নুরুল হুদা (বীর প্রতীক)

নুরুল হুদা (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৮) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

নুরুল হুদা
মৃত্যু২০০৮
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

নুরুল হুদার জন্ম কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার পৌরসভার অন্তর্গত দক্ষিণ রুমানিয়াছড়ায়। তার বাবার নাম মোহাম্মদ সোলায়মান এবং মায়ের নাম ছেমন খাতুন। তার স্ত্রীর নাম দিলদার বেগম। তাঁদের তিন ছেলে, এক মেয়ে। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৭১ সালে নুরুল হুদা কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে। ২৫ মার্চ শেষ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টার লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। তখন বাঙালি ইপিআর সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়েন। পরদিন নুরুল হুদাদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করা হয়। তখন তারা প্রতিবাদ করেন। ৩০ মার্চ তারা বিদ্রোহ করে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যশোরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে তারা এক দল অন্য দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। নুরুল হুদারা যশোর থেকে পশ্চাদপসরণ করতে করতে ঝিকরগাছায় সমবেত হন। ঝিকরগাছার পতন হলে তারা বেনাপোলসংলগ্ন কাগজপুকুরে সমবেত হন। ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমণ করে। তখন ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে তার সহযোদ্ধা মুজিবুর রহমান (বীর বিক্রম) আরও কয়েকজন সহযোদ্ধা শহীদ হন। কাগজপুকুরের পতন হলে তারা ভারতে যান। সেখানে পুনর্গঠিত হয়ে পরে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের বেনাপোল সাব-সেক্টরে। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্ব দেন। কয়েকটি অপারেশনে তিনি যথেষ্ট রননৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর একটি দল বেনাপোল থেকে যশোরের দিকে অগ্রসর হয়। তখন চূড়ামনকাঠিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দলের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পরে তারা বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাকিরা পালিয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুক্তিবাহিনীর একদল ইপিআর সদস্য সমবেত হলেন যশোর জেলার অন্তর্গত ঝিকরগাছায়। এ দলের একজন সদস্য নুরুল হুদা। তারা অবস্থান নিলেন পুলেরহাট নামক স্থানে। ১১ এপ্রিল তারা খবর পেলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বড় দল হত্যাযজ্ঞ চালাতে চালাতে তাঁদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দুটি ছোট দল এগিয়ে গেল সামনের দিকে। কিছুদূর এগোতেই তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সামনে পড়ে গেলেন। শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ। চলল কয়েক ঘণ্টা। নুরুল হুদা ও তার সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেও পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলেন। প্রবল আক্রমণের ফলে তারা পিছু হটেন। এরপর তারা অবস্থান নিলেন নদীর পশ্চিম প্রান্তে। পরদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁদের অবস্থানে তীব্র আক্রমণ শুরু করল। প্রচণ্ড যুদ্ধে নুরুল হুদার দুইজন সহযোদ্ধা শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ নিজ অবস্থানে টিকে থাকা ক্রমে অসম্ভব হয়ে পড়ল। তারা আবার বাধ্য হলেন পশ্চাদপসরণ করতে। এভাবে ঝিকরগাছার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।[৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১১-১০-২০১১"। ২০১৮-১১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-০৪ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা সম্পাদনা

বহি:সংযোগ সম্পাদনা