নামাজের নিয়মাবলী

মুসলিমদের নামাজ পড়ার নিয়ম কুরআন ও হাদীস হতে এসেছে। কুরআনে এর বিশদ বিবরণ অন্তর্ভূক্ত হয় নি, তাই নামাজের নিয়মের ক্ষেত্রে হাদীসকে অনুসরণ করা হয়।

নামাজ
Salat positions.jpg
নামাজের নিয়মাবলী
আনুষ্ঠানিক নামصلاة
অন্য নামইসলামে উপাসনা, সালাহ, সালাত
পালনকারীমুসলমান
ধরনইসলামি
তাৎপর্যআইনশাস্ত্র অনুযায়ী আল্লাহর কাছে মুসলিমদের প্রার্থনা
পালন
সম্পর্কিততেলাওয়াত, রুকু, সিজদা
বাংলাদেশের একটি মসজিদে মুসলমান পুরুষদের নামাজের দৃশ্য।

নিয়মসম্পাদনা

নামাজের প্রধান ধাপগুলোকে 'রাকাত' বলা হয়। নামাজ দুই বা তিন বা চার রাকাত হতে পারে। ইসলামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে নামাজ পড়ার রীতিতে কিছু পার্থক্য রয়েছেঃ শিয়া ও সুন্নি পার্থক্য পাশাপাশি সুন্নিদের মধ্যে মাজহাবী পার্থক্য ও লা মাজহাবী তথা আহলে হাদীস বা সালাফী পার্থক্য।

নামাজ আরবিতে পড়ার কারণসম্পাদনা

আহমেদ হুসাইন শরীফ তার "হোয়াই প্রে ইন এরাবিক" (নামাজ কেন আরবিতে পড়া হয়?) বইতে আরবিতে নামাজ পড়ার পেছনে যে সকল কারণ বলেছেন তা হল,

  1. আরবি হল একটি গভীর ও বিস্তৃত ভাষা
  2. নামাজের জন্য একটি সাধারণ ও সার্বজনীন ভাষা
  3. (আরবির মাধ্যমে) ইসলামী ভ্রাতৃত্বে সংযোগ স্থাপন।
  4. কুরআন হল আল্লাহর সৃজনকর্ম
  5. কুরআনের পূর্নাঙ্গ ও পরিপূর্ণ অনুবাদ করা অসম্ভব
  6. কুরআনই একমাত্র (ঐশীভাবে) সংরক্ষিত ওহী
  7. কুরআনের নিজস্ব ছন্দ রয়েছে
  8. দোয়া এবং নামাজের পার্থক্য হলোঃ দোয়া হল আমন্ত্রণ বা মিনতি, যা ঐচ্ছিক, তাই তা শিথিল এবং তা যে কোন ভাষায় করা যায়, আর নামাজ হলো প্রার্থনা, যা বাধ্যতামূলক ও তার নীতিমালা কঠোর, এছাড়া জামাতে ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে মুসলিমদের সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত রাখারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে, একারণে নামাজ শুধু আরবিতে পড়তে হয়।
  9. আরবি নামাজ বুঝতে শেখা কঠিন কিছু নয় এবং তা সহজ।

পরিশেষে তিনি বলেন, "এইভাবে আমরা দেখতে পাই যে, নামাজের মাধুর্য, মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতা মূল আরবীতে নামাজ পড়ার উপর নির্ভর করে; এবং যদি অনুবাদে নামাজ পড়া হয়, তবে কুরআনের সাহিত্যিক এবং শৈল্পিক মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে বাধ্য; এবং অনূদিত নামাজের ফলে সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব।"[১]

সুন্নি হানাফি নিয়মসম্পাদনা

প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামাজ শুরু করতে হয়। তারপর সানা পড়তে হয়। সানা কেবল প্রথম রাকাতে পাঠ করতে হয়। প্রতি রাকাতে প্রথমে সুরা ফাতিহা ও অপর একটি সুরা বা অংশ বিশেষ পাঠ করতে হয়।

 
পশতুন মুসলিমরা ঈদের নামাজে রুকু করছেন, কান্দাহার, আফগানিস্তান।

এরপর রুকু করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ছোটো একটা বিরতি দিয়ে সিজদা করতে হয়। সিজদা দুুইবার করতে হয়, আর দুটি সিজদার মাঝে ছোট্ট একটা বৈঠক করতে হয়। ঠিক একই ভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত সম্পূর্ণ করতে হয়।

দুই রাকআত নামাজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতের দুই সিজদা সম্পূর্ণ করার বসে যথাক্রমে "আত্তাহিয়াতু (তাশাহুদ)" ও "দরূদ শরীফ" ও "দোয়া মাসুরা" পড়তে হয়। অতঃপর প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।

তিন বা চার রাকাতের নামাজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে তাশাহুদ ("আত্তাহিয়াতু") দোয়া পড়তে হয় এবং পাঠ শেষে দাঁড়িয়ে উঠে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত পড়তে হয়। শেষ রাকাতের দুই সিজদা সম্পূর্ণ করার বসে যথাক্রমে "আত্তাহিয়াতু (তাশাহুদ)" ও "দরূদ শরীফ"ও "দোয়া মাসুরা" পড়তে হয়। অতঃপর প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।[২]

পার্থক্যসম্পাদনা

নামাজের নিয়মে শিয়া ও সুন্নি পার্থক্য রয়েছে। আবার সুন্নিদের মধ্যে মাযহাবগত নামাজের পার্থক্য আছে, পাশাপাশি আহলুল হাদীস ও সালাফী সম্প্রদায় নামাজের নিয়মের ক্ষেত্রে সরাসরি কোরআন ও সহীহ হাদীসকে তথা সালাফকে সরাসরি অনুসরণ করে অন্যান্য সকল ব্যক্তির সাংঘর্ষিক মতামতকে বর্জন করার দাবি করে থাকে।

আহলে হাদীস/সালাফি পার্থক্যসম্পাদনা

  • নামাজের নিয়মে মাজহাব বা ঈমাম বা আলেমের যাচাইবিহীন অনুসরণ (তাকলিদ) না করে সহীহ হাদীস অনুসরণ করা
  • নামাজের নিয়তে নির্দিষ্ট কোন দোয়া না পড়া
  • নামাজে নাভির উপরে/বুকের উপর হাত বাধা
  • সশব্দে আমীন বলা
  • রুকুর আগে ও পরে এবং সিজদার আগে তাকবীরে হাত তোলা
  • সিজদায় যাওয়ার সময় পায়ের আগে হাত রাখা
  • সেজদা থেকে উঠে দাড়ানোর সময় হাতে ভর করে ওঠা
  • তাশাহুদে তর্জনী আঙ্গুল ক্রমাগত নাড়ানো
  • সিজদা সাহু নামাজ শেষে সালাম ফেরানোর পর করা
  • তিন রাকাত বিতরে দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠকে না বসা
  • বিতরের নামাজে প্রচলিত হানাফি দোয়ায় কুনুতকে কুনুতে নাজেলা বা বিপদকালীন কুনুত দাবি করে তা বিপদ ছাড়া নিয়মিত না পড়া এবং সিহাহ সিত্তাহসহ সুন্নি হাদীসে বর্নিত অন্যান্য কুনুত পড়া
  • বিতর নামাজকে ওয়াজিব বলার ক্ষেত্রে কোন কোন আহলে হাদীস আলেমের ভিন্নমত পোষণ করা
  • ফরজ নামাজ শেষে সম্মিলিত মুনাজাত না করা
  • জুম্মার নামাজের খুতবার পূর্বে বা মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথে সুন্নত পড়া ও তা চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত পড়া
  • মাগরিবের ফরজ নামাজের আগে মসজিদে প্রবেশের পর দুইরাকাত সুন্নত নামাজ পড়া বা পড়তে উৎসাহিত করা
  • অনারব দেশসমূহে জুম্মার নামাজে জনগণের বোধগম্য ভাষায় শুধুমাত্র একটি খুতবা দেওয়া, আলাদাভাবে আরবিতে খুতবা না দেওয়া

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. Sheriff, Ahmed H. (১ জানুয়ারি ১৯৯১)। Why Pray in Arabic? (ইংরেজি ভাষায়)। Bilal Muslim Mission of Tanzania। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০২২ 
  2. Qadiri Razavi, Muhammad Ilyas Attar (২০০৯)। Laws of Salah (পিডিএফ)। Karachi, Pakistan: MAKTABA-TUL-MADINA। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০২২ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা