নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া

ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি

নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়াম গণের অধীনস্থ একটি প্রজাতি (স্ট্রেইন); যা নাইলন ৬ উৎপাদনের সময় উৎপন্ন সুনির্দিষ্ট উপজাত দ্রব্য; খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়াম এর এই প্রকরণের নামকরণ করা হয়েছিল এসপি.কেওয়ান ৭২ নামে। পরবর্তীতে এই প্রকরণ নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া নামেই প্রখ্যাত হয়। যে উৎসেচক (এনজাইম) মানুষের তৈরী অণু গ্রহণ করতে সক্ষম[১] তার নামকরণ করা হয় নাইলোনেজ

নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস সম্পাদনা করুন
অপরিচিত শ্রেণী (ঠিক করুন): Bacteroidetes
শ্রেণি: Flavobacteriia
বর্গ: Flavobacteriales
পরিবার: Flavobacteriaceae
গণ: Flavobacterium
প্রজাতি: F. s. K172
দ্বিপদী নাম
Flavobacterium sp. K172

আবিষ্কার সম্পাদনা

 
৬-এমাইনোহেক্সানয়িক এসিডের রাসায়নিক গঠন

১৯৭৫ সালে জাপানী বিজ্ঞানীদের একটি দল নাইলন কারখানা সংলগ্ন একটি জলাশয়ে ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামের একটি স্ট্রেইন বা প্রজাতি আবিষ্কার করেন। পুকুরটি কারখানার বর্জ্য পদার্থ দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। এই প্রজাতিটি নাইলন ৬ উৎপাদনের সময় তৈরী হওয়া উপজাত দ্রব্য; খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এই উপজাত দ্রব্যটি হচ্ছে সিক্স এমাইনো ক্যাপ্রয়েট নামক যৌগের ডাইমার। যা কৃত্রিমভাবে পর পর যুক্ত হয় নাইলন নামক বড় সিনথেটিক পলিমারের চেইন তৈরী করে। ১৯৩৫ সালে নাইলন আবিষ্কারের পূর্বে এই সিক্স এমাইনো ক্যাপ্রয়েট নামক যৌগের অস্তিত্ব ছিল না।

পরবর্তী গবেষণা[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই ব্যাকটেরিয়া যে তিনটি উৎসেচককে ব্যবহার করে উপর্যুক্ত ডাইমারকে ভাঙার মাধ্যমে নাইলনের উপজাতকে পরিপাক করে; সেই তিনটি উৎসেচক ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামের অন্য যে কোনো প্রজাতির উৎপাদিত উৎসেচক হতে ভিন্ন। এই উৎসেচক মানুষের তৈরী নাইলনের উপজাত ছাড়া অন্য কোনো উপাদানের প্রতি ক্রিয়া করে না।[২]

পরবর্তী গবেষণা সম্পাদনা

এই আবিষ্কারের পর জিন প্রকৌশলী সুসুমু অহনো এপ্রিল ১৯৮৪ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি অনুমান করেন ৬- এমাইনোহেক্সানয়িক এসিড হাইড্রোলিস নামক উৎসেচকের জিন ফ্রেমশিফট পরিব্যক্তির সাহায্যে জিন ডুপ্লিকেশনের দ্বারা তৈরী হয়েছে।[৩] অহনো তার প্রস্তাবনায় বলেন বেশিরভাগ স্বতন্ত্র জিন এইভাবেই বিবর্তিত হয়েছে।

জাপানের হিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সেইজি নিগোরো ২০০৭ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যেখানে বলা হয় ফ্রেমশিফট মিউটেশন এর কারণে ৬- এমাইনোহেক্সানয়িক এসিড হাইড্রোলিস এর বিবর্তন সংগঠিত হয় নি।[৪] যাইহোক, এমন অনেক জিন আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ফ্রেম শিফট মিউটেশনের মাধ্যমে জিন ডুপ্লিকেশনের দ্বারা বিবর্তিত হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৯৫ তে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানাগারে, সুডোমোনাস এরুগিনোসা ব্যাকটেরিয়ামকে এমনভাবে বিবর্তিত করতে সক্ষম হন; যার ফলে একই নাইলন উপজাতকে ভাঙা যায়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে বিজ্ঞানীরা এমন এক পরিবেশে রাখেন, যেখানে কোনো জৈব উপাদান ছিল না। এই সুডোমোনাস এরুগিনোসা এর স্ট্রেইন ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামের স্ট্রেইনের মত একই উৎসেচক ব্যবহার করে নাইলন উপজাতের ডাইমারকে ভাঙনের মাধ্যমে পরিপাক করে নি।[৫]

১৯৮৩ সালের গবেষণা প্রতিবেদনের বর্ণনা অনুসারে অন্যান্য গবেষকরা ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়াম স্ট্রেইনের প্লাজমিডকে ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেইনে স্থানান্তরের পর একই উৎসেচক তৈরী করতে সক্ষম হন।[৬]

বিবর্তন শিক্ষায় ভুমিকা সম্পাদনা

সর্বজন স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক মত হলো ব্যাকটেরিয়ার নাইলোনেজ সৃষ্টির সক্ষমতা অর্জনের পূর্বে একটি সাধারণ পরিব্যক্তি বা মিউটেশন ঘটেছিল। এই মিউটেশনের ফলে ব্যাকটেরিয়ার টিকে থাকার জন্য বাড়তি সুবিধা সৃষ্টি হয়। মিউটেশনের মাধ্যমে তৈরী হওয়া এই উৎসেচক সৃষ্টিতে যে নতুন জিন কাজ করেছে; তার দুর্বল হলেও প্রভাবকের সক্ষমতা আছে। এটা একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ যা থেকে বুঝা যায় কীভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ায় প্রজাতিতে নতুন তথ্য যুক্ত হয় ও তার পরিবর্তন ঘটে।[৭][৮][৯][১০]

আরো দেখুন সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. Michael Le Page (মার্চ ২০০৯)। "Five classic examples of gene evolution"New Scientist 
  2. Kinoshita, S.; Kageyama, S.; Iba, K.; Yamada, Y.; Okada, H. (১৯৭৫)। "Utilization of a cyclic dimer and linear oligomers of e-aminocaproic acid by Achromobacter guttatus"। Agricultural and Biological Chemistry39 (6): 1219–23। আইএসএসএন 0002-1369ডিওআই:10.1271/bbb1961.39.1219 
  3. Ohno S (এপ্রিল ১৯৮৪)। "Birth of a unique enzyme from an alternative reading frame of the preexisted, internally repetitious coding sequence"Proc Natl Acad Sci USA81 (8): 2421–5। ডিওআই:10.1073/pnas.81.8.2421পিএমআইডি 6585807পিএমসি 345072 বিবকোড:1984PNAS...81.2421O 
  4. Negoro S, Ohki T, Shibata N, ও অন্যান্য (জুন ২০০৭)। "Nylon-oligomer degrading enzyme/substrate complex: catalytic mechanism of 6-aminohexanoate-dimer hydrolase"। J. Mol. Biol.370 (1): 142–56। ডিওআই:10.1016/j.jmb.2007.04.043পিএমআইডি 17512009 
  5. Prijambada ID, Negoro S, Yomo T, Urabe I (মে ১৯৯৫)। "Emergence of nylon oligomer degradation enzymes in Pseudomonas aeruginosa PAO through experimental evolution"Appl. Environ. Microbiol.61 (5): 2020–2। পিএমআইডি 7646041পিএমসি 167468  [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Negoro S, Taniguchi T, Kanaoka M, Kimura H, Okada H (জুলাই ১৯৮৩)। "Plasmid-determined enzymatic degradation of nylon oligomers"J. Bacteriol.155 (1): 22–31। পিএমআইডি 6305910পিএমসি 217646  
  7. Thwaites WM (Summer ১৯৮৫)। "New Proteins Without God's Help"Creation Evolution Journal5 (2): 1–3। 
  8. Evolution and Information: The Nylon Bug
  9. Why scientists dismiss 'intelligent design', Ker Than, MSNBC, Sept. 23, 2005
  10. Miller, Kenneth R. Only a Theory: Evolution and the Battle for America's Soul (2008) pp. 80-82

তথ্যসূত্র সম্পাদনা