নৃপেন্দ্র নারায়ণ

কোচবিহারের ২১তম মহারাজা

নৃপেন্দ্র নারায়ণ (৪ই অক্টোবর ১৮৬২ - ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯১১) ভারতের কোচবিহারের রাজতান্ত্রিক রাজ্যের ১৮৬৩ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত মহারাজা ছিলেন।

নৃপেন্দ্র নারায়ণ
মহারাজ ও কোচবিহারের রাজা
নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর, কোচবিহারের মহারাজা ১৯০২ সালে ৬ তম (প্রিন্স অফ ওয়ালেস) বেঙ্গল ক্যাভেলরি
কোচবিহার জেলার রাজা
রাজত্ব১৮৬৩-১৯১১
উত্তরসূরিরাজেন্দ্র নারায়ণ
জন্মনৃপেন্দ্র নারায়ন ভূপ বাহাদুর
৪ অক্টোবর ১৮৬২
কোচবিহার জেলা (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
মৃত্যু১৮ সেপ্টেম্বর ১৯১১
বেক্সহিল্ল সাগর ইংল্যান্ড
দাম্পত্য সঙ্গীসুনীতি দেবী (বি.১৮৭৮)
রাজবংশকোচবিহার রাজপ্রসাদ
পিতারাজেন্দ্র নারায়ণ
ধর্মহিন্দু

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

নৃপেন্দ্র নারায়ণ যখন দশ মাস বয়স ছিল তখন তার পিতা নরেন্দ্র নারায়ণ ১৮৬৩ সালে মারা যান। তিনি একই বছরেই রাজা হিসেবে রাজতন্ত্র পালন করেছিলেন। যেহেতু তিনি শিশু ছিলেন সেহেতু প্রশাসন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করে কমিশনারের কাছে হস্তান্তর করেন।[] তার বড় ভাই চিত্ররঞ্জন এবং রূপনারায়ণপুরের রাজা, তাদের পূর্বপুরুষদের জমি ছিলো।[] তিনি বেনারসে ওয়ার্ডস ইন্সটিটিউট এ অধ্যয়ন করেন, তারপরে বাঁকিপুর কলেজ, পাটনা এবং শেষপর্যন্ত কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে, আইন নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৮৭৮ সালে তিনি কলকাতার কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনীতি দেবীকে বিয়ে করেন। বিয়ের অবিলম্ব পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান।[]

 
কোচবিহার শহরে নৃপেন্দ্র নারায়ণ এর মূর্তি।

পরিবার

সম্পাদনা

তিনি চার পুত্র ও তিন কন্যার পিতা ছিলেন নামগুলি হল- রাজেন্দ্র নারায়ণ, জিতেন্দ্র নারায়ণ, ভিক্টর নৃত্যেন্দ্র নারায়ণ, হিতেন্দ্র নারায়ণ এবং কন্যা প্রতিভা দেবী, সুধীরা দেবী এবং সুকৃতি দেবী।[][] পরে তার পুত্র রাজেন্দ্র নারায়ণজিতেন্দ্র নারায়ণ পরে কুচবিহারের মহারাজা হন। গায়ত্রী দেবী ও ইলা দেবী তার পুত্র জিতেন্দ্র নারায়ণের মেয়ে।

মৃত্যু

সম্পাদনা

নৃপেন্দ্র নারায়ণ ১৯১১ সালের সেপ্টেম্বরে ইংরেজ উপকূলীয়বর্তী অঞ্চল বেক্সহিল্ল সাগরে মৃত্যু হয়। তার শেষ কৃত্যকার্য ২১শে সেপ্টেম্বর, ১৯১১ বেক্সহিল্ল এ সম্পন্ন হয়। মহারাজা বেক্সহিল্ল এসেছিলেন আরোগ্য লাভ করার জন্য পরে মুর হল, নিনফিল্ড ছেড়ে চলে যায়। তার এক মেয়ে সম্প্রতি নিমজ্জিত হয়ে ছিল। ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৯১৩ সালে তার দ্বিতীয় পুত্র মহারাজা কুমার জিতেন্দ্র দ্বারা নৃপেন্দ্রর নামে উত্সর্গীকৃত একটি স্মারক পানীয় শাখা খোলা হয় (জিতেন্দ্র এর বড় ভাই রাজেন্দ্রের মৃত্যুর পর কোচ বিহারের সিংহাসনে বসেন)। ডে লা ওয়ার প্যাভিলিয়নের বর্তমান অবস্থানে ফোয়ারাটি মূলত কোস্টগার্ডদের কুঠিরের পাশে ছিল। ১৯৩৪ সালে যখন প্যাভিলিয়নের পথ তৈরির জন্য কুঠিরটি ধ্বংস করা হয়, তখন ইগার্টন পার্কের দুর্গটি পুনরায় তৈরি হয়। এটি বেক্সহিল্ল জাদুঘর থেকে পাশের পার্কের প্রবেশের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল ১৯৬৩ সালে এটি পুনঃস্থাপন জন্য অপসারিত করা হয়। এটি এক সময়ের জন্য বেক্সহিল্ল সমাধিটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছিল কিন্তু তারপর পরে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার বর্তমান অবস্থান অজানা।[]

বেক্সহিল্ল সাগরের ঐতিহাসিক সমাজ বেক্সহিল্লের সাথে নৃপেন্দ্রর সংযোগ সংক্ষিপ্ত বিবরণ "বেক্সহিল্ল মহারাজা" একটি বই প্রকাশ করে ছিল।

কর্মজীবন

সম্পাদনা
 
কোচবিহার রাজপ্রাসাদ

তিনি ১৮৮৪ সালে একটি আইন প্রবর্তন করেন তার রাজ্যে ক্রীতদাস প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন। ১৮৮৮ সালে তিনি তার নিজের রাজ্যে উচ্চতর শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে এ.বি.এন.শীল কলেজ নামে পরিচিত। এছাড়াও, তার রানী, সুনীতি দেবীর নামে, একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা সুনীতি কলেজ নামে নামকরণ করা হয় পরে ১৮৮১ সালে সুনীতি একাডেমী নামে পরিচিত।১৮৮৩ সালে তিনি জলপাইগুড়ি শহরে নৃপেন্দ্র নারায়ণ হল নির্মাণ করেন এবং ১৮৮৭ সালে দার্জিলিংয়ে লেইস জুবিলি স্যানিটিয়ারিয়াম নির্মাণের জন্য জমি প্রদান করেন।[] তিনি ১৮৮২ সালে কলকাতায় ইন্ডিয়া ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।[] তিনি ১৮৮৯ সালে কোচবিহারে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে খাবার বিতরণের জন্য আনন্দময়ী ধর্মসালা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৮৯২ সালে কোচবিহারে নৃপেন্দ্র নারায়ণ পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠিত করেন।[] তিনি ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ক্লাবের প্রথম সভাপতি ছিলেন।

মহারাজা ছিলেন ক্রিকেটে একজন উদ্যমশীল ব্যক্তি এবং কোচবিহার দলকে উন্নতি করেন এবং সারা পৃথিবীর শীর্ষ মানের খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণ জানায়। কোচবিহারের প্রাসাদে তিনি একটি ক্রিকেট মাঠ স্থাপন করেন এবং কলকাতার আলিপুরে একটি মাঠ উন্নতি করেন। তার দল এবং নাটোর মহারাজার দল বাংলায় ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ ছিল।[]

শিরোনাম এবং শৈলী

সম্পাদনা

শিরোনাম

সম্পাদনা

১৮৮৭ - কুইন ভিক্টোরিয়া জয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে তিনি ভারতের সাম্রাজ্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আদেশ গ্র্যান্ড কমান্ডার

লেফটেন্যান্ট-কর্নেল তাঁর রাজরাজাদের মর্যাদাসূচক আখ্যাবিশেষ মহারাজা স্যার নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর, জিসিআইই, সিবি

সম্মাননা

সম্পাদনা

স্মৃতি

সম্পাদনা

নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুল তার নামকরণ করা হয়, যা তার পুত্র মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়াও তার নামে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলায় নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন।

রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
মহারাজা নরেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর
মহারাজা কোচবিহার
১৮৬৩ - ১৯১১
উত্তরসূরী
মহারাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ ২

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  • The Maharajah of Cooch Behar; Thirty-Seven Years of Big Game Shooting in Cooch Behar, the Duars, and Assam. Bombay, The Times Press, 1908.
  1. Encyclopaedia Indica: India, Pakistan, Bangladesh: Volume 100 উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "b" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  2. Royal History, Shri. Hemanta Kumar Rai Barma, CHAPTER 6, "Kochbiharer Itihas", 2nd edition (1988), National Informatics Centre, Cooch Behar District, http://coochbehar.nic.in
  3. Profile, Suniti Devi (Sen), (1864–1932), geni.com
  4. http://publicsculpturesofsussex.co.uk/object?id=156[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. The Golden Book of India: A Genealogical and Biographical by Sir Roper Lethbridge – 2005 pp 269
  6. A Directory of Botanic Gardens and Parks in India by R. K. Chakraverty, D. P. Mukhopadhyay – 1990 – Page 31
  7. Mukherji, Raju। Eden Gardens Legend & Romance: Eden Gardens, the heritage cricket venue, celebrated 150 years (ইংরেজি ভাষায়)। Kolkatatoday.com। পৃষ্ঠা 31–34,173। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  8. Queen Victoria's Golden Jubilee