নগর (দেশীয় রাজ্য)

(নগর রাজ্য থেকে পুনর্নির্দেশিত)

নগর (উর্দু: ریاست نگر‎‎, রিয়াসাত নগর) পাকিস্তানের গিলগিত-বাল্টিস্তানের উত্তর অংশের একটি দেশীয় স্যালুট রাজ্য ছিল। ১৯৪৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত এটি ব্রিটিশ ভারতের সাথে একটি সহায়ক জোটে ছিল। এটি দক্ষিণ ও পশ্চিমে গিলগিট এজেন্সি রাজ্য এবং উত্তর ও পূর্বে জেলা হুঞ্জার রাজ্যগুলোর সীমানা বেষ্টিত। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এটি পাকিস্তানের একটি রাজ্য ছিল। রাজ্যের রাজধানী ছিল "নগর" শহর। পূর্বে নগর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকা অঞ্চলটি বর্তমানে উত্তর পাকিস্তানের নগর জেলার তিনটি তেহসিলে বিভক্ত।

নগর, পাকিস্তান
ریاست نگر
পাকিস্তানের দেশীয় রাজ্য
চতুর্দশ শতক–২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪

পাকিস্তানের মানচিত্রে "নগর রাজ্য"।
রাজধানীনগর, পাকিস্তান
আয়তন 
• 
৫,০০০ বর্গকিলোমিটার (১,৯০০ বর্গমাইল)
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠিত
চতুর্দশ শতক
• বিলুপ্ত
২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪
বর্তমানে যার অংশগিলগিট-বালতিস্তান, পাকিস্তান

ইতিহাস সম্পাদনা

চৌদ্দ শতকে প্রতিষ্ঠিত নগর রাজ্য ১৮৮৯ সাল থেকে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের পরিচালিত হুঞ্জা-নগর অভিযানের মাধ্যমে ব্রিটিশরা রাজ্যটির নিয়ন্ত্রণ না পাওয়া পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসিত রাজত্ব ছিল। এটি ১৯৪৭ সাল অবধি গিলগিট এজেন্সির প্রশাসনের অধীনে একটি ঔপনিবেশিক দেশীয় রাজ্য ছিল।[১] তবে ১৮৬৮ সাল থেকে এটি কাশ্মীরের দ্বারা সরাসরি শাসিত না হওয়া সত্ত্বেও এটি জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজার একটি ভাসাল ছিল। নগরের শাসকগণকে জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজদের সবচেয়ে অনুগত ভাসলদের মধ্যে একজন বিবেচনা করা হত। নগরের শাসকগণ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তাদের দরবারে বার্ষিক কর প্রদান করতো। ব্রিটিশরা তাদেরকে ১৫-বন্দুকের বংশগত সালাম দিত।

১৯৪৭ সালের নভেম্বরে, নগর পাকিস্তান অধিরাজ্যে যোগদান করে। এর ফলে নগর রাজ্যের বাহ্যিক বিষয় এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক সব ক্ষমতা পাকিস্তানের হাতে চলে যায়। কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ বিষয় নগর রাজ্যের স্ব-সরকার পরিচালনা করতো। ১৯৬৮ সালে উপত্যকার প্রথম শিক্ষিত রাজনীতিবিদ সৈয়দ ইয়াহিয়া শাহ নগরের মীরের কাছ থেকে নাগরিক অধিকার দাবি করেন। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার (জুলফিকার আলী ভুট্টোর অধীনে) নগরের মীরকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য করে। ফলে অঞ্চলটি উত্তর অঞ্চলগুলোর সাথে একীভূত হয়ে যায়।[২]

 
The Hunza valley looking across the river to Nagar
 
রাকাপোশি পর্বত

শাসক সম্পাদনা

এই রাজ্যটি মাগলুত রাজবংশের বংশগত শাসক দ্বারা শাসিত ছিল। নগরের শাসকদের উপাধি ছিল মীর। এর প্রাথমিক শাসকদের বিবরণ অনিশ্চিত; উপলভ্য প্রথম সুনির্দিষ্ট তারিখগুলি ১৮৩৯ সাল থেকে। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে, রাজ্যটি পাকিস্তানের অন্যতম দেশীয় রাজ্য হয়ে ওঠে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো কর্তৃক বিলুপ্ত হওয়ার আগে ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত আলী খান রাষ্ট্রের সর্বশেষ শাসক ছিলেন।

রাজত্বকাল মীর[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
c.১৬৬০ ফাদল খান
c.১৬৬০ দাউদ খান
~ ১৭৫০ আলী দাদ খান (প্রথমবার)
অজানা তারিখ হরি থাম খান
~ ১৭৬১ আলী দাদ খান (দ্বিতীয়বার)
অজানা তারিখ কমল খান
c.১৭৮০ - ১৮ .. রহিম খান ১ম
১৮ .. - মৃত্যু ১৮৩৯ রহিম খান দ্বিতীয়
১৮৩৯? ৪৫–১৮৯১ জাফর জাহিদ খান (প্রথমবার)
১৮৯১ - ১৮৯২ "রিজেন্সি": রাজা ওজোর খান (মৃত্যু ১৯২২)
১৮৯২ - মৃত্যু ১৯০৩ জাফর জাহিদ খান (দ্বিতীয়বার)
জুন ১৯০৫ - মৃত্যু ১৭ মার্চ ১৯৩০ রাজা মীর ইস্কান্দার খান (১ জানুয়ারী ১৯২৩, স্যার ইস্কান্দার খান)
১৭ মার্চ ১৯৩০ - ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ শওকত আলী খান (জন্ম ১৯০৯, মৃত্যু ২০০৩)
২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ নগর রাজ্য পাকিস্তানে বিলীন
১৯৭৩ সালে নগর রাজ্য বিলোপের পরে গিলগিত-বালতিস্তান আইন পরিষদে নগরীর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা
১৯৭৫ সৈয়দ ইয়াহিয়া শাহ
১৯৮০ মীর শওকত আলী খান
১৯৮৫ কুরবান আলী
১৯৯৭ (১) মীর শওকত আলী খান (২) শেখ গোলাম হায়দার
২০০০ (১) কুরবান আলী (২) শেখ গোলাম হায়দার
২০০৫ (১) মির্জা হুসেন (২) মুহাম্মদ আলী আক্তার
২০০৯ (১) মির্জা হুসেন (২) মুহাম্মদ আলী আক্তার
২০১৫ (১) রিজওয়ান আলী (২) মুহাম্মদ আলী হায়দার
২০১৭ জাভেদ হুসেন (জিবিএলএল ৩ জুলাই ২০১৭ এর উপ-নির্বাচন)[৩]

জনসংখ্যা সম্পাদনা

জনউপাত্ত সম্পাদনা

নগর উপত্যকায় প্রায় ৯০,০০০ বাসিন্দা রয়েছে (একেআরএসপি আদমশুমারি, ২০০০)।

নগরে দুটি প্রধান নৃগোষ্ঠী রয়েছে - বুরুশস্কি-ভাষী এবং শিনা-ভাষী। একটি প্রাচীনতম বুরুশস্কি এখনও একটি হালকা আধুনিক উচ্চারণ সহ উপত্যকায় কথিত। তৃতীয় ভাষা বেদেস্কি এখনও চাল্ট নগরে কথ্য।

ধর্ম সম্পাদনা

নগরের জনসংখ্যার ঐতিহ্যগতভাবে শিয়া ইসনা আশারিয়া (জাফরিয়া বা বারো ইমাম পন্থী)। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পরে, তানজিম আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত সুন্নিদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং শিয়াদের (জাফরিয়া) প্রতিনিধিত্বকারী কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান-ই-ইমামিয়া এলাকায় শান্তি নিশ্চিত করতে ২০০৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরাঞ্চল আইন পরিষদ (এনএলসি) দ্বারা সজ্জিত ছয় দফা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ভূগোল সম্পাদনা

নগরের গ্রাম সম্পাদনা

নগরের শিনা-ভাষী (শিনাকি / শীনবার) গ্রাম গুলোর তালিকা:

  • চালাত (পইন / বালা)
  • বার ভ্যালি
  • চাপ্রোট ভ্যালি
  • বুদালাস উপত্যকা
  • জাফরাবাদ উপত্যকা
  • নিল্ট ভ্যালি
  • থল ভ্যালি
  • কাসিমাবাদ ভ্যালি (মাসুত)
  • গুলমেট ভ্যালি
  • ইয়াল ভ্যালি
  • পিসান ভ্যালি
  • মিনাপিন ভ্যালি

নগরের বুরুশস্কি-ভাষী গ্রাম সমূহ:

  • নগর খাস উপত্যকা
  • সিকান্দার আবাদ
  • মিয়াচর উপত্যকা
  • দাদিমাল ভ্যালি
  • ফক্কার ভ্যালি
  • হাকুচর ভ্যালি
  • শায়ার ভ্যালি
  • আসকুরদাস ভ্যালি
  • সুমায়র উপত্যকা
  • হোপার ভ্যালি
  • নগর খাস (নগর ১)
  • হিপার ভ্যালি

নগরে দ্বিভাষিক উপত্যকার তালিকা:

  • চলত পাইনে উপত্যকা
  • আকবরবাদ উপত্যকা
  • জাফরাবাদ উপত্যকা
  • কাসিমাবাদ ভ্যালি (মাসুত)
  • গুলমেট ভ্যালি
  • পিসান ভ্যালি
  • মিনাপিন ভ্যালি

নগর রাজ্যের গ্রামগুলোতে প্রধানত ধর্মীয় পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদ, কারিগর এবং কারিগর মহিলা, কৃষক, শিকারী এবং জেলে, হস্তশিল্পি, খনিজক, রাখাল, দুঃসাহসিক কাজকারী, পর্বতারোহীরা বাস করে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Hunza and Nagar"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ13 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 957। 
  2. Muhammad Ismail Tehseen, Buroshall Say Nagar Tak ka Safar, Syed Yahya Shah, Brushal ke Qabail, both in Urdu, available in Municipal library at Gilgit
  3. http://pamirtimes.net/2017/07/09/ppps-javed-hussain-claims-victory-in-nagar-by-elections/

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • Mohammad Ismail Nashad, Buroshall say Nagar Tek Ka Safar
  • Syed Mohammad Yahya Shah, Rasala Buroshall
  • E. F. Knight, Zafar Hayat Paul, Where the Three Empires Meet

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা