নির্মলেন্দু চৌধুরী
নির্মলেন্দু চৌধুরী ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী। বাংলা লোকসঙ্গীতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় করে তুলতে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সঙ্গীত সাধনায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত হন।[১]
নির্মলেন্দু চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ২৭ জুলাই, ১৯২২ ইং সুখাইড় জমিদার বাড়ি , সুনামগঞ্জ। |
মৃত্যু | ১৮ এপ্রিল, ১৯৮১ |
শিক্ষা | |
পরিচিতির কারণ | লোকসঙ্গীত শিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীতের অধ্যাপক। |
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার |
|
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনানির্মলেন্দু চৌধুরী ১৯২২ সালের ২৭ জুলাই বৃহত্তর সিলেট বিভাগ সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় জমিদার বাড়ি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা বেহেলী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নলিনীনাথ চৌধুরী এবং মায়ের নাম স্নেহলতা চৌধুরী। তিনি ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন; ক্রমে মাঝি-মাল্লার কণ্ঠে পল্লীগান শুনে এবং পিতামাতার নিকট থেকে শিক্ষা ও উৎসাহ পেয়ে পল্লীগায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।[১]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনানির্মলেন্দু চৌধুরী বেহেলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর চলে আসেন সিলেটে। সিলেট নগরীর লামাবাজারে তাঁদের বাসা ছিলো। সেই সুবাদে তিনি রসময় মেমোরিয়াল হাইস্কুলে ভর্তি হন। ম্যাট্টিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ভর্তি হন এম সি কলেজে। এ সময় তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় প্রতিবাদের গান।
সঙ্গীত সাধনা
সম্পাদনানির্মলেন্দু চৌধুরী প্রথমজীবনে ময়মনসিংহের আবদুল মজিদ ও আবদুর রহিম-এর নিকট লোকসঙ্গীত ও লোকবাদ্যে তালিম গ্রহণ করেন; পরে শান্তিনিকেতনে অশোকবিজয় রাহার নিকট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষালাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনে শ্রীহট্টের লোকগীতি গেয়ে তিনি সুনাম অর্জন করেন। এ বছরই ওয়ারশে আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত সম্মেলনে বাংলা লোকসঙ্গীত পরিবেশন করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। তখন থেকে শুরু করে ভারতে ও বিদেশে বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি বাংলা পল্লীগীতিকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর শতাধিক গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে এবং নেপথ্যে গান গেয়েও তিনি সুনাম অর্জন করেন। গঙ্গা ছবির গানে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। সুরকার হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল। মলুয়া পালাগানের ভিত্তিতে রচিত ও লং প্লে রেকর্ডকৃত চাঁদ বিনোদ গীতিনাট্য তিনিই পরিচালনা করেন। নির্মলেন্দু চৌধুরী প্রগতি লেখক সংঘ ও ভারতীয় গণনাট্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি কলকাতায় লোকভারতী নামে একটি লোকসঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কিছুকাল তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগে অধ্যাপনা করেন। এপার বাংলা ওপার বাংলার গান নামে তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীতগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। [১]
সম্মাননা
সম্পাদনাসঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন।
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতায় শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর মৃত্যু হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "চৌধুরী, নির্মলেন্দু - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২০।