নূর মুহাম্মদ আজমী
নূর মুহাম্মদ আজমী (১৯০০ – ১৯৭২) একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ। তিনি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির খলিফা জমিরুদ্দিন আহমদের শিষ্য ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি ফেনী আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা ভাষায় ইসলামি সাহিত্য সম্ভার তৈরিতে তার অবদান রয়েছে। তার রচিত হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস বাংলাভাষার সর্বপ্রথম হাদিসশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ। এছাড়াও তিনি মিশকাতুল মাসাবীহ'র বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল।[১][২]
নূর মুহাম্মদ আজমী | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৯০০ ফেনী |
মৃত্যু | ১৬ আগস্ট ১৯৭২ | (বয়স ৭১–৭২)
জাতীয়তা |
|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পিতামাতা |
|
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | |
উল্লেখযোগ্য ধারণা | মাদারিসে আরবিয়া কা নেজামে তালীম |
উল্লেখযোগ্য কাজ | হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
এর শিষ্য | জমিরুদ্দিন আহমদ |
জীবনী
সম্পাদনাআজমি ১৯০০ সালে ফেনী জেলার সিলোনিয়া নামক এলাকার নেয়াজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ আলী আযম ও মাতা শেখ রহীমুন নেসা। শৈশবে তিনি নানা মুন্সি মুহাম্মদ হাতেম এবং পিতার নিকট কুরআন শিক্ষালাভ করেন। পাশাপাশি বাংলা ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষাও লাভ করেন। এরপর গ্রামের নৈশ বিদ্যালয় থেকে আর্যমাত্রা ও আব্দুল লতীফ মোল্লার নিকট বাল্যশিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি দাগনভূঁইয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখানে তিন বছর অতিবাহিত করে তিনি চট্টগ্রাম মীরসরাইয়ের আবুর হাট মাদ্রাসায় গমন করেন। এখানে তিনি জামাতে শশম (১০ম) পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯২৫ সালে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের দারুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এই মাদ্রাসায় তিনি আলিম ও ফাজিল পাস করেন।[৩] তিনি নিজ উদ্যোগে কলকাতা ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি ও ঢাকা আলিয়া লাইব্রেরি থেকে কুরআন, হাদিস, উর্দু, ফার্সি, বাংলা এবং সাহিত্য বিষয়ক বই পুস্তক অধ্যয়ন করেন।[৪]
শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে ১৯২৭ সালে তিনি বালুয়া চৌমুহনী মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। এরপর তিনি ১৯২৮ থেকে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফেনী আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।[৫]
তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সরকারের শিক্ষামন্ত্রী খান বাহাদুর মোয়াজ্জম হোসাইনের সভাপতিত্বে একটি কমিশন গঠিত হয়। উক্ত কমিশনে সংস্কারকল্পে তিনি উর্দু ভাষায় "মাদারিসে আরবিয়া কা নেজামে তালীম" রচনা করেন। আজমী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির খলিফা জমিরুদ্দিন আহমদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন।[৬]
তিনি ১৯৭২ সালের ১৬ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
প্রকাশনা
সম্পাদনাতিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকাসমূহে নিয়মিত লিখতেন এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তার রচনাসমূহের মধ্যে রয়েছে:[৭][৮]
- হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস
- মেশকাত শরীফের অনুবাদ
- উনবিংশ শতাব্দীর আলেম সমাজ ও রাজনীতি
- খোলাফায়ে রাশেদিনের আর্দশ
- ইসলামের সমাজ ব্যবস্থা
- ইসলামের অর্থব্যবস্থা
- ইসলাম ও পাশ্চাত্য জগত
- ইসলামের ভূমি ব্যবস্থা
- বাংলা সাহিত্যে ইসলামের প্রচার
- নেজামে তালীম
- আদাবে তারবিয়ত
- তারীখে ফনুনাত তাফসীর
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ পরিষদ, সম্পাদনা (জুন ১৯৮২)। সংক্ষিপ্ত ইসলামি বিশ্বকোষ ১ম খণ্ড। শেরেবাংলা নগর, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৫২৬–৫২৭। আইএসবিএন 954-06-022-7।
- ↑ আহসান সাইয়েদ, ড. (২০০৬)। বাংলাদেশে হাদিস চর্চা উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ। ১৯ সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০: অ্যাডর্ন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ১৯৫। আইএসবিএন 9789842005602।
- ↑ "বাংলা সাহিত্যে মাওলানা নূর মোহাম্মদ আ'জমীর অবদান"। Sylhet Report | সিলেট রিপোর্ট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৯।
- ↑ নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৫০—১৫৩। আইএসবিএন 112009250-7।
- ↑ এস এম আমিনুল ইসলাম, মাওলানা; ইসলাম, সমর (জানুয়ারি ২০১৪)। বাংলার শত আলেমের জীবনকথা। বাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০: বইঘর। পৃষ্ঠা ১৪৩—১৫০। আইএসবিএন 9847016800481।
- ↑ আলম, মোঃ মোরশেদ (২০১৪)। হাদিস শাস্ত্র চর্চায় বাংলাদেশের মুহাদ্দিসগণের অবদান। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (গবেষণাপত্র)। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১১৯–১২১। ৩ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২১।
- ↑ জাহাঙ্গীর, সালাউদ্দিন (২০১৭)। বাংলার বরেণ্য আলেম — ২য় খণ্ড (১ম সংস্করণ)। মধ্য বাড্ডা, আদর্শ নগর, ঢাকা: মাকতাবাতুল আযহার। পৃষ্ঠা ২৩৯—২৪৯।
- ↑ মুহাম্মদ আহসান, উল্লাহ (২০২১)। বাংলা ভাষায় হাদিস চর্চা (১৯৫২-২০১৫) (পিএইচডি)। বাংলাদেশ: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৩৮৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]