরস্কারও বিজয় করেন।

নোবেল বিজয়ী সম্পাদনা

মারিয়া স্ক্লদভ্‌স্কা ক্যুরি
 
মারিয়া স্ক্লদভ্‌স্কা ক্যুরি
জন্মনভেম্বর ৭ ১৮৬৭
মৃত্যু৪ জুলাই ১৯৩৪(1934-07-04) (বয়স ৬৬)
স্বাক্ষর
 
  • ১৯০৩, মেরি কিউরি : "অধ্যাপক হেনরি বেকেরেলের আবিষ্কৃত রেডিওলজিকাল ঘটনা নিয়ে তার যৌথ গবেষণার মাধ্যমে তিনি অসাধারণ পরিষেবার স্বীকৃতি দিয়েছেন।" [১] তিনিই ছিলেন পদার্থ বিদ্যায় নোবেল বিজয়ী প্রথম নারী৷ ১৯১১ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নোবেল লাভ করেন৷ তবে সেবার পেয়েছিলেন রসায়নে৷ তাই দুটি বিভাগে নোবেল পুরস্কার জিততে পারা প্রথম নারীও তিনি৷[২] তিনি রাশিয়া বিভাগের সময় পোল্যান্ডের ওয়ার্সতে ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত শিক্ষক বরিন্সলা, নী বগুস্কা ও ভ্লাদিস্লাও স্ক্লদভস্কির পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্ব-কনিষ্ঠ। ১৮৬৩ থেকে ১৮৬৫ এর মধ্যে ঐতিহাসিক জানুয়ারি আপ্সপ্রিং-এর সময় পোল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে মারি ক্যুরির পৈতৃক এবং নানা বাড়ির সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে যায়। এই কারণে মারি ক্যুরি এবং তার ভাইবোনদের খুব অল্প বয়সেই জীবন সংগ্রাম দেখতে হয়। ১০ বছর বয়সে মারিয়া ভর্তি হয়েছিলেন যে.সিকরস্কা পরিচালিত বোর্ডিং স্কুলে। পরে তিনি বালিকাদের জিমনেশিয়ামে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই ১৮৮৩ সালের ১২ জুন স্বর্ণপদক সহ স্নাতক লাভ করেন। পরের বছর তিনি তার পিতার নিকটাত্মীয়ের সাথে গ্রামে এবং তারও পরবর্তী বছর তার পিতার সাথে ওয়ার্সতে বসবাস করেন এবং কিছু সময় গৃহ শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৯০ এর শুরুতে, বরিনস্লাও –যিনি কিছু মাস আগে পোলিশ পদার্থবিদ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কাজিমিয়েরজ দলাস্কিকে বিয়ে করেন। ১৮৯১ এর শেষভাগে মারিয়া পোল্যান্ড থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। প্যারিসে, ১৮৯১ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং গণিতে অধ্যয়ন করতে থাকেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই ল্যাটিন কোয়ার্টারে একটি গ্যারেট ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৮৯৫ সালে উইলহেলম রন্টগেন্ট এক্স-রে আবিষ্কার করেন। এই পোলীয় ও ফরাসি বিজ্ঞানী ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণার জন্য তার স্বামী পিয়ের ক্যুরি এবং তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক অঁরি বেকেরেলের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। ১৮৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল ক্যুরিরা খুব আশাব্যঞ্জক ভাবে পিচব্লেন্ডের ১০০ গ্রামের একটি নমুনা পেয়েছিলেন এবং পেসল ও মর্টার দিয়ে একে চূর্ণ করেছিলেন। সেই সময়ে তাঁরা ধারনাও করতে পারেননি তাঁরা যা খুঁজছেন তা এত অল্প পরিমাণে রয়েছে যে তাঁদের পরবর্তীকালে এটার জন্য টনের পর টন খনিজ বিশ্লেষণ করতে হবে। ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে ক্যুরি এবং তাঁর স্বামী যৌথভাবে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে একটি মৌলের অস্তিত্ব ঘোষণা করেন যার নাম দেয়া হয় "পোলনিয়াম", ক্যুরির জন্মস্থান পোল্যান্ডের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই নাম দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে আরও বিশ বছর তিনটি সাম্রাজ্যে বিভক্ত ছিল ঐ বছরেরই ২৬ ডিসেম্বরে ক্যুরিরা দ্বিতীয় একটি মৌলের অস্তিত্ব ঘোষণা করেন, তাঁরা এর নাম দিয়েছিলেন "রেডিয়াম", এই শব্দের উপত্তি ল্যাটিন শব্দ ‘’রে’’ থেকে। তাঁদের গবেষণা চালাতে চালাতেই তাঁরা ‘’তেজস্ক্রিয়তা’’ শব্দটি প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁদের আবিষ্কারকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে ওঠানোর জন্য তাঁরা পোলনিয়াম এবং রেডিয়াম বিশুদ্ধ আকারে পাওয়ার চেষ্টা করেন। ১৮৯৮ সাল থেকে ১৯০২ সালের মধ্যে ক্যুরিদ্বয় (পিয়েরে এবং মারি) একসাথে কিংবা এককভাবে ৩২টি বৈজ্ঞানিক পত্র প্রকাশ করেন যাদের একটি উল্লেখ ছিল যে রেডিয়ামের প্রভাবে রোগাক্রান্ত, টিউমার সৃষ্টিকারী কোষ সুস্থ কোষের চেয়ে তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়। [৩] ১৯০০ সালে ক্যুরি একোল নরমাল সুপেরিয়র এর প্রথম ফ্যাকাল্টি সদস্য হন এবং তাঁর স্বামী প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিতে যোগ দেন। তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রথম মহিলা অধ্যাপক ছিলেন এবং তিনই ছিলেন প্রথম মহিলা যার অসামান্য মেধার কারণে ১৯৯৫ সালে প্যান্থিয়নে সমাহিত করা হয়।[৪]
মারিয়া গ্যোপের্ট-মায়ার
 
মারিয়া গ্যোপের্ট-মায়ার
জন্ম(১৯০৬-০৬-২৮)২৮ জুন ১৯০৬
মৃত্যু২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২(1972-02-20) (বয়স ৬৫)
স্বাক্ষর
 

১৯০৬ সালের ২৮ জুন আপার সিলিসিয়ার (বর্তমান জার্মানি) কাট্টোউইটজ শহরে মারিয়ার জন্ম। তার বাবা ফ্রেডেরিক গোয়েপার্ট ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তার মা মারিয়া নী উলফ ছিলেন গৃহিণী। ১৯১০ সালে মারিয়ার বাবা গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরই সুবাদে সপরিবারে তারা গ্যোটিঙেন শহরে আসেন । এখানেই মারিয়ার বর্ণিল শিক্ষাজীবনের সূচনা ঘটে। তিনি প্রথমে ‘দ্যা টিসিং, গোটেনজান স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯২১ সালে তিনি ফ্রয়েন্সটুডিয়াম নামে এক বেসরকারি হাই স্কুলে ভর্তি হন। নারী অধিকার-কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলের মূল লক্ষ্য ছিল স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোগী করে গড়ে তোলা। সতের বছর বয়সে মারিয়া জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেন। এই পরীক্ষায় পাশের মাধ্যমে তার উচ্চ শিক্ষা লাভের স্বপ্ন পূরণ হয়। ১৯২৪ সালে মারিয়া তার বাবার কর্মস্থল গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দশজনের মাঝে একজন নারী শিক্ষার্থী ছিল। সেই সময় গণিত বিষয়ে ছাত্রী বা শিক্ষিকা ছিল বেশ দুর্লভ। গণিতের কোন কোন ক্ষেত্রে নারীরা অবদান রাখতে পারবে সেটাও নিশ্চিত ছিল না। তাই কর্মসংস্থান সংকটের আশঙ্কায় অনেক নারীই গণিতে পড়তে অনাগ্রহী ছিল। এমনকি তখন গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের মাত্র একজন নারী অধ্যাপক ছিলেন। তবে ভর্তি হওয়ার পর মারিয়া বুঝতে পারেন গণিতের চেয়ে বরং পদার্থবিজ্ঞানেই তার আগ্রহ বেশি। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৩০ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তার গবেষণার মূল বিষয় ছিল পরমাণুকেন্দ্রিক। কোনো অণু বা পরমাণু একই বা পৃথক কম্পাঙ্কের ২টি ফোটনকে শোষণ করে নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে যেতে পারে কি না সেটাই ছিল তার গবেষণার বিষয়। তাত্ত্বিকভাবে তার অনুসন্ধানটি সফল হলেও তখনকার সময়ে তার পরীক্ষামূলক ফলাফল বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে লেজার উদ্ভাবনের পর ১৯৬১ সালে গবেষণাগারে এর সত্যতা মেলে। তাই তার এই অসামান্য কীর্তির স্মরণে তার নামের আদ্যক্ষর অনুসারে অণু বা পরমাণুর ২টি ফোটন শোষণের সম্ভাব্যতার এককের নাম রাখা হয়েছে জিএম’ (১ জিএম= ১০−৫০ সিএম৪ এস ফোটন−১)। তবে মারিয়া এই সাফল্যের জন্য বিখ্যাত জার্মান গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স বর্নের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ ছিলেন। তার নির্দেশনাতেই মারিয়া পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞানলাভ করেন। পিএইচডি গবেষণাকালে মারিয়া জেমস ফ্রাঙ্কের গবেষণা সহযোগী আমেরিকান বিজ্ঞানী জোসেফ এডওয়ার্ড মায়ারের প্রেমে পড়ে যান। সেই প্রেম পরিপূর্ণতা পায় ১৯৩০ সালের ১৯ জানুয়ারি। বিয়ের পর মারিয়া তার স্বামীর সাথে স্বদেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। তবে প্রবাসে তার কর্মজীবনের শুরুটা ভালো ছিল না। তিনি জোসেফের সাথে বাল্টিমোরে অবস্থিত জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের চেষ্টা করেন। তবে প্রফেসরের স্ত্রী হিসেবে তাকে শিক্ষিকা হিসেবে নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। শেষমেষ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জার্মান অনুবাদকদের সহকারী হিসেবে যোগ দেন। তার বেতন খুব কম ছিল। তবে তিনি তাতে দমে যাননি। সীমিত সুযোগের মাঝেও তিনি গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এরই ফলস্বরূপ ১৯৩৫ সালে তিনি ডাবল বিটা ক্ষয়ের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তৎকালে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে তেমন গবেষণা হত না। কিন্তু মারিয়া খ্যাতনামা অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান পদার্থবিদ কার্ল ফার্ডিনান্ড হার্জফিল্ডের সুনজরে পড়েন। হার্জফিল্ড এবং স্বামীর অনুপ্রেরণায় তিনি রাসায়নিক পদার্থবিদ্যায় গবেষণা শুরু করেন। বিভিন্ন জৈব অণুর বর্ণালি নিয়ে তিনি হার্জফিল্ড এবং স্বামীর সহায়তায় বেশ কিছু পেপার প্রকাশ করেন। দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার পর মারিয়া কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চাকরি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ারম্যান তার জন্য অফিস বরাদ্দ দেন। কিন্তু তাকে সেখানে কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক প্রদান করা হত না। সম্পূর্ণ অবৈতনিকভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এর মাঝে হ্যারল্ড উরি এবং বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। বলা বাহুল্য, এই এনরিকো ফার্মিকেই ‘নিউক্লিয়ার যুগের স্থপতি’ বলা হয়ে থাকে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে তিনিই সর্বপ্রথম নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর তৈরি করেন। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে মারিয়া বেতনভুক্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে সারাহ লরেন্স কলেজে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা তৈরির গোপন মিশন ‘ম্যানহাটান প্রজেক্ট’-এ অংশ নেন। মারিয়ার মূল কাজ ছিল উরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপ থেকে প্রাকৃতিক বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম পৃথক করা। বিষয়টি সহজ বলে মনে হলেও গবেষকদের কাছে ছিল সেটা বড়ই দুঃসাধ্য। কারণ ইউরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপে মাত্র ০.৭২ শতাংশ প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম রয়েছে। এত ক্ষুদ্র পরিমাণ অংশ শনাক্ত ও পৃথকীকরণ খুবই কঠিন কাজ। এই বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে মারিয়া ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইডের রাসায়নিক এবং তাপগতিবিদ্যার ধর্মসমূহ অবলোকন করেন। তিনি আলোকরাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আইসোটোপ পৃথক করার পরামর্শ দেন। তার সেই তত্ত্ব সেকালে বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তবে লেজার রশ্মির আবির্ভাবে আলোর সাহায্যে আইসোটোপ থেকে প্রাকৃতিক মৌল পৃথক করা সম্ভব হয়েছে। এই সময় তিনি টেলার সুপার বোমের অবতারণাকারী এডওয়ার্ড টেলারের সান্নিধ্যে আসেন। টেলারের সুপার বোম তৈরিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ১৯৪৬ সালে তিনি শিকাগোতে চলে আসেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের স্বেচ্ছাসেবী সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকার কারণে তাকে আর্গন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির খণ্ডকালীন গবেষক হিসেবেও নির্বাচিত করা হয়। আর্গন ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারটি করেন। ১৯৫০ সালে বিভিন্ন আইসোটোপের স্থিতিশীলতা নিয়ে গবেষণাকালে তিনি নিউক্লিয়াসের গঠন নিয়ে জগদ্বিখ্যাত একটি মডেল প্রকাশ করেন। সেটি ‘নিউক্লিয়ার শেল মডেল’ নামে বিজ্ঞানমহলে সুপরিচিত। তার এই মডেল অনুসারে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে থাকা সুনির্দিষ্ট সংখ্যক নিউক্লিয়ন দ্বারা (নিউট্রন আর প্রোটনকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলে) পরমাণুর স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। এছাড়াও তিনি এই মডেলের সাহায্যে কোনো স্থিতিশীল পরমাণুর নিউক্লিয়াসে বিদ্যমান প্রোটন বা নিউট্রনের সংখ্যাও নির্ণয় করতে সক্ষম হন। বিখ্যাত হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান পদার্থবিদ ইউজিন উইগনার সেই সংখ্যাগুলোর নাম দেন ‘ম্যাজিক নাম্বার’ বা জাদুকরী সংখ্যা। সেই সংখ্যাগুলো হলো ২, ৮, ২০, ২৮, ৫০, ৮২ ও ১২৬। কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে এই সংখ্যাগুলোর যেকোনো একটি সংখ্যার সমপরিমাণ প্রোটন বা নিউট্রন থাকলেই পরমাণুটি স্থিতিশীল বলে গণ্য হবে। তবে উইগনার এই মডেলের কার্যকারিতা নিয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন। মারিয়ার সমসাময়িক কালে আরও তিন জার্মান বিজ্ঞানী অটো হ্যাক্সেল, জেন্সেন এবং সুএস এই একই বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন এবং একই ফলাফলে উপনীত হন। ফলে তার অনুসন্ধান সঠিক বলে স্বীকৃতি পায়। ১৯৫০ সালে মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ার তার স্বদেশী বিজ্ঞানী হ্যান্স জেন্সেনের সাথে দেখা করেন। ১৯৫৫ সালে তারা সম্মিলিতভাবে ‘পারমাণবিক শেল কাঠামোর প্রাথমিক তত্ত্ব’ নামে তাদের উভয়ের গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। তদানীন্তন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের দুজন শীর্ষ বিজ্ঞানীর এই মেলবন্ধন সত্যিই প্রশংসনীয়। এই সাড়া জাগানো গবেষণার জন্য ১৯৬৩ সালে মারিয়া গোপার্ট মায়ার, জেন্সেন এবং উইগনারকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। মেরি কুরির পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন মারিয়া। শুধু তা-ই নয়, আমেরিকান নারী হিসেবে তিনি প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নোবেলজয়ী পদার্থবিদ।

ডনা স্ট্রিকল্যান্ড
 
জন্ম
ডনা থিও স্ট্রিকল্যান্ড

(1959-05-27) ২৭ মে ১৯৫৯ (বয়স ৬৪)
গুয়েলফ, অন্টারিও, কানাডা
  • ২০১৮, ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড : ৫৫ বছর বয়সী এ বিজ্ঞানী "অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, উচ্চ তীব্রতার অপটিক্যাল ডাল পাওয়ার জন্য একটি পদ্ধতি আবিষ্কারে তার ভূমিকার জন্য।" এর জন্য নোবেল পুরুস্কার পান। [৬] তাঁর নোবেলজয় প্রসঙ্গে আরেক নারীবিজ্ঞানী, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী, রোয়েসিন ওয়ানস বলেন, ‘‘ঐতিহাসিকভাবে এটি সত্য যে গবেষণায় পুরুষের তুলনায় নারী কম৷ কিন্তু বিজ্ঞানসহ সর্বত্র পরিবর্তনকে মাথায় রেখে এই অসাম্যকে ভাঙতে হবে৷’’ অসাম্য দূর করার কাজটি যে ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড শুরু করলেন তাতে আর সন্দেহ কী![২] কানাডার নাগরিক ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড ১১০ বছর পর তৃতীয়তম নারী হিসাবে নোবেল পান। তিনি ১৯৫৯ সালের ২৭ মে কানাডার অন্টারিওতে জন্মগ্রহণ করেন ডোনা থিও স্ট্রিকল্যান্ড। তাঁকে লেজারের ব্যবহারিক ক্ষেত্রের পথপ্রদর্শক বলা হয়। তিনি ক্রিপড পালস অ্যামপ্লিফিকেশন তৈরি করেছেন। এ পদ্ধতিতে উচ্চ ঘনত্বের আলট্রাশট পালস তৈরি করা যায়, যা লেজার সার্জারিসহ বিভিন্ন গবেষণায় কাজে লাগে। তিনি বর্তমানে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৮১ সালে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিকসে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৮৯ সালে রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তাঁর ডক্টোরাল থিসিসের বিষয় ছিল ‘ডেভেলপমেন্ট অব অ্যান আলট্রা-ব্রাইট লেজার অ্যান্ড অ্যান অ্যাপ্লিকেশন টু মাল্টি-ফোটন আয়োনাইজেশন’। তাঁর সুপারভাইজার ছিলেন জেরার্ড মৌরৌ। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সময় তাঁরা ক্রিপড পালস অ্যাম্পলিফিকেশন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কানাডার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলে গবেষক হিসেবে কাজ করেন ডোনা। ১৯৯২ সালে পদার্থবিদ হিসেবে লরেন্স লাইভমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির লেজার বিভাগে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে ২০১৩ সালে অপটিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনা। এ ছাড়া ২০০৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত অপটিকস লেটার্স সাময়িকীর টপিক্যাল সম্পাদক ছিলেন।[৭]

তিনজন মহিলা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন, যা ১৯০১ সাল থেকে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস দ্বারা প্রদান করা হয়। প্যারি কুরি এবং হেনরি বেকেরেলের সাথে ১৯০৩ সালে পুরস্কার প্রাপ্ত প্রথম মহিলা ছিলেন মেরি কুরি - তিনি একমাত্র মহিলা হিসেবে বিবেচিত হন যিনি দুটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন (দ্বিতীয় পুরস্কারটি রসায়নে ১৯১১ সালের নোবেল পুরস্কার)। [৮] মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ার ১৯৬৩ সালে দ্বিতীয় নারী হিসেবে পুরস্কার জিতেছিলেন , পারমাণবিক ভূত্বকের গঠন বোঝার জন্য তার অবদানের জন্য। ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড আল্ট্রা-শর্ট, হাই-ইনটেনসিটি লাইট ডাল নিয়ে কাজ করার জন্য ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন, যা তিনি ৮০-এর দশকে জেরার্ড মোরোর সাথে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন।

পদার্থবিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণের তালিকা সম্পাদনা

উল্লেখযোগ্য মহিলা পদার্থবিজ্ঞানী সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

  • বিজ্ঞানে নারী ।
  • ভূতত্ত্ববিদ্যায় নারী ।
  • রসায়নে নারী
  • ইতিহাস জুড়ে বিজ্ঞানে নারীর অর্জন

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Nobel Prize in Physics 1903"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-০৮ 
  2. Welle (www.dw.com), Deutsche। "পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী নারী | DW | 04.10.2018"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৩ 
  3. "Marie Sklodowska Curie", Encyclopedia of World Biography, 2nd ed., vol. 4, Detroit, Gale, 2004, pp. 339–41. Gale Virtual Reference Library. Web. 3 June 2013.
  4. Marie Curie Enshrined in Pantheon
  5. "The Nobel Prize in Physics 1963"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-০৮ 
  6. "The Nobel Prize in Physics 2018"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-০৮ 
  7. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "নোবেল পেলেন অচিনপুরের মেয়ে"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "The Nobel Prize in Chemistry 1911"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-০৮ 
  9. Institutions de physique। Chez Prault fils। ১৭৪০। ওসিএলসি 807761077 
  10. "Polski Slownik Biograficzny"। Books Abroad। ১৯৩৬। আইএসএসএন 0006-7431ডিওআই:10.2307/40077307  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  11. The Impact of Emmy Noether's Theorems on XXIst Century Physics in Teicher। Teicher। ১৯৯৯।  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  12. "Katharine Burr Blodgett"। Physics Today। আইএসএসএন 0031-9228ডিওআই:10.1063/1.2913969 
  13. Frisch, O. R.। "Disintegration of Uranium by Neutrons: a New Type of Nuclear Reaction"। Nature। আইএসএসএন 0028-0836ডিওআই:10.1038/143239a0  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  14. Under the radar : the first woman in radio astronomy, Ruby Payne-Scott। McGee, Richard X.। Springer। ২০০৯। আইএসবিএন 9783642031410ওসিএলসি 567353180 
  15. Dictionary of scientific biographyআইএসবিএন 0684101149ওসিএলসি 89822 
  16. "The 2009 Bower Award in Science presented to Sandra Faber"। Journal of the Franklin Institute। আইএসএসএন 0016-0032ডিওআই:10.1016/j.jfranklin.2010.02.011 
  17. "U.S. Senate confirms new DOE science chief"। Science। ২০১৫-১২-১১। আইএসএসএন 0036-8075ডিওআই:10.1126/science.aad1645  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  18. Mayer, Maria Gertrude Goeppert (1906-1972), physicist। American National Biography Online। Oxford University Press। ২০০০।  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  19. "Light Changed to Matter, Then Stopped and Moved"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-০২ 
  20. "A New Form of Matter: II | Science Mission Directorate"। ২০১৯-০৪-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-০২ 
  21. "Higgs hunter will be CERN's first female director: Italian physicist Fabiola Gianotti will take the reins at the European physics powerhouse in 2016"। Nature। ২০১৪।  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)