নীলিমা সেন

ভারতীয় গায়িকা

নীলিমা সেন (১৯২৮–১৯৯৬) ছিলেন একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী।[১][২][৩][৪][৫]

নীলিমা সেন

প্রথম জীবন সম্পাদনা

১৯২৮ সালের ২৮ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির কলকাতা শহরে (অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী) নীলিমা গুপ্তের জন্ম হয়।[৬] তার যখন ছয় বছর বয়স তখন তার পিতামাতা শান্তিনিকেতনে চলে আসেন। সেখানেই তার শিক্ষাজীবনের শুরু। শান্তিনিকেতন থেকে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত ও রবীন্দ্রসংগীতে ডিপ্লোমা পাঠক্রম সম্পূর্ণ করেন। তারপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামনে অভিনয়ের সুযোগ একবার তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই নাটকটি মঞ্চায়িত না হওয়ায় সেই সুযোগ ভেস্তে যায়। শান্তিনিকেতনে তিনি মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখের সামনে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার সংগীতগুরু ছিলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার

অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করার পরই তিনি ১৬ বছর বয়সে প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেন। সেই রেকর্ডটি বেশ জনপ্রিয় হয়। ১৯৫০ সালে তিনি ড. অমিয়কুমার সেনকে বিবাহ করে শান্তিনিকেতনের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। তাদের কন্যা নীলাঞ্জনাও একজন সংগীতশিল্পী। নীলিমা সেন তার স্বামীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেছিলেন এবং বিবিসির বিভিন্ন কেন্দ্রে গান গেয়েছিলেন। প্রসাদ সেনের সঙ্গে তিনি ‘সুরঙ্গমা’ নামে একটি সংগীত বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কয়েক বছরের জন্য তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েও গান শেখান। তিনি সংগীত ভবনের অধ্যক্ষা হয়েছিলেন এবং সেই পদে থাকাকালীনই অবসর নেন। শিক্ষিকা হিসেবে তিনি তিনি তাসের দেশ, মায়ার খেলা (সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে), শেষরক্ষা (সুপ্রিয় ঠাকুরের সঙ্গে) নৃত্যনাট্যগুলিতে অংশ নেন। বিশ্বভারতীয় উদ্যোগে এগুলি কলকাতার রবীন্দ্রসদননিউ এম্পায়ারে মঞ্চায়িত হয়েছিল। তার গলার স্বাভাবিক করুণ স্বরে "ও চাঁদ, চোখের জলের লাগল জোয়ার", "আহা, তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা", "বজাও রে মোহনবাঁশি", "তবু মনে রেখো" গানগুলি বিখ্যাত হয়।

নীলিমা সেন সারা ভারত, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মায়ানমারমালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠান করেছেন। তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, লিলি ইসলাম, বাসবী দত্ত, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, রীতা ঘোষ, প্রমিতা মল্লিক, জয়ন্তী পুরকায়স্থ, সোমা রায়, অদিতি মহসিন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

তিনি একাধিক রেকর্ড প্রকাশ করেন। ১৯৯৬ সালের জুন মাসের ২৮ তারিখে দীর্ঘ রোগভোগের পর তার মৃত্যু ঘটে।

রেকর্ডিং সম্পাদনা

২০০৪ সালে সারেগামা থেকে নীলিমা সেনের চারটি একক কমপ্যাক্ট ডিস্ক প্রকাশিত হয়: "খেলার সাথি, বিদায়দ্বার", "রাজা", "তোমারি মধুর রূপে ভরেছ ভুবন" ও "তুমি বন্ধু, তুমি নাথ"।[৭] ২০০৫ সালে সারেগামা থেকে ২১টি গানের আরেকটি কমপ্যাক্ট ডিস্ক "কী রাগিণী বাজালে" প্রকাশিত হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The voice that continues to enchant"। The Daily Star। মে ৮, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭ 
  2. "Singing new tunes"। The Telegraph। এপ্রিল ২৩, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭ 
  3. "An evening of Rabindra Sangeet"। The new Nation। আগস্ট ১৭, ২০০৭। জুন ১৪, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭ 
  4. "Evocative style"। The Telegraph। মার্চ ১০, ২০০৬। ২০১১-০৫-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭ 
  5. "Under the shady trees of Shantiniketan: Aditi Mohsin recalls her days at Tagore's university"। The Daily Star। নভেম্বর ২, ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭ 
  6. "Good Morning - Soiree to mark the 75th birth anniversary of Rabindrasangeet exponent Nilima Sen"। The Telegraph। এপ্রিল ২৮, ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭ 
  7. "Nilima Sen discography"। allmusic। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭