পতাকা সত্যাগ্রহ

অভিযান

ভারতে, পতাকা সত্যাগ্রহ (হিন্দি: झंडा सत्याग्रह), হল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় শান্তিপূর্ণ আইন অমান্য প্রচারাভিযান। জাতীয়তাবাদী পতাকা উত্তোলন করার অধিকার ও স্বাধীনতা পাবার উদ্দেশ্যে করা এবং ভারতে জাতীয়তাবাদী পতাকা উত্তোলন এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিষিদ্ধকারী ব্রিটিশ আইনের বৈধতাকে আপত্তি জানিয়ে এই আন্দোলন শুরু হয়। পতাকা সত্যাগ্রহ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিচালিত হয় নাগপুর শহরে ১৯২৩ সালে, কিন্তু ভারতের অন্যান্য অংশেও এই আন্দোলন চলেছিল।

পটভূমি সম্পাদনা

ব্যক্তিগতভাবে ও প্রকাশ্যে ভবনগুলিতে (কখনও কখনও সরকারী ভবন সহ) জাতীয়তাবাদী পতাকা উত্তোলন একটি সাধারণ জাতীয়তাবাদী কার্যক্রম ছিল, বিশেষতঃ ভারতের বিপ্লবী স্বাধীনতা আন্দোলন এবং গদর পার্টির বিপ্লবীদের ক্ষেত্রে। এই ধরনের বিরুদ্ধাচরণ সারা ভারত জুড়ে বহু জাতীয়তাবাদী নেতার জন্ম দিয়েছিল, যেমন বাল গঙ্গাধর তিলক, বিপিনচন্দ্র পাল এবং লালা লাজপত রায়

পতাকা সত্যাগ্রহ শব্দটি, নাগরিক স্বাধীনতা সম্পর্কিত ব্রিটিশ-আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে এবং সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বৈধতা নিয়ে বিরোধের প্রতীক রূপে পতাকা উত্তোলন হিসাবে দেখা হত। অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-১৯২২), লবণ সত্যাগ্রহ (১৯৩০) ও ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২) এর সময় এই কার্যক্রমটি বিশিষ্ট আকার ধারণ করে। এর অর্থ ছিল ,গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ — অহিংস আইন অমান্য আন্দোলন — অনুসরণ করে বিপ্লব ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন একসাথে চালিয়ে যাওয়া। জাতীয়তাবাদীদের, গ্রেফতার বা পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ না করে, আইন লঙ্ঘন এবং পতাকা উত্তোলনে উৎসাহিত করা হ্ত।

অভ্যুত্থান সম্পাদনা

গান্ধীজি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে, জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহের সময় পতাকা সত্যাগ্রহ ছিল সবচেয়ে সাধারণ এক প্রতিবাদের ভাষা। বড় শোভাযাত্রায় এবং জাতীয়তাবাদী জমায়েতে নিয়মিতভাবে জাতীয় পতাকাকে সামনে রাখা হত। ৩১শে ডিসেম্বর ১৯২৯ সালে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজের মাধ্যমে স্বাধীনতার দাবি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল নেহ্‌রু রাভি নদীর তীরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৪২ সালের ৭ই আগস্ট মুম্বইতে (তখনকার বোম্বে) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের শুরুতে গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক মাঠে পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৯২৩ সালে বহুদিন ধরে নাগপুর এবং জবলপুরের পতাকা সত্যাগ্রহ চলেছিল। পতাকা উত্তোলনের অধিকারের দাবিতে জাতীয়তাবাদী বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার ভারত জুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল, বিশেষতঃ গান্ধীজী গ্রেপ্তার হবার পর। জাতীয়তাবাদী নেতারা, যেমন সর্দার পটেল, যমুনালাল বাজাজ, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং বিনোবা ভাবে বিদ্রোহ সংগঠিত করেন এবং দূর দক্ষিণের ত্রিভাংকোর রাজ্য সহ বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ [১] নাগপুর এবং কেন্দ্রীয় প্রদেশের (এখন মহারাষ্ট্র) বিভিন্ন জায়গা ও মধ্যপ্রদেশ গমন করেন, আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে। শেষ পর্যন্ত, ব্রিটিশরা পটেল ও অন্যান্য কংগ্রেস নেতৃত্বের সাথে একটি চুক্তি করেন, যাতে বিক্ষোভকারীরা বিনা বাধায় তাঁদের পদযাত্রা করতে পারেন এবং যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়।

১৯৩৮ সালে মহীশূরে (এখন কর্ণাটক) উল্লেখযোগ্য পতাকা সত্যাগ্রহ সংগঠিত হয়। স্বাধীনতা দিবস (১৫ই আগস্ট) এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের (২৬শে জানুয়ারী) বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসাবে প্রচুর উৎসব এবং বিদ্রোহের পুনর্ঘটন করা হয়েছে।

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Archived copy"। ১০ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০০৯ 
  • Rajmohan Gandhi. Patel: A Life. (Navajivan House; 1992)
  • Arundhati Virmani. National Symbols Under Colonial Domination: The Nationalization of the Indian Flag, March–August 1923 (Past and Present Society; 1999)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা