নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুল

নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুল (সাধারণ্যে এনএনএম হাই স্কুল নামে পরিচিত) তুফানগঞ্জ মহকুমার প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং স্বাধীন ভারতের পূর্ব থেকে শিক্ষা সম্পর্কিত ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। স্কুলটি ১৯১৬ সালে কোচবিহারের সম্মানীয় মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। প্রয়াত সম্মানীয় মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছিল।[১][২]

নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুল, তুফানগঞ্জ

এনএনএম হাই স্কুলের প্রতীক
ঠিকানা
মানচিত্র
তুফানগঞ্জ মেইন রোড


, ,
৭৩৬১৫৯
তথ্য
প্রতিষ্ঠাকাল২৬ মার্চ ১৯১৬
প্রতিষ্ঠাতাকোচবিহারের সম্মানীয় মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ
বিদ্যালয় জেলাকোচবিহার
প্রধান শিক্ষকডা. রামকৃষ্ণ প্রামাণিক
অনুষদ৪০
শ্রেণীপঞ্চম থেকে দ্বাদশ
শিক্ষার্থী সংখ্যা২০০০
রং     নীল
     লাল
     সাদা
প্রকাশনাউষশী (স্কুল প্রত্রিকা)
অন্তর্ভুক্তিডাব্লুউবিবিএসইডাব্লুউবিসিএইচএসই

বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা

বিদ্যালয়টি একটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল দুটি ভাগে বিভক্ত (সাধারণ এবং বৃত্তিমূলক)-সহ এটি উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের অংশ। মানব সম্পদ বিকাশ বিষয়ক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এবং পেশাদার প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করা হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি কেবল ছেলেদের জন্য। তবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই ভর্তি নেওয়া হয়। ১০০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যালয়।[১]

এনএনএম হাই স্কুলে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে উচ্চ সাফল্যের হার দেখিয়েছে। প্রায়শই ১০০% পৌঁছে যায়।[৩][৪] ২০০৬ সালে স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাসে সর্বকালের রেকর্ড তৈরি করেছিল।[৫][৬][৭][৮]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
কোচবিহারের সম্মানীয় মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ (১৮৬৩-১৯১১)
 
কোচবিহারের সম্মানীয় মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ (১৯১৩-১৯২২)

এনএনএম হাই স্কুলটি ১৯১৬ সালে কোচবিহারের সম্মানীয় মহারাজা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। রাজ্যের কোচবিহার জেলা সর্বাধিক অনগ্রসর অঞ্চল থাকা সত্ত্বেও, এই বিদ্যালয়টি রাজ্য থেকে সর্বাধিক পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পেত।[৯] স্কুলটি ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে উচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে উপস্থাপনের স্বীকৃতি লাভ করেছিল। ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রার্থীদের উপস্থাপিত করার জন্য স্কুলটি স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল।

১৯৫৭ সালে এনএনএম হাই স্কুল পশ্চিমবঙ্গের ডাইরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন কাছ থেকে মানবিক বিভাগ এবং বিজ্ঞান বিভাগের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক (একাদশ) বহুমুখী স্কুল হিসাবে স্বীকৃত লাভ করেছিল। ১ জুলাই ১৯৭৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিল আপাতত দুই বছরের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (একাদশ-দ্বাদশ) সাধারণ স্ট্রিম কোর্স প্রদানের জন্য নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুলকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। ১৯৬৩ সালে কৃষিশিক্ষা বিষয় যোগ হয়। ১৯৭৮ সালে ভোকেশনাল শিক্ষা স্ট্রিম (কৃষিশিক্ষা) প্রবর্তিত হয়েছিল। এই স্কুলটিকে জেলার একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত পায়।

বিদ্যালয় চত্বর সম্পাদনা

বিদ্যালয়টি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ভবনটিতে জুনিয়র বিভাগ, সিনিয়র বিভাগ, গ্রন্থাগার, স্টাফ রুম, ব্যায়ামাগার, গবেষণাগার, হোস্টেল প্রভৃতি একাধিক বিভাগে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখানে দুটি খেলার মাঠ এবং একটি কৃষি খামার রয়েছে।

পাঠ্যক্রম সম্পাদনা

পাঠ্যক্রমটি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ এবং পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃক নির্ধারিত নির্দেশিকা উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষা মাধ্যম বাংলা। বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কলা এবং বৃত্তিমূলক স্ট্রিম বিষয়ক কোর্স প্রদান করা হয়।

ক্রীড়া সম্পাদনা

শিক্ষার্থীরা প্যারেড, শারীরিক অনুশীলন, যোগ ব্যয়ামের পাশাপাশি গেমস এবং খেলাধুলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, খোকো ইত্যাদি সাধারণত বিভিন্ন সময়ে খেলা হয়। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্ট, জেলা স্কুল ক্রীড়া এবং রাজ্য পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

বিদ্যালয়ে অষ্টম-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এনসিসি প্রশিক্ষণের সুবিধাও সরবরাহ করা হয়।

ভারতের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার শিব শঙ্কর পাল প্রাক্তন ছাত্র।

সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্পাদনা

বিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন, সরস্বতী পূজা, নবীনবরণ, স্কুল প্রতিষ্ঠা দিবস ইত্যাদি উদ্‌যাপন করা হয়।

স্কুল পোশাক সম্পাদনা

বৃহস্পতিবার বাদে প্রতি সপ্তাহে ছেলেদের নীল প্যান্ট, সাদা জামা এবং কালো জুতো এবং মেয়েদের লাল-বর্ডারযুক্ত সাদা শাড়ি এবং লাল ব্লাউজ।

স্কুল প্রার্থনা সম্পাদনা

দুটি গানে প্রার্থনা করা হয়। অতুলপ্রসাদ সেনের প্রথম চারটি স্তবক ‘উঠ গো ভারত-লক্ষ্মী’ ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের পর গীত হয়। নামমাত্র স্বতন্ত্র হলেও কোচবিহার ব্রিটিশ রাজের (১৭৭৪-১৯৪৯) রাজ্য ছিল। স্কুল প্রার্থনায় অতুলপ্রসাদ সেনের দেশাত্মবোধক গানটি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত থাকার পরিচয় বহন করে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Tufanganj N.N.M. High School"। Find the Best.Com। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Tufanganj N.N.M. High School Tufanganj Municipality"। Schools World. In। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  3. "A tale of two toppers", Asia Africa Intelligence Wire, Financial Times Ltd, ২০০৪-০৭-২৯, সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "Malda takes Class X honours"The Telegraph। Calcutta, India: ABP Pvt. Limited। ২০০৫-০৬-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০০৫-০৬-০১ 
  5. "Record score for HS topper"The Telegraph। Calcutta, India: ABP Pvt. Limited। ২০০৬-০৬-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-০৬ 
  6. "HS record: Topper on cloud 999"The Times of India। Kolkata, India: Bennett, Coleman & Co. Ltd.। ২০০৬-০৬-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-০৬ 
  7. "Cooch Behar on top", Statesman (India), Financial Times Ltd, ২০০৬-০৬-০৬, সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "Cooch Behar toppers steal the show", Statesman (India), Financial Times Ltd, ২০০৬-০৬-০৬, সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. The Feudatory and zemindari India24। ১৯৪৩। পৃষ্ঠা 258। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৪