নেপাল নাগ
নেপাল নাগ বা নেপালচন্দ্র নাগ (১৯ সেপ্টেম্বর ১৯০৯ - ৫ অক্টোবর ১৯৭৮) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব, অগ্নিযুগের বিপ্লবী, স্বদেশী এবং কমিউনিস্ট।[১]
নেপাল নাগ | |
---|---|
শৈলেশচন্দ্র নাগ | |
![]() | |
জন্ম | ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯০৯ |
মৃত্যু | ৪ অক্টোবর ৪, ১৯৭৮ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৬৪ সাল পর্যন্ত) ভারত |
শিক্ষা | আই এ |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
পরিচিতির কারণ | ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | ঢাকা জিলার কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ও অমর লেনিন |
রাজনৈতিক দল | স্বাধীনতার পুর্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, স্বাধীনোত্তর কালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি |
আন্দোলন | ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন |
দাম্পত্য সঙ্গী | নিবেদিতা নাগ |
সন্তান | সুজয় নাগ (পুত্র) সুমিতা নাগ (কন্যা) |
পিতা-মাতা |
|
জন্ম ও শিক্ষা
সম্পাদনানেপাল নাগ জন্মেছিলেন ঢাকার তেজগাঁও-এ। তার পিতার নাম সুরেশচন্দ্র নাগ। তার ভালো নাম শৈলেশচন্দ্র হলেও নেপাল নামেই পরিচিত ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই স্বদেশী ভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি আই.এ. পাস করার পর বিপ্লবী কাজকর্মে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।[১]
বিপ্লবী জীবন ও গ্রেপ্তার
সম্পাদনা১৯২৩-২৪ সনে লীলা নাগ পরিচালিত "শ্রী সংঘ"-এ যোগ দেন। ঢাকা শহরের বুকে যারা গোয়েন্দা পুলিসের সহায়তা করত, তাদের শায়েস্তা করতে তখনকার অন্যান্য কর্মী সুপতি রায়, জিতেন দে প্রমুখ বিপ্লবীর সঙ্গে তিনিও ছিলেন। ২১ এপ্রিল, ১৯৩২ তারিখে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।[১] রাজস্থানের দেউলি বন্দি নিবাসে সাত বছর আটক থাকেন। মুক্তির পর তৎকালীন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। দেউলি কারাগারে আটক থাকার সময় মার্কসবাদী পণ্ডিত ও প্রবীণ বিপ্লবী রেবতী বর্মণের কাছে কমিউনিস্ট মতাদর্শে দীক্ষা গ্রহণ করেন। বন্দীশালায় কমিউনিস্ট কনসোলিডেশনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৩৮ সনে জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন[২]।
শ্রমিক আন্দোলন
সম্পাদনাজেল থেকে মুক্তি পেয়ে কমিউনিস্ট নেতা মুজফ্ফর আহ্মেদ, প্রমোদ দাশগুপ্তর পরামর্শে বিহারে শ্রমিক সংগঠনের কাজ করতে যান। সেখান থেকে সফলকাম হয়ে ফিরলে তাকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সুতাকল শ্রমিকদের মাঝে পাঠানো হয়। সাধারণ মানুষের সাথে দ্রুত মিশে যেতে পারার গুণ ছিল তার। নারায়ণগঞ্জের সুতাকল এলাকায় বলিষ্ঠ শ্রমিক আন্দোলন, বিশাল শ্রমিক ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলে সেখানকার অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এসময় কমিউন করে থাকতেন গোপনে অন্যতম বিপ্লবী জ্ঞান চক্রবর্তীর সাথে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শ্রমিকদের ভেতর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পায়[২]। ১৯৪০ সালের জুন মাসে পুনরায় গ্রেপ্তার হন। একই বছর ডিসেম্বরে মুক্তি লাভের পর ঢাকায় সগৃহে অন্তরীণ থাকেন। কয়েক দিনের মধ্যেই অন্তরীনের বেড়াজাল ডিঙিয়ে গোপনে নারায়ণগঞ্জের সুতাকল অঞ্চলে গমন করেন। সেখানে আত্মগোপন অবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্বদান করেন। [৩]
দেশ ভাগ ও রাজনৈতিক কর্মজীবন
সম্পাদনাদেশবিভাগের পর ১৯৪৮-১৯৬২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকাল "রহমান ভাই" নাম গ্রহণ করে আত্মগোপন অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।[৩]
মস্কো সম্মেলনে যোগদান
সম্পাদনা১৯৬০ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কমিউনিস্ট মহাসম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির গোপন প্রতিনিধিত্ব করেন। পরের বছর ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ২২তম কংগ্রেসেও পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন। এসময় হো চি মিন, চৌ এন লাই প্রমুখ মানুষের সাথে তার আলোচনা হয় পূর্ববাংলার স্বাধীনতা নিয়ে।[২][৩]
অবদান
সম্পাদনাপূর্ব বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে তার অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৪৯ সালে রেল ধর্মঘট প্রয়াস, ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে ছাত্র-জনতার বিপ্লবী অভ্যুদয় এবং ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের ক্ষেত্রে নেপাল নাগের উদ্যোগ ও কাজ স্মরণীয়।[৩]
রোগভোগ ও মৃত্যু
সম্পাদনাদুরারোগ্য ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬২ সালে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কলকাতায় ৪ অক্টোবর ১৯৭৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, দ্বিতীয় মুদ্রণ, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৭৯-৩৮০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ ক খ গ প্রতাপ চন্দ্র রাহা (১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বীর বিপ্লবী নেপাল নাগ"। এইবেলা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২১৮-২১৯, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬