ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মন

ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মন (৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩ – ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় চিত্রশিল্পী।[১]

ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মন
জন্ম(১৯০৩-০২-০৭)৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩
মৃত্যু৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫(1995-09-09) (বয়স ৯২)
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাশান্তিনিকেতন
পরিচিতির কারণচিত্রাঙ্কন
পুরস্কারআকাদেমি পুরস্কার
অবনীন্দ্র-গগনেন্দ্র পুরস্কার

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মনের জন্ম ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায়। পিতা ব্রজকৃষ্ণ দেববর্মন ছিলেন তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের সম্মানিত উজির। মাতা স্বর্ণলতা দেবী। আট বৎসর বয়সে তিনি ব্রহ্মচর্য্য আশ্রমের ছাত্র হিসাবে শান্তিনিকেতনে আসেন। সন্তোষকুমার মিত্র এবং অসিতকুমার হালদারের কাছে তার চিত্রবিদ্যায় হাতেখড়ি হয়। এরপর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলাভবন প্রতিষ্ঠিত হলে শিল্পাচার্য নন্দলালবসুর তত্ত্বাবধানে চিত্রবিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করেন। ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ ছিলেন শিল্পাচার্যের প্রথম ছাত্র দলের (১৯২১-২৮) অন্যতম। তিনি ত্রিপুরার তৎকালীন শেষ মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের আর্থিক সহায়তায় ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মালয়, জাভা ও বলিদ্বীপে কবিগুরুর সফরসঙ্গী হয়ে ছিলেন। [২] ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভারত সরকারের বৃত্তি লাভ করে লন্ডনে যান ইন্ডিয়া হাউসের ভিত্তিচিত্র অঙ্কনের কাজে। সেখানে তিনি লন্ডন রয়াল কলেজ অফ আর্ট-এর শিল্পী স্যার উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের কাছে ড্রইং ও মুরালে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

দেশে ফিরে ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কলাভবনে যোগ দেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কলাভবনের অধ্যক্ষ হয়ে দীর্ঘদিন সেই পদে ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনেস্কোর আমন্ত্রণে শিল্পসম্বন্ধীয় আলোচনার জন্য জাপানে যান। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে চীন সরকারের অতিথি হয়ে সে দেশে যান। সেখানকার শিল্প নিদর্শন সমূহের সঙ্গে পরিচিত হন এবং চীনের প্রসিদ্ধ তিয়ান হুয়ান গুহার চিত্রলিপির প্রতিলিপি করে দেশে ফেরেন।

দেশে বিদেশে তার চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয়ছে। প্রথম প্রদর্শনী হয় বোম্বাইয়ে। তিনি চিত্রকর্ম নিয়ে গেছেন জার্মানী, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা, মিশর, মেক্সিকো-সহ লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আয়োজিত প্রদর্শনীতে। তার আঁকা বেশ বড় আকারের প্রাচীরচিত্র লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউসে, শিলংয়ের ক্যাসেল ও দেশের বহু স্থানে শোভা পায়। ১৯৪৯-৫০ খ্রিস্টাব্দে নন্দলাল বসুর নেতুত্বে ভারতের সংবিধানের মূল পান্ডুলিপি অলংকরণের কাজেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলাভবনের অধ্যক্ষ পদ হতে অবসর নেন। কিন্তু অবসরের পর তিনি শান্তিনিকেতনেই থেকে যান এবং অবসর সময় এসরাজ বাজাতেন।

সম্মাননা সম্পাদনা

পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্পকর্মের জন্য আকাদেমি পুরস্কার, অবনীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট. উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তাকে অবনীন্দ্র-গগনেন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত করে।

জীবনাবসান ও উত্তরাধিকার সম্পাদনা

ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মন ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন। ত্রিপুরা সরকার ভাস্কর্য, চিত্রকলা, ফাইন আর্টস এবং গ্রামীণ চিত্রকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার প্রবর্তন করে। [৩]


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ১৭৭, ১৭৮ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "Telegram reveals poet's eye for talent (ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১২ 
  3. "মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর স্মৃতি পুরস্কার পেলেন..."। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১২