নোয়াখালী জিলা স্কুল

নোয়াখালী জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

নোয়াখালী জিলা স্কুল বাংলাদেশের নোয়াখালীর জেলার মাইজদী কোর্ট শহরে অবস্থিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জন্মলগ্ন থেকেই এটি সরকারি স্কুল। তখন এটি গঠনে আয়ারল্যান্ডের ইংরেজ কর্মকর্তা মি.জোনসের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ছিল। ইংরেজ সরকার ভারতীয় উপমহাদেশে ১৩টি জেলায় ১টি করে জিলা স্কুল গঠন করে। আর বিভাগীয় পর্যায়ে যেসব স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো কলেজিয়েট নামে পরিচিত হয়েছে। অতঃপর পাকিস্তান আমলে আরো ২টি জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [২] তন্মধ্যে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একটি জিলা স্কুল নোয়াখালী জিলা স্কুল।[২]

নোয়াখালী জিলা স্কুল
অবস্থান
মানচিত্র

তথ্য
ধরনসরকারী
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৫০; ১৭৩ বছর আগে (1850)
প্রধান শিক্ষকজনাব মোঃ মীর হোসেন[১]
অনুষদ৪০
শ্রেণী৫ম - ১০ম
শিক্ষার্থী সংখ্যা১৫০০
ওয়েবসাইটwww.nzs.edu.bd

ইতিহাস সম্পাদনা

বিদ্যালয়টি পুরাতন নোয়াখালী শহরে ১৮৫০ সালে জোনস, আয়ারল্যান্ডের একজন বিটিশ কর্মকর্তা বেসরকারি ভাবে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।[২] পরবর্তীতে প্রায় তিন বছর পর একটি হাই স্কুল (আরকে হাই স্কুল) রুপে সরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯২০ সালে বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, ফলে ১৯২১ সালে মহববতপুর গ্রামের পূর্ব প্রান্তে মন্তিয়ার ঘোনায় বিদ্যালয়টিকে স্থানান্তরিত হয়। বিদ্যালয়টি আবারো নদী ভাঙ্গনের শিকার হলে ১৯২৩ সালের ১ জানুয়ারি আর.কে জুবিলী বিদ্যালয়ে এটিকে স্থানান্তর করা হয় ও বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় আর.কে জিলা স্কুল। ১৯৩১ সালে বিদ্যালয়টি আবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে, ফলে বিদ্যালয়কে আহম্মদিয়া মাদ্রাসায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে এটির প্রভাতী শাখা চালু হয়। বিদ্যালয়টি আবারও নদী ভাঙ্গনে পড়লে বঙ্গ বিদ্যালয়ে ও ১৯৪৮ সালে তা বঙ্গবিদ্যালয় থেকে কারামতিয়া মাদ্রাসায় আনা হয়। ১৯৫৩ সালে কারামতিয়া মাদ্রাসা থেকে এটি বর্তমান মাইজদী সদরে প্রধান সড়কের পাশে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৮ ও ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়, পরে এটিকে পুনঃনির্মাণ করা হয়।[২]


অর্জন সম্পাদনা

জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে স্কুল এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা বরাবরই নানা আসরে বিজয় ছিনিয়ে আনছে। বিভিন্ন বিতর্ক, অলিম্পিয়াড এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় স্কুলটির সাফল্য অভিনন্দনযোগ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে গেল কিছু বছরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু অর্জনের মধ্যে রয়েছে:

* অলিম্পিয়াড:

২০২০ সালে ৯ম শ্রেণির নীলেশ সাহা বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এ জাতীয় পর্যায়ে এবং ২০২০ ও ২০২১ এ দ্য কুইন্স কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ সনদ বিজয়ী।

২০২২ সালে বাংলাদেশ ইংলিশ অলিম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে মেডেলধারী ৮ম শ্রেণির সাকিফ মোবাররাত চৌধুরী।

২০২৩ সালে দশম শ্রেণির রেদওয়ান মাহমুদ বাংলাদেশ এ.আই. অলিম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন এবং আন্তর্জাতিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে ব্রোঞ্জ মেডেলিস্ট।

প্রতিবছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, প্রজেক্ট প্রদর্শনীতেও জেলায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে আসছে আসছে স্কুলটি।


* বিতর্ক 

২০২২ সালে সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসবে সারা দেশে ৫২০টি স্কুলের মাঝে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন নোয়াখালী জিলা স্কুল। বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে দেশসেরা বিতার্কিক হয় দলনেতা ফাইজুস সালেহীন সামিন।

দেশের সবচেয়ে বড় এই স্কুল বিতর্ক আসরে এখন পর্যন্ত ৬বার জেলা, ২বার বিভাগীয় এবং ১বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয় স্কুলটি।

স্কুলটি দুদক জাতীয় বিতর্কে ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন এবং জাতীয় পর্যায়ে সেমিফাইনালিস্ট হয়। প্রতিবছরই দুদক স্কুল বিতর্কে জেলা,বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব বয়ে আনছে স্কুলটি।

বাংলাদেশ টেলিভিশন জাতীয় ইংরেজি বিতর্ক ২০২৩ এ ১৩২ টি দেশসেরা স্কুলের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট হয় নোয়াখালী জিলা স্কুল।

২০২৩ সালে প্রথমআলো আঞ্চলিক স্কুল বিতর্ক উৎসবে চ্যাম্পিয়নসহ আরো নানা অর্জন রয়েছে স্কুলটির ডিবেট ক্লাবের।

*অন্যান্য

অলিম্পিয়াডসমূহ এবং বিতর্ক ছাড়াও নানা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়, জাতীয় পর্যায়ে বরাবরই নানা অর্জন বয়ে আনছে স্কুলটি।জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ, সৃজনশীলমেধা অন্বেষণেও স্কুলটির সাফল্য ঈর্ষণীয়।

এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে জেলায় শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড এবং সারা দেশে সেরা প্রতিষ্ঠাননগুলোর মাঝে জায়গা করে নিয়েছে স্কুলটি।

অবকাঠামো সম্পাদনা

বিদ্যালয়টি ৮ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এখানে ৩টি বড় ভবন, ছাত্রদের জন্য ২ টি আবাসিক হোস্টেল রয়েছে। বিদ্যালয়ের আঙিনায় একটি বড় মাঠ রয়েছে। বিদ্যালয়ে বড় মিলনায়তন, ক্যান্টিন, শাহীদ মিনার রয়েছে। বিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ বিজ্ঞান গবেষণাগার রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকালে সমাবেশ, বার্ষিক ক্রীড়া এবং গেমস, বার্ষিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করে।[২]

সুবিধাসমূহ সম্পাদনা

বিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ের আলাদা আলাদা বিজ্ঞানাগার রয়েছে। এছাড়াও একটি স্কাউট, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট,সাইন্স ক্লাব এবং ডিবেটিং ক্লাবসহ আরও বিভিন্ন ধরনের ক্লাব আছে।

শিক্ষার্থীদের পোশাক সম্পাদনা

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পোশাক হল সাদা প্যান্ট, সাদা হাফ শার্ট/শীতকালে ফুল শার্ট (এক পকেট বিশিষ্ট), সাদা কেডস, নেভি ব্লু সোয়েটার (শীতকালে), কালো বেল্ট (দেড় ইঞ্চি চওড়া)

অতিরিক্ত ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনা

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ছাত্র সম্পাদনা

যে সব খ্যাতনামা ব্যক্তি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হল:

  • আহমদ নজীর, সাবেক সংসদ সদস্য, সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. শিক্ষক-শিক্ষিকা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে। নোয়াখালী জিলা স্কুল
  2. "নোয়াখালী জিলা স্কুল"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা